‘নিকৃষ্ট’ জায়গা এখন জনপ্রিয় গন্তব্য

শার্লহুয়া শহরের এক হতশ্রী ভবন
বেলজিয়ামের শার্লহুয়া। ২০০৯ সাল থেকে পর্যটনের বিচারে ইউরোপের নিকৃষ্টতম বলে বিবেচিত হয়ে আসা শহর। অথচ আজ এটি অনেক ভ্রমণপিয়াসীর কাছে এক জনপ্রিয় গন্তব্য। পর্যটন মানচিত্রে ‘অচ্ছুত’ এমন অনেক ইউরোপীয় জায়গাই দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এত দিন পর্যটকেরা হয়তো ওই সব স্থানকে তাঁদের ভ্রমণ তালিকায় নিচের দিকেও রাখতেন না। বেলজিয়ামের শার্লহুয়া শহরের নাম উচ্চারিত হলেই ওয়াকিবহাল লোকের মনের চোখে ভেসে উঠবে বেকারত্ব আর অপরাধের থাবায় ক্ষতবিক্ষত এক জনপদের ছবি। কিছুদিন আগেও এনোউ প্রদেশের ওয়ালোনিয়ায় অবস্থিত এ শহরের যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকত রাশি রাশি ধাতব বর্জ্য। দেয়ালগুলোয় আঁকা কুৎসিত ছবি আর শিল্পবর্জ্যের দৌরাত্ম্যের কারণে এই শহর ছিল পর্যটকদের কাছে খুবই অপ্রিয় একটা জায়গা। কিন্তু সম্প্রতি উধাও হয়েছে সেই বর্জ্য। পর্যটক টানতে স্থানীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উদ্যোগ ফল দিতে শুরু করেছে।
ক্রমেই সেখানে বাড়ছে ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা। জার্মানির ভ্রমণ গাইডরা ইদানীং জোর দিচ্ছেন বার্লিনের টেমপেলহফের শুয়েরবেলাসটুনসকরপারকে। বার্লিনের ঐতিহ্যবাহী পর্যটন আকর্ষণকারী স্থান টিয়ারগার্টেন ও ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে টেমপেলহফের শুয়েরবেলাসটুনসকরপার। এটি আসলে একটি প্রকাণ্ড সিলিন্ডার। ১৯৪১-৪২ সালে এটি নির্মাণ করেন হিটলারের প্রধান স্থপতি আলবার্ট স্পির! একই অবস্থা বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের মলেনবিক এলাকার। ইউরোপে জঙ্গিবাদের অন্যতম ঘাঁটি বলে মনে করা হয় এ এলাকাকে। ভয়াবহ প্যারিস হামলার ঘটনায় জড়িত অন্তত দুই সন্দেহভাজনের বাস ছিল দরিদ্র মানুষজন-অধ্যুষিত মলেনবিকে। ওই হামলায় জড়িত বলে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের মধ্যে একমাত্র জীবিত সালাহ আবদেসলাম এখান থেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। বেলজিয়ামের পর্যটন নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের কর্মী আন ব্রুমাগন বলেন, অনেকের কাছেই মলেনবিক ‘আস্ত নরক’। তবে এখানে এলে লোকে বুঝতে পারে, এলাকাটা কত প্রাণবন্ত। ব্রুমাগন জানান,
গত এপ্রিলেই মলিনবেকে বড় ধরনের একটি আধুনিক আর্ট গ্যালারি খোলা হয়েছে। ব্রাসেলসে সন্ত্রাসী হামলা না হলে আরও আগেই হয়তো উদ্বোধন করা হতো এটি। এ ছাড়া নেওয়া হয়েছে নতুন কমিউনিটি সেন্টার, বাগান-পার্ক ও সামাজিক বিভিন্ন প্রকল্প। স্থানীয় মেয়রের উদ্যোগ এই এলাকার উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা থেকে এর সুফলের প্রমাণও মিলছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগে অপ্রিয় ছিল ইউরোপের এমন জায়গাগুলোর প্রতি দেরিতে হলেও নতুন কিছু কারণে মানুষের আকর্ষণ বাড়ছে। সন্ত্রাস এর একটি কারণ। রক্তক্ষয়ী জঙ্গি হামলার ভয়ে অনেকে এই মুহূর্তে প্রচলিত জনপ্রিয় স্থানগুলো থেকে দূরে থাকছেন। এ ছাড়া বেকারত্ব, সন্ত্রাস আর অপরাধ মোকাবিলায় স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ও জনপ্রতিনিধিদের নেওয়া উদ্যোগ বড় ভূমিকা পালন করছে এসব এলাকায় পর্যটন আকর্ষণে।

No comments

Powered by Blogger.