শ্যামলী দিয়ে শুরু বাংলাদেশের অলিম্পিক

৫ আগস্ট ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনিরোতে বসবে অলিম্পিক গেমসের ৩১তম আসর। ১৯৮৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক গেমসে প্রথম অংশ নেন বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা। এবার নিজেদের নবম আসরে পাঁচটি ডিসিপ্লিনে লড়বেন বাংলাদেশের সাত ক্রীড়াবিদ। তারা হলেন সিদ্দিকুর রহমান (গলফ), মেজবাহ আহমেদ ও শিরিন আক্তার (অ্যাথলেটিকস), মাহফিজুর রহমান ও সোনিয়া আক্তার টুম্পা (সাঁতার), শ্যামলী রায় (আরচার) এবং আবদুল্লা হেল বাকি (শুটিং)। রিও অলিম্পিকে লাল-সবুজের সাত ক্রীড়াবিদের লড়াই কবে ও কোথায়, তা জেনে নেয়া যাক। ৫ আগস্ট গেমসের উদ্বোধনী দিনে মাঠে নামবেন বাংলাদেশের তীরন্দাজ শ্যামলী রায়। সাম্বাড্রাম স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় রিকার্ভ বো ইভেন্টের ব্যক্তিগত র‌্যাংকিং রাউন্ডে খেলবেন তিনি। সেই বাধা পেরোতে পারলে খেলবেন ১/৩২ এলিমিনেশন রাউন্ডে। ৬১৮ পয়েন্ট ছিল শ্যামলী রায়ের সেরা স্কোর। আর চার বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার কি কোবে ৬৭১ পয়েন্ট অর্জন করে জিতে নিয়েছিলেন স্বর্ণ। ৮ আগস্ট অলিম্পিক গেমসের তৃতীয় দিনে শুটিং রেঞ্জে দাঁড়াবেন বাংলাদেশের আবদুল্লা হেল বাকি। অলিম্পিক শুটিং রেঞ্জে পুরুষদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে খেলবেন গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে রুপাজয়ী এই শুটার।
বাংলাদেশ সময় বিকেল ছয়টায় তার ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। এই রাউন্ড পেরোতে পারলে তিনি খেলবেন ফাইনাল রাউন্ডে। বাকির ক্যারিয়ারসেরা স্কোর ৬২৭/৬২৮ পয়েন্ট। কিছুদিন আগে ব্রাজিলে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ৬২২.৮ স্কোর করে তিনি ৩০তম স্থান অর্জন করেছিলেন। বাকি যদি তার এ স্কোর অব্যাহত রাখতে পারেন, তাহলে তিনি হয়তো বাছাই রাউন্ড পেরিয়ে ফাইনাল রাউন্ডে পৌঁছতে পারবেন। তবে পদক জয় অনেক দূরে। কারণ গত অলিম্পিকে রুমানিয়ার অ্যালিন মোলদিভিয়ানু ৭০২.১ স্কোর করে জিতেছিলেন স্বর্ণ। আর র‌্যাংকিংয়ের অষ্টম স্থানে থাকা ড্যানিশ শুটার মাগনুস বাকেনের স্কোর ছিল ৬৯১.৫। ১১ আগস্ট রিও অলিম্পিক গলফ কোর্সে ব্যক্তিগত স্ট্রোক প্লে’তে খেলতে নামবেন প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে সরাসরি অলিম্পিকে যাওয়া সিদ্দিকুর রহমান। বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে চারটায় লড়াইয়ে নামবেন তিনি। অলিম্পিক র‌্যাংকিংয়ে ৫৬তম হয়ে সর্বপ্রথম বাংলাদেশী খেলোয়াড় হিসেবে অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করা সিদ্দিকুরের বর্তমান বিশ্ব র‌্যাংকিং ৩১০। তার চেয়ে র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা বহু গলফারই খেলবেন ১১২ বছর পর অলিম্পিক গেমসে ফেরা গলফে। তবুও যেহেতু গলফ হবে ব্যক্তিগত ইভেন্টে, তাই কিছুটা হলেও আশাবাদী সিদ্দিকুর।
