নাগরিকদের স্বার্থ উপেক্ষা করা যাবে না

রাজধানী ঢাকা দেশের মোট আয়তনের ১ শতাংশ হলেও বাস করছে জনসংখ্যার ১২ শতাংশ মানুষ। ঢাকার বহুমাত্রিক সমস্যার গভীরতা অনুধাবন করতে এই একটি তথ্যই যথেষ্ট বলে মনে করি। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা জরিপে ঢাকা শহর বিশ্বের সবচেয়ে অবাসযোগ্য বড় শহরের মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে একই জরিপে দ্বিতীয় বলে বিবেচনা করা হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে ঢাকার নীতিনির্ধারকেরা কিঞ্চিৎ আত্মতুষ্টি বোধ করতে পারেন; কিন্তু তাতে নগরবাসীর পাহাড়সমান দুর্ভোগ বিন্দুমাত্র কমবে না। প্রায় দেড় কোটি মানুষের শহর ঢাকায় নাগরিক সুযোগ-সুবিধার কী হাল তা এখানকার নাগরিকেরা হাড়ে হাড়ে টের পান। একটি আধুনিক শহর গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর পাশাপাশি সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন। অথচ ২০১০ সালে ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) করা হলেও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই।
স্বার্থান্বেষী মহল এটিকে হিমাগারে পাঠানোর সব আয়োজন সম্পন্ন করে রেখেছে। সমস্যার গভীরে না গিয়ে গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর গুলশান ও ধানমন্ডি এলাকার আবাসিক চরিত্র পুনরুদ্ধারে রাজউক যে পাইকারি উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে, তা তুঘলকি কাণ্ড বলেই প্রতীয়মান হয়। সংস্থাটি এখন যেসব ‘অবৈধ’ প্রতিষ্ঠানকে উচ্ছেদ করতে তৎপর হয়েছে, কীভাবে সেগুলো গড়ে উঠল—সেই প্রশ্নেরও জবাব নেই। এ ধরনের ঝটিকা অভিযান চালিয়ে যে ঢাকার সমস্যার সমাধান করা যাবে না, সেটি প্রথম আলোর গোলটেবিল বৈঠকে নগরবিদ ও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। পরিকল্পিত নগর গড়তে ড্যাপ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা। কেননা, এতে কোন এলাকায় কতসংখ্যক নাগরিকের জন্য কী ধরনের স্থাপনা থাকবে, সেসব বলা আছে। নগরবাসীর বর্ধিত চাহিদা পূরণের নামে যেমন যত্রতত্র ভবন নির্মাণ করা যাবে না, তেমনি একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে বিগত শতকের পঞ্চাশের দশকের ‘বিশুদ্ধ’ আবাসিক এলাকার ধারণাও বাস্তবসম্মত নয়।
অতএব, সুন্দর ও সুবিন্যস্ত ঢাকার জন্য ড্যাপ বাস্তবায়নের দিকেই মনোনিবেশ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.