মাতব্বরের নির্দেশে গাছ কেটে ফাঁকা হচ্ছে মাঠ

মাতব্বরদের নির্দেশ, ফাঁকা করতে হবে মাঠ। তাই কাটা হচ্ছে হাজার হাজার গাছ। এরই মধ্যে কাটা হয়ে গেছে তিন হাজারের বেশি। এখনো চলছে। এ ঘটনা ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে। গ্রামবাসী জানিয়েছেন, মাঠের ফসলের ক্ষতির অজুহাতে গোটা মাঠের গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছেন মাতব্বরেরা। কিন্তু এর বিরোধিতা করতে সাহস পাচ্ছেন না গ্রামের মানুষ। বাধ্য হয়ে সদ্য রোপণ করা চারা থেকে শুরু করে ১৫ বছরের পুরোনো আম, কাঁঠাল, মেহগনি, বাবলা সব গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চরের মাঠ বলে পরিচিত এ মাঠে কদিন পর আর কোনো ছায়া থাকবে না। ক্লান্ত কৃষকও বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা পাবে না। গতকাল সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুর গ্রামের বিশাল মাঠটিতে গাছ কাটার কাজ চলছে। কেন কাটছেন—জানতে চাইলে লোকজন বলেন, মাতব্বরদের নির্দেশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দু-একজন বলেন, হঠাৎ করে গত ১৭ মার্চ লক্ষ্মীপুর গ্রামের লোকজনকে নিয়ে স্থানীয় সীমান্ত বাজারে সভা ডাকেন মাতব্বরেরা। মজিবর রহমান নামের এক মাতব্বর এতে সভাপতিত্ব করেন। নানা আলোচনার পর উপস্থিত কয়েকজন মাতব্বর ওই মাঠের সব গাছ কাটার নির্দেশ দেন। সময় দেওয়া হয় ২০ দিন। এরপর শুরু হয় গাছ কাটার কাজ। গ্রামবাসী জানান, মাঠে এমন অনেক গাছ আছে যেগুলো মানুষের উপকার করছে। মাঠের মাঝ দিয়ে যাওয়া রাস্তার পাশে খালপাড়ের গাছও কেটে ফেলতে বাধ্য করা হয়েছে। অন্তত এ গাছগুলো ফসলের কোনো ক্ষতি করছিল না। মাঠের জমি অনেকটা উঁচু। ফসল বলতে কলা, পাট ইত্যাদি। গাছের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মতো কোনো ফসল নেই। তারপরও গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করে একজন গাছমালিক বলেন, মাঠের একটা অংশে তাঁর নিজের জমি। জমির মাঝে বাগান। সে গাছও কাটতে হচ্ছে। জানতে চাইলে মাতব্বর মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ফসলের ক্ষতির কথা চিন্তা করে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটা তাঁর একার সিদ্ধান্ত নয়। গাছ থাকলে ফসলের ক্ষতি হবেই। যে কারণে গ্রামের মানুষের অনুরোধে এই সিদ্ধান্ত তাঁরা দিয়েছেন। সভায় অন্য মাতব্বরদের মধ্যে গোলাম মোস্তফা, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবদুর রাজ্জাকসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন বলে জানান মজিবর। অবশ্য আবদুর রাজ্জাক সভায় উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা আছে। তিনি সিদ্ধান্ত দেওয়ার সময় ছিলেন না। আরেক মাতব্বর গোলাম মোস্তফাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পরিবেশ আন্দোলনের আহ্বায়ক মাসুদ আহম্মদ বলেন, এটা খুবই অন্যায়। এমন নির্দেশ মাতব্বরেরা কীভাবে দেন তা তাঁর বোধগম্য নয়। প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে বাকি গাছগুলো রক্ষা করা। ঝিনাইদহ জেলা বন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, একজনের গাছ অন্যজন কাটার নির্দেশ দিতে পারেন না। বিষয়টি দ্রুত খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি। আর পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক মল্লিক আনোয়ার হোসেন জানান, এটা পরিবেশের জন্য খুব ক্ষতিকর। তিনিও বিষয়টি দ্রুত প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তাদের অবহিত করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

No comments

Powered by Blogger.