গৌরবের এই প্রতিদান!

এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের গ্রুপ পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশকে যারা গৌরবান্বিত করেছে, সেই কিশোরী ফুটবলারদের তার প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হলাম আমরা। দলের নয়জন খেলোয়াড় বাড়ি ফেরার পথে বাসের সহযাত্রীদের মৌখিক গঞ্জনার শিকার হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সন্তানোপম এসব মেয়েকে অপমানের মধ্য দিয়ে গণপরিবহনে নারীদের প্রতিকূলতার চিত্রই কর্কশভাবে ফুটে উঠল। আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অজপাড়াগাঁর এই মেয়েদের উঠে আসার গল্প রূপকথার মতোই। অতিদরিদ্র বাস্তবতায় গ্রামীণ পরিবেশ থেকে ওদের উঠে আসা একই সঙ্গে অধ্যবসায় ও কষ্টসহিষ্ণুতার গল্প। জীবনে অনেক কষ্টই ওদের অধিকাংশকে করতে হয়েছে। কিন্তু কষ্ট সয়েও তারা দেশের মুখকে উজ্জ্বল করেছে। একের পর এক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তারা বাংলাদেশের বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছে। হয়ে উঠেছে অসংখ্য ছেলেমেয়ে তথা দেশবাসীরই অনুপ্রেরণার প্রতীক। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও ওদের দৃষ্টান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
অথচ এত বড় বিজয়ের পরও তাদের বাড়ি পাঠানো হলো গন্ডগোলময় লোকাল বাসে! বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন যতই বলুক যে মেয়েরাই এভাবে ফিরতে চেয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। অভিভাবকহীন অবস্থায় ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত ধোবাউড়ার কলসিন্দুর গ্রামে তাদের লোকাল বাসে পাঠানো মোটেই সুবিবেচনার পরিচয় নয়। তাদের উচিত ছিল বাফুফের নিজস্ব অথবা ভাড়া করা গাড়িতে কর্তৃপক্ষের সরাসরি তত্ত্বাবধানে তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। তা না করায় সামান্য কারণে তাদের অপমানকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হলো। আমরা সব মানুষের জন্য, বিশেষত সব কিশোরী ও নারীর জন্যই নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক গণপরিবহন চাই। আমরা চাই গণপরিবহনে নারীদের হেনস্তা করার দুর্বৃত্তপনার অবসান হোক। এ কারণেই এসব কৃতী ফুটবলারের অপমানের মধ্যে সব নারীর অপমান লুকিয়ে আছে। এর মধ্যে উন্মোচিত হয়ে গেছে আমাদের কর্তৃপক্ষের কারও কারও দায়িত্বহীন মানসিকতার।

No comments

Powered by Blogger.