রিও’র উদ্বোধনী ভেন্যু অলিম্পিক স্টেডিয়াম। মাদার ইভেন্ট অব গেমসখ্যাত অ্যাথলেটিকসের বিভিন্ন ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে এই স্টেডিয়ামের ট্র্যাকে। ১২ আগস্ট বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৫৫ মিনিটে মহিলাদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে ট্র্যাকে নামবেন বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার। ২২ সেকেন্ডের এই প্রিলিমিনারি রাউন্ড টপকাতে পারলে তার জায়গা হবে রাউন্ড-১-এ। তার ক্যারিয়ারসেরা টাইমিং ১১.৯৯ সেকেন্ড। অন্যদিকে পরদিন ট্র্যাকে নামবেন দেশের দ্রুততম মানব মেজবাহ আহমেদ। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় প্রিলিমিনারি রাউন্ডে খেলতে নামবেন তিনি। পুরুষদের ইভেন্টে ৭১ ও মহিলাদের ইভেন্টে ৫৬ জন অ্যাথলেটের নাম নিবন্ধন হয়েছে বলে জানা গেছে। লন্ডনে উসাইন বোল্ট ৯.৬৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে স্বর্ণ জিতেছিলেন আর অষ্টম স্থান অধিকারী আসাফা পাওয়েল নিয়েছিলেন ১১:৯৯ সেকেন্ড। মেজবাহর সেরা টাইমিং ১০.৪৩ সেকেন্ড। তবে এটা হ্যান্ডটাইমিং, যা ইলেকট্রনিক্স টাইমিংয়ে আরও আধা থেকে এক সেকেন্ড বেড়ে যাবে। অলিম্পিক হিটের নিবন্ধন মান পুরুষদের ক্ষেত্রে ১০.১৬ সেকেন্ড এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ১১.৩২ সেকেন্ড। ফলে এক্ষেত্রে বলাই যায়,
বাংলাদেশের এই দুই অ্যাথলেট অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। সাঁতারে গেমসের ষষ্ঠ দিনে ১১ আগস্ট অলিম্পিক অ্যাকোয়াটিকস স্টেডিয়ামে পুরুষদের ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইল হিটে বাংলাদেশ সময় রাত দশটায় পুলে নামবেন মাহফিজুর রহমান সাগর। ২০১২ সালে সাগর লন্ডনে ২৪.৬৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে ৫৮ জন সাঁতারুর মধ্যে ৩৯তম হয়েছিলেন তিনি। আর নিজ হিটে হয়েছিলেন চতুর্থ। বর্তমানে তার সেরা টাইমিং ২৪.০২ সেকেন্ড। এ ইভেন্টে ফ্রান্সের ফ্লোরেন্স মানডাউ ২১.৩৪ সেকেন্ড নিয়ে অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতেছিলেন। আর লন্ডনে যিনি অষ্টম হয়েছিলেন সেই অস্ট্রেলিয়ান ইমন সুলিভান সময় নিয়েছিলেন ২১.৯৮ সেকেন্ড। বর্তমানে বিশ্বচ্যাম্পয়নশিপে এটি ২১ সেকেন্ডের কাছাকাছি চলে এসেছে। সাগরের পরীক্ষার পরদিনই মহিলাদের ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইল হিটে সোনিয়া আক্তার টুম্পা একই সময়ে পুলে লড়বেন সেই হিটে। টুম্পার সেরা টাইমিং ৩০.৮৫ সেকেন্ড, যা দিয়ে প্রাথমিক পর্ব পার হওয়ার আশাও করা যায় না। কারণ লন্ডন অলিম্পিকে মহিলাদের সর্বনিু টাইমিং ছিল ২৪.৬৯ সেকেন্ড। তাই অলিম্পিকে এখন পর্যন্ত হিট পেরোনোই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের সাঁতারুদের জন্য।

No comments

Powered by Blogger.