৫৭ শাখায় অর্ধেকের বেশি ঋণ এখন খেলাপি

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের ৫৭টি শাখার বিতরণ করা মোট ঋণের ৫০ শতাংশের বা অর্ধেকেরও বেশি খেলাপি হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১০টি শাখায় খেলাপি ঋণের হার ৮০ শতাংশের ওপরে। ব্যাংকের শাখাভিত্তিক খেলাপি ঋণসংক্রান্ত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ব্যাংকটির যে ১০টি শাখায় ৮০ শতাংশের ওপরে খেলাপি ঋণ রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে চট্টগ্রামের আমিরাবাদ ও খাতুনগঞ্জ, কক্সবাজার, ঢাকার হাটখোলা ও জয়পাড়া, মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর ও রামগোপালপুর, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, ঠাকুরগাঁওয়ের মির্জাপুর ও বরগুনা শাখা। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এই ব্যাংকের দেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ ২০১৫ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৪ হাজার ২২৪ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ ঋণ। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শতকরা হিসাবে সর্বোচ্চ ৯৪ শতাংশ খেলাপি ঋণ নিয়ে চলছে ব্যাংকটির কক্সবাজার শাখা। এ শাখার দেওয়া ২১ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ২০ কোটি টাকাই এখন খেলাপি। এর মধ্যে কনস্ট্রাকশন সি ফুড লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা। যোগাযোগ করা হলে অগ্রণী ব্যাংকের কক্সবাজার শাখার ব্যবস্থাপক মোস্তাক আহমেদ সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া একজন গ্রাহক খেলাপি হয়ে পড়ায় এমন অবস্থা হয়েছে। তবে ঋণটি নিয়মিত করার প্রক্রিয়া চলছে। তা হয়ে গেলে খেলাপি ঋণ ৫০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯২ শতাংশ বা ১৩ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছে রাজধানীর হাটখোলা শাখায়। এ শাখা মোট ঋণ দিয়েছে ১৪ কোটি টাকা। ৯০ শতাংশ ঋণখেলাপি হয়েছে ঢাকার জয়পাড়া শাখায়। এ শাখার দেওয়া চার কোটি টাকার ঋণের মধ্যে সাড়ে তিন কোটি টাকাই খেলাপি। রাজধানীর গ্রিনরোড শাখার দেওয়া ১৪০ কোটি টাকার মধ্যে ১০৪ কোটি টাকাই (৭৪ শতাংশ) এখন খেলাপি। তবে পরিমাণের দিক থেকে সর্বোচ্চ ৩৪৩ কোটি টাকা (৫৩ শতাংশ) ঋণখেলাপি হয়েছে চট্টগ্রামের লালদীঘি পূর্ব শাখার। এ শাখার দেওয়া মোট ঋণের পরিমাণ ৬৫২ কোটি টাকা। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের জাহান বিল্ডিং শাখার বিতরণ করা ২৮৯ কোটি টাকার মধ্যে ১৭৬ কোটি টাকা (৬১ শতাংশ) খেলাপি ঋণ। এ ছাড়া চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখার ১২ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে ১১ কোটি খেলাপি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকের শর্ত মেনে চলছে না অগ্রণী ব্যাংক। যেমন, নিয়ম অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংকের মোট মূলধনের ১৫ শতাংশের বেশি ঋণ দিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগে। কিন্তু অগ্রণী ব্যাংক তা না মেনে চারটি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক চিঠিতে ব্যাংকটিকে সতর্ক করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ২০১৫ সালে অগ্রণী ব্যাংকের ৫১২ কোটি টাকা ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়েছে। তা না হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়ত। আলোচ্য বছরে ব্যাংকটি শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রহীতার কাছ থেকে আদায় করেছে ৫১ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় মাত্র ২২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ ছাড়া অন্যান্য খেলাপি গ্রহীতার কাছ থেকে আদায় হয়েছে ৩১৪ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৪৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। এসব সন্তোষজনক নয়। আর অবলোপনকৃত ঋণ থেকে আদায় হয়েছে ৪০ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় মাত্র ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। এটি হতাশাজনক। এ ছাড়া অর্থঋণ আদালতে ৭ হাজার ৪৮২ কোটি টাকার দাবি সংবলিত ৭ হাজার ৬৭৩টি মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। এসব বিষয়ে সম্প্রতি যোগাযোগ করা হলে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখ্ত বলেন, ‘খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি করেছি। এ জন্য মহাব্যবস্থাপক থেকে এমডি পর্যন্ত সবাইকে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আমরা তা নিয়মিত তদারক করছি। তবে আইনি বাধায় অনেক সময় অর্থ আদায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের বড় খেলাপি গ্রহীতাদের সম্পদ ব্যাংকে সংযুক্ত করার চেষ্টা চলছে।’ বর্তমানে দেশব্যাপী অগ্রণী ব্যাংকের ৯৩০টি শাখা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.