কোনো সমঝোতা হলো না

চীনের হাংচৌয়ে জি-২০ সম্মেলন চলাকালে গতকাল সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সিরিয়া নিয়ে ‘গঠনমূলক’ আলোচনা করেন। বৈঠক চলে দেড় ঘণ্টা ধরে। নির্ধারিত সময়ের চেয়েও বেশি সময় ধরে এ বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুই দেশের কর্মকর্তারা। তবে বৈঠকে সিরীয় সংকট নিয়ে দুই নেতা কোনো সমঝোতায় পৌঁছাননি। বৈঠক শেষে ওবামা বলেন, সিরিয়ায় সহিংসতা কমানোর বিষয়ে পুতিনের সঙ্গে তাঁর ‘গঠনমূলক’ আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে সিরিয়ায় মানবিক সহায়তা দেওয়া, সহিংসতা কমানো এবং জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। এদিকে গতকালই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিরিয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয়নি। তবে ওবামা-পুতিন বৈঠকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ সপ্তাহে আবারও এ বিষয়ে বৈঠক করার নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানান কর্মকর্তারা। রাশিয়া বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মধ্যপ্রাচ্যের মিত্র দেশগুলোকে আসাদবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট করতে হবে। কেননা, অনেক ক্ষেত্রেই দুই গোষ্ঠী একে অপরের সঙ্গে মিলে থাকে।
এদিকে, গতকাল সিরিয়ায় সরকার-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় একের পর এক বিস্ফোরণে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে তারতুস, হোমস ও দামেস্কে তিনটি বিস্ফোরণ ঘটে এক ঘণ্টার মধ্যে। আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটে হাসাকা শহরে। শরণার্থী সংকট প্রশ্নে ঐকমত্য জি-২০ সম্মেলনে শরণার্থী সমস্যাকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়েছেন এ জোটভুক্ত নেতারা। তাঁরা বলেছেন, এই সমস্যার ভার সবাইকে সমানভাবে নিতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) এক কূটনীতিক এ কথা জানান গতকাল। ওই কূটনীতিক বলেন, সম্মেলনে সুনির্দিষ্টভাবে এ সমস্যার সমাধানে আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানানো হয়। শরণার্থী সমস্যা বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল প্রথম দিকে আপত্তি তুলেছিল। পরে তারাও সম্মত হয়। তবে এ সমস্যা নিরসনে আর্থিক বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে প্রতিশ্রুতিতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ওই কূটনীতিক বলেন, সব ক্ষেত্রেই প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তবায়নের মধ্যে একটি তফাত রয়েছে। সম্মেলনে গতকাল বৈশ্বিক অতি উৎপাদনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি ফোরাম গঠন করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ইইউয়ের এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ভর্তুকির মতো বিষয়গুলোর কারণে বাজারে সমস্যা সৃষ্টি হয়। এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতেই এই ফোরামটি কাজ করবে। বিশ্বের মোট ইস্পাত উৎপাদনের অর্ধেকটাই করে এবারের জি-২০ সম্মেলন আয়োজক দেশ চীন। চীন ইস্পাতশিল্পে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউভুক্ত দেশগুলোর বাজার নষ্ট করে দিয়েছে। দাম কমে যাওয়ায় ইস্পাতশিল্প মার খাচ্ছে। চীন নিজেও এই কম দামের জন্য সমস্যায় পড়েছে। দেশের অভ্যন্তরে অতি উৎপাদন রোধে আহ্বানও জানাচ্ছে চীন। বৈশ্বিক অতি উৎপাদন রোধে সম্মেলনে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হচ্ছে তাতে অবশ্য চীনের নাম থাকছে না। ওই কূটনীতিক বলেন, এই ফোরাম গঠনের বিষয়টি এবং এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ নিয়ে অর্ধেক সদস্যরাষ্ট্রই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে। এটি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। গতকালের সম্মেলনের শেষ দিনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা বাদ দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার জন্য জোটের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি সরবরাহের ক্ষেত্রে সংস্কারেরও প্রস্তাব দেন। শি জিনপিং বলেন, জোটের সদস্যরাষ্ট্রগুলো সংরক্ষণবাদের বিরোধিতা এবং বিশ্ববাণিজ্যের ক্রমাবনতি রোধের বিষয়ে মত দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.