এবার ভূমধ্যসাগর থেকে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ভূমধ্যসাগর থেকে সিরিয়ায় ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার
এই ছবিটি প্রকাশ করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়
প্রথমবারের মতো ভূমধ্যসাগরে অবস্থান করা যুদ্ধজাহাজ থেকে সিরিয়ায় ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার আলেপ্পোর নিকটবর্তী এলাকায় এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। ইরানের বিমানঘাঁটি থেকে রাশিয়ার বিমান হামলা শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই এই ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রাশিয়ার সিরিয়া অভিযানে নতুন মাত্রা যোগ করল। এর আগে কাস্পিয়ান সাগর থেকে সিরিয়ায় ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল রাশিয়া। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স শনিবার এ খবর দিয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জঙ্গি সংগঠন জাবাথ ফাতেহ আল-শামের অবস্থান লক্ষ্য করে ওই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। জঙ্গি সংগঠনটি এর আগে নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত ছিল। গত মাসে তারা আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে। এদিকে, সিরিয়ার সরকারি বাহিনী শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের মতো দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি বাহিনীর ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট রণাঙ্গনে কর্মরত তাদের সামরিক উপদেষ্টাদের রক্ষায় যুদ্ধবিমান পাঠায়। বার্তা সংস্থা এএফপি’র খবরে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের যুদ্ধবিমান হাসাকা নগরীতে কুর্দি বাহিনী লক্ষ্য করে বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে। হাসাকা নগরীর বেশিরভাগ কুর্দি বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে।
বাকি অংশ প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত যোদ্ধাদের দখলে রয়েছে। কুর্দি বাহিনী গত কয়েক মাস ধরে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত স্থানীয় যোদ্ধাদের সহায়তাকারী মার্কিন জোটের সামরিক উপদেষ্টাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। বৃহস্পতিবার সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর বিমান হামলা বন্ধে ও জোটের উপদেষ্টাদের রক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্র জঙ্গি বিমান পাঠায়। মার্কিন বিমান আসার পর সিরীয় বিমান ওই এলাকা ছেড়ে যায়। সিরীয় বাহিনীর পদক্ষেপের জবাবে এই প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র জঙ্গি বিমান পাঠালো। পেন্টাগন মুখপাত্র ক্যাপ্টেন জেফ ডেভিস বলেন, জোটের উপদেষ্টাদের রক্ষার জন্য এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব এবং তারা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে এমন কর্মকাণ্ড না করতে সিরীয় সরকারকে পরামর্শ দেব।’ যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানান, সিরিয়া সরকারের দুই যুদ্ধবিমান শুক্রবার ফের ওই এলাকায় ওড়ার চেষ্টা করে। তবে তাদের মার্কিন যুদ্ধবিমানের মুখোমুখি হতে হয়। তিনি বলেন, জোটের বিমানের উপস্থিতির কারণে কোনো ধরনের ঘটনা ছাড়াই সিরীয় বিমান ওই এলাকা ত্যাগ করে। এ সময় জোটের যুদ্ধ বিমান থেকে কোনো গুলি ছোড়া হয়নি। মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, নগরীতে বুধবার থেকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ৯ শিশুসহ ২৩ বেসামরিক নাগরিক ও ১৬ যোদ্ধা নিহত হয়েছে। ডেভিস বলেন, বৃহস্পতিবার সিরিয়ার বিমান হামলায় জোটের কেউ আহত হয়নি এবং যুক্তরাষ্ট্রের উপদেষ্টারা নিরাপদ স্থানে চলে যান। সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়,
কুর্দি বাহিনী হাসাকা ঘিরে রেখেছে এবং গোলার আঘাতে বেসামরিক ও সামরিক প্রাণহানি হচ্ছে। আর এসব অপরাধের জন্য দায়ীদের অবস্থান ও গুলির উৎস লক্ষ্য করে সিরীয় বাহিনী সঠিক জবাব দিয়েছে। অন্যদিকে, সিরিয়ার অবরুদ্ধ শহর আলেপ্পোয় রাশিয়ার হামলা স্থগিতের ঘোষণাকে জাতিসংঘ স্বাগত জানিয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি স্টাফান ডি মিস্তুরা রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এখন সিরিয়ার অবরুদ্ধ এলাকায় ত্রাণ ও ওষুধ পাঠাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতিসংঘ। আলেপ্পোতে রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং আইএসের আত্মঘাতী হামলার কারণে সেখানকার নাগরিকেরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তাদের কাছে অনেক দিন ধরেই ত্রাণ পাঠানো সম্ভব হচ্ছিল না। এজন্য জাতিসংঘ সব পক্ষকে ত্রাণ পাঠাতে অন্তত ৪৮ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়। এই ডাকে সাড়া দিয়ে আগামী সপ্তাহ থেকে আলেপ্পোতে হামলা স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

No comments

Powered by Blogger.