ইকুয়েডরে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫০

ইকুয়েডরে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত দুই হাজার। লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে গত কয়েক দশকের মধ্যে এটি সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। খবর এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক দপ্তর (ইউএসজিএস) জানায়, স্থানীয় সময় গত শনিবার রাতে আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। ইউএসজিএস বলেছে, ইকুয়েডরের উত্তর-পশ্চিম উপকূলে ছিল এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। ভূমিকম্পের পর হাজার হাজার মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছয়টি প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। সুইজারল্যান্ড, স্পেন ও লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশের উদ্ধারকারী দল উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছে। রাতের ভূমিকম্পের পর ১৬৩টি পরাঘাত (ভূমিকম্প-পরবর্তী মৃদু কম্পন) অনুভূত হয়। প্রায় এক মিনিট স্থায়ী এ ভূমিকম্পের কম্পন ইকুয়েডর ছাড়াও প্রতিবেশী পেরু ও কলম্বিয়ার অংশবিশেষেও টের পাওয়া যায়। তবে ওই দুই দেশে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইভিত্তিক প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি সতর্কীকরণ কেন্দ্র প্রশান্ত মহাসাগরের কাছাকাছি অঞ্চলে সুনামি সতর্কতা জারি করে। পরে অবশ্য তা তুলে নেওয়া হয়। ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরাইয়া রাষ্ট্রীয় সফরে ইতালিতে ছিলেন। ভূমিকম্পের পর সফর সংক্ষেপ করে তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফিরে আসেন। দুর্যোগে দেশবাসীকে শান্ত ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি। রাফায়েল কোরাইয়া বলেন, ভূমিকম্পের এ ঘটনায় দেশটির কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর আগে গতকাল রোববার দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হোর্হে গ্লাস বলেছিলেন, ভূমিকম্পে অন্তত ২২৫ জন নিহত ও দেড় হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, নিহত মানুষের সংখ্যা বাড়তে পারে। অনেকে বিধ্বস্ত বাড়িঘরের নিচে আটকে আছে। উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত পুলিশ, সেনাবাহিনী ও জরুরি পরিষেবা দানকারী সব সংস্থাকে জানমাল রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইকুয়েডর কর্তৃপক্ষ জানায়, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে পরিচালিত উদ্ধারকাজে ১৪ হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, ২৪১ জন চিকিৎসাকর্মী ও দুটি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল নিয়োজিত রয়েছে। অভিযানে কলম্বিয়া ও মেক্সিকো থেকে আরও কর্মী যোগ দিচ্ছেন। প্রায় এক মিনিটের কম্পনে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে ইকুয়েডরের অনেকেই। এদের একজন রাজধানী কিটোর বাসিন্দা মারিয়া টোরেস। ষাটোর্ধ্ব এই নারী বলছিলেন, ‘ওহ ঈশ্বর! সারা জীবনে এত ভয়াবহ আর শক্তিশালী ভূমিকম্প দেখিনি। আমার মাথা ঘুরছিল। ছুটে রাস্তায় বের হওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পারছিলাম না।’
ভূমিকম্পের পর কন্ট্রোল টাওয়ার পুরোপুরি বিধ্বস্ত হওয়ায় মান্টার বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়। মান্টা ছাড়াও গুয়েইয়াকুইল বিমানবন্দরও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ইকুয়েডরবাসীর প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রধান কূটনীতিক ফ্রেদেরিকা মগেরিনি। দেশটিকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ। ইকুয়েডরে আঘাত হানা এ ভূমিকম্পের আগে গত শনিবার জাপানে ভূমিকম্পে মারা যায় অন্তত ৪১ জন। গত ১০০ বছরে ইকুয়েডরে সাতটি বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এগুলোর মধ্যে ১৯৮৭ সালে ভূমিকম্পে প্রায় এক হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।

No comments

Powered by Blogger.