মার্কিন নির্বাচন কি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে নজিরবিহীন প্রশ্ন তুলেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ করেছেন আগামী নির্বাচনে কারচুপি হতে যাচ্ছে। নির্বাচনী ব্যবস্থার দিকে তীক্ষè নজর রাখতে তিনি দলীয় নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্পের এই মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এমনকি আমেরিকান নাগরিকদের মধ্যে গণঅসন্তোষ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাইমারি নির্বাচনে বার্নি স্যান্ডার্সের পরাজয় নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন তুলতেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের মতে, কারসাজি করে হিলারি ক্লিনটনকে জিতিয়ে দেয়া হয়েছে। দলটির সুপার ডেলিগেটদের তিনি ‘কারচুপিমূলক ব্যবস্থা’ বলতেন। পরবর্তীতে উইকিলিকসের ফাঁস করা ই-মেইল তথ্যে ডেমোক্রেটিক নেতৃত্বের পক্ষপাতিত্বের প্রমাণ মিলেছে।
গত সোমবার সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেন ট্রাম্প। রিপাবলিকান নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, তারা নির্বাচনী ব্যবস্থায় তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। কেননা এটা আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে।’ ট্রাম্পের এই প্রচারণায় প্রভাবিত হয়েছেন অন্তত কয়েক কোটি ভোটার। কারণ এর আগেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও দুর্নীতিগ্রস্ত ‘ওয়াশিংটন স্টাবলিশমেন্ট’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মূলনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কেননা দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও নির্বাচনে সবসময় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ প্রতিযোগিতা হতো। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক মাইকেল হেনি বলেন, ‘কোনো ধরনের ব্যাখ্যা ছাড়া এ ধরনের মন্তব্য নির্বাচনী ব্যবস্থার বৈধতাকে হুমকির মুখে ফেলে।’ গত এক দশক ধরে নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি মার্কিনিদের আস্থা কমে যাচ্ছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপ অনুযায়ী ২০০৪ সালে ৪৮ শতাংশ ভোটার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, দেশের ভোট ব্যবস্থা নির্ভুল। ২০০৮ সালে তা কমে ৪৩ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০১২ সালে মাত্র ৩১ শতাংশ ভোটার বলেছেন, ভোট গণনা নির্ভুল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটার তালিকা ও ভোট গণনায় প্রতারণার অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। ১৯৬০ সালে জন এফ কেনেডি ও রিচার্ড নিক্সনের লড়াইয়ে ভুয়া ভোটারের ভোট দেয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
কারণ ভোটার তালিকায় অনেক মৃত মানুষের নাম ছিল। রটজার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ‘দ্য মিথ অব ভোটার ফ্রড’ গ্রন্থের লেখক লরেন মিনিট বলেন, ‘আমাদের ৫০ রাজ্যে ৫০ রকম ভোট গ্রহণ পদ্ধতি। জাতীয়ভাবে একক কোনো পদ্ধতি নেই।’ তবে মার্কিন ইতিহাসে এমন নজির নেই যে, কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নির্বাচনের আগেই আশংকা করছেন ভোটে কারচুপি হবে। রিপাবলিকান রাজনীতিবিদ ও কর্মকর্তারা প্রায়ই ভোটার নিবন্ধন আইন কড়াকড়ির জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। তবে হিলারি ক্লিনটনসহ ডেমোক্রেট কর্মকর্তারা বলছেন, রিপাবলিকানরা ডেমোক্রেট ভোটারদের বাধা দিতে কঠোর নিয়ম-কানুন চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। ২০০০ সালের নির্বাচনে ফ্লোরিডায় ভোট পুনর্গণনার দাবি উঠেছিল। তাতে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী আল গোর জর্জ ডব্লিউ বুশের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি বা ফল প্রত্যাখ্যান করেননি। এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব বক্তব্যের মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের ভিত্তি তৈরি করছেন বলেই মনে করছেন কয়েকজন বিশ্লেষক। ওহাইও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইলেকশ ল’ পড়ান অধ্যাপক ডান টোকাজি। তিনি বলেন, ‘কারচুপির অভিযোগে ট্রাম্প নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করলে জনগণের মধ্যে অস্থিরতা ও সহিংসতা তৈরি হতে পারে। মনে হচ্ছে, ট্রাম্প সহজে তার পরাজয় মেনে নেবেন না।’

No comments

Powered by Blogger.