লাল-সবুজ সাফল্য

ম্যাচের শেষ বাঁশি বেজে গেছে তখন। উল্লাস আর উচ্ছ্বাসে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরছে কৃষ্ণা, মার্জিয়া, তহুরা, অনুচিংরা। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ টুর্নামেন্টের পর অনূর্ধ্ব-১৬তেও সাফল্য। সবাই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ঘাসে চুমু খেল। লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে ল্যাপ অব অনার দিল। ডিজে ব্রাভোর। ‘চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন’ গানটি বেজে উঠল। গানের তালে তালে নেচে ওঠে বাংলাদেশের কিশোরী ফুটবলাররা। অপরাজিত বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য প্রজন্মের সোনালি মেয়েরা। এ সাফল্য একদিনে আসেনি। পরিবার ও সমাজের নানা প্রতিবন্ধকতা সামলে এমন সাফল্য অর্জন করতে হয়েছে বাংলাদেশের কিশোরী ফুটবলারদের। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের কথায়, ‘একটা সময় আমি বাক্সপেটরা নিয়ে নওগাঁসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ছুটে গিয়েছিলাম। ফুটবলের প্রতি মেয়েদের আগ্রহ তৈরি করতে হয়েছে। সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে তাদের ঘর থেকে বের করে আনতে হয়েছে। এজন্য তারাও কৃতিত্বের দাবিদার।’ এখন ফুটবলই তাদের ধ্যান-জ্ঞান। অধিনায়ক কৃষ্ণার কথা, ‘দলের সবাই ফুটবল নিয়ে ভাবে।
পরিবারে টানাপোড়েন থাকলেও ফুটবল নিয়েই আমরা চিন্তা করি। খেলাটা উপভোগ করি।’ তাদের পারফরম্যান্সের প্রশংসায় পঞ্চমুখ যখন সারা দেশ, তখন মেয়েদের অধিনায়ক নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না যে, এমন সাফল্য। তাদের সহযাত্রী হয়েছে। আমিরাত ম্যাচের পর তার কথা, ‘আমরা নিজেদের এভাবে উঁচুতে নিয়ে যেতে পারব, ভাবতে পারিনি।’ কৃষ্ণা যোগ করে, ‘আমাদের মধ্যে তাগিদ ছিল নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের। আমরা অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবলে নেপাল ও তাজিকিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলার পর যেভাবে অনুশীলন করেছি তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এই সাফল্য।’ দেশের ফুটবলে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের মেয়েদের অবদান কম নয়। এ বিষয়ে ছোটনের মন্তব্য, ‘আমার দুঃখ লাগে, যখন শুধু কলসিন্দুরের মেয়েদেরকেই বাহবা দেয়া হয়। মাঠে খেলে ১৮ জন। তারা সবাই কিন্তু কলসিন্দুরের নয়। বাহবা দিলে দলের সবাইকে দিতে হবে। শুধু একটি গ্রামের মেয়েদের নয়। টিম বাংলাদেশ মানে দলের সবাইকে বোঝায়। তাই কৃতিত্বটা পাওয়ার যোগ্য সবাই।’ দেশের একটি ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠান চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় কৃষ্ণাদের পাঁচ লাখ টাকা বোনাস দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.