সোনার গয়না বেচাকেনায় ছাড় চায় জুয়েলার্স সমিতি

সোনার গয়না বেচাকেনায় মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ছাড় চায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। বর্তমানে সোনার গয়না কিনলে বিক্রয়মূল্যের ওপর ক্রেতাকে ৫ শতাংশ মূসক দিতে হয়। সমিতির প্রস্তাব হলো, এ মূসক হার দেড় শতাংশ করা। গতকাল সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে প্রাক্-বাজেট আলোচনায় এ প্রস্তাব করেছেন জুয়েলার্স সমিতির নেতারা। এনবিআর সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। বর্তমানে ব্যবসায়ী পর্যায়ে স্বর্ণ আমদানি করলে প্রতি ভরিতে তিন হাজার টাকা, অগ্রিম ব্যবসায় কর (এটিভি) হিসেবে ৪ শতাংশ শুল্ককর আরোপ আছে। জুয়েলার্স সমিতি প্রতি ভরিতে ১৫০ টাকা শুল্ক দিয়ে স্বর্ণ আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়া যাত্রী ব্যাগেজ রুলস আরও শিথিল করার প্রস্তাব দিয়েছে সমিতি। জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলাম এসব প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, ভারতে স্বর্ণালংকার কেনায় ১ শতাংশ মূসক। তাই ভারতে গিয়ে স্বর্ণালংকার কেনার প্রবণতা বেড়েছে বাংলাদেশিদের। ১০ লাখ টাকার গয়না কিনলে বাংলাদেশে ৫০ হাজার টাকা মূসক দিতে হয়। ভারতে এর পরিমাণ মাত্র ১০ হাজার টাকা। এতে দেশের জুয়েলারি ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মিষ্টিতেও ছাড়: মিষ্টি উৎপাদকেরা তাঁদের মুনাফার ওপর কর রেয়াত বৃদ্ধির সুপারিশ করেছেন। সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমানে গ্রাম থেকে দুধ সংগ্রহ করে মিষ্টি তৈরি করে তা বিক্রির উপযোগী করতে যে খরচ করেন, এর ৩০ শতাংশ মুনাফা ধরা হয়। এই মুনাফার হার ২৫ শতাংশ ধরে করারোপের প্রস্তাব করেছেন সমিতির নেতারা। সমিতির মহাসচিব খন্দকার আবদুল মোমেন বলেন, প্রতিবছর রিটার্ন দাখিলের পর কর নথি আবার যাচাই-বাছাই করা হয়। এতে হয়রানির শিকার হন মিষ্টি উৎপাদকেরা। চামড়াশিল্প: চামড়া খাতকে উৎসে কর ও মূসক হতে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ ছাড়া সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান যাবে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে ছয় বছরের কর অবকাশ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। চামড়া শিল্পনগরীকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা দিয়ে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার সুপারিশও করা হয়। কৃষি যন্ত্রপাতি: দেশীয় কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদকদের বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদক সমিতি। এ সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষি যন্ত্রপাতির বেশ কিছু খুচরা যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এসব যন্ত্রাংশের আমদানি খরচ কমানো হলে উৎপাদন খরচ কমবে। এতে কৃষকেরা কম দামে কৃষি যন্ত্রপাতি পাবেন। সমিতি দাবি করেছে, পূর্ণাঙ্গ কৃষিযন্ত্রের চেয়ে সম্পূর্ণ খোলা অবস্থায় যন্ত্রপাতির শুল্ক হার বেশি। এতে এ খাতের স্থানীয় শিল্প বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হতে পারছে না। বিস্কুট-কেক: বর্তমানে হাতে তৈরি ১০০ টাকার বিস্কুট ও কেক কিনলে মূসক দিতে হয় না। আগামী বাজেটে দেড় শ টাকার বিস্কুট ও কেক কিনলে তা মূসকমুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে ব্রেড, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতি। সমিতির পক্ষ থেকে যুক্তি দেখিয়ে বলা হয়েছে, হাতে তৈরি বিস্কুট ও কেকের প্রাথমিক উপকরণ চিনি, তেল, ময়দাসহ যাবতীয় উপকরণের দাম বেড়েছে। শ্রমিকদের বেতনও বেড়েছে। তাই ১০০ টাকায় এক কেজি বিস্কুট বা কেক বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া গতকালের বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশীয় চা সংসদ, বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশন, ব্রিডাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সভায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.