প্রশ্নবিদ্ধ ক্ষমতাধর ও স্বজনেরা

ডেভিড ক্যামেরন, সেরগেই রলদুগিন, মরিয়ম নওয়াজ
পানামার আইনি প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার মাধ্যমে কর ফাঁকি ও অর্থ পাচারের বিশাল যে ঘটনা ফাঁস হয়েছে, তাতে নাম এসেছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্ষমতাধর ও ধনাঢ্য ব্যক্তি বা তাঁদের আত্মীয়স্বজনের। এএফপি, বিবিসি ও ডন পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে আছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের তিন সন্তান, ভারতের শিল্পপতি ও চলচ্চিত্র তারকা, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠজন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ বহু ব্যক্তির নাম। নওয়াজ শরিফ: ফাঁস হওয়া নথিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর চার ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনজন মরিয়ম, হাসান ও হোসেনের নাম এসেছে। নথি বলছে, নওয়াজের সন্তানেরা মোসাক ফনসেকার মাধ্যমে পরিচালিত বিভিন্ন অফশোর কোম্পানির মালিকানার অংশীদার। এর মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসভিত্তিক তিনটি প্রতিষ্ঠান। তবে নওয়াজ পরিবারের দাবি, তারা অন্যায় কিছু