জলবায়ু চুক্তি অনুমোদন

হাংঝুতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে শনিবার
করমর্দন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা -এএফপি
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে প্যারিস চুক্তি অনুমোদন করেছে বিশ্বের সর্বোচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী দুই দেশ চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার চীনের হাংঝু শহরে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এক যৌথ ঘোষণায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। বারাক ওবামা বলেন, ‘ধরিত্রী রক্ষায় অবশেষে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ খবর এএফপির। প্যারিস চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে এবং এক্ষেত্রে সম্ভব হলে প্রাক-শিল্পায়নের পর্যায়ের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রিতে আনার কথা বলা হয়। জি-২০ সম্মেলনের আগ মুহূর্তে চীনের শীর্ষ আইন পরিষদ প্যারিস জলবায়ু চুক্তিটির পক্ষে অনুমোদন দেয়। আর সম্মেলনে এ বিষয়ে যৌথ ঘোষণা দেন ওবামা ও জিনপিং। এরপর চুক্তির অনুমোদন-সংক্রান্ত নথি জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের হাতে তুলে দেন দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। এসময় বান কি মুন আশা করেন, চলতি বছরের মধ্যেই চুক্তিটি বাস্তবায়ন করা যাবে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জলবায়ু দূষণকারী দেশ চীন এককভাবে প্রায় ২৫ শতাংশ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী।
এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দ্বিতীয়। তারা প্রায় ১৫ শতাংশ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ করে থাকে। এর ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে তাদের প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুমোদন চীনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এই চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি বিরাট পদক্ষেপ। চীনের সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, জাতীয় গণকংগ্রেস আইনসভা প্যারিস চুক্তি পর্যালোচনা ও অনুমোদনের ব্যাপারে প্রস্তাব গ্রহণের পক্ষে ভোট দিয়েছে। বিশ্বের কমপক্ষে ৫৫টি দেশ অনুমোদন দেয়ার ৩০ দিন পর প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন হবে। আর এ দেশগুলো ৫৫ শতাংশ বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী। বিশ্বের ১৭৫টি দেশ এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও শনিবার পর্যন্ত মাত্র ২৩টি দেশ এটির অনুমোদন দিয়েছে। ফ্রান্স ও বিভিন্ন দ্বীপ রাষ্ট্র এগুলোর মধ্যে রয়েছে। আর এসব দেশ সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এ ঘোষণা দিয়ে তা বাস্তবায়ন করার পর কার্বন নিঃসরণ ৪০ শতাংশ কমে আসবে। চীনের আগে যেসব দেশ কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছে, তাতে মোট কার্বন নিঃসরণ কমেছে ১ শতাংশ। কারণ শিল্পে অনুন্নত এসব দেশ কার্বন নিঃসরণ করে খুবই সামান্য।
গেল বছরের ডিসেম্বরে ঐতিহাসিক চুক্তি অনুযায়ী, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির গড় হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিুে রাখতে দেশগুলো কার্বন নির্গমন কমানোয় একমত হয়। প্যারিস চুক্তি হল- বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্রথম সমন্বিত চুক্তি। তবে এটি তখনই কার্যকর হবে যখন মোট কার্বন নির্গমনের ৫৫ শতাংশের জন্য দায়ী দেশগুলো চুক্তিকে সমর্থন এ চুক্তিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবেলায় উচ্চাকাক্সক্ষামূলক লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশগুলোকে কোটি কোটি ডলার সহযোগিতা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। চীনের হাংঝু এখন ভুতুড়ে নগরী বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলোর বার্ষিক ‘জি-২০’ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নিরব হয়ে গেছে চীনের ব্যস্ততম হাংঝু নগরী। এএফপি জানায়, ৯০ লাখ মানুষের কোলাহলমুখর শহরটি যেন রাতারাতি স্তব্ধ হয়ে গেছে। বিশ্বের ধনী দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এখানে নজিরবিহীন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুসারে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে শহরের সব মার্কেট, রাস্তার দোকানপাট, ব্যক্তিগত যানবাহন এবং নাগরিকদের অবাধ চলাফেরা।

No comments

Powered by Blogger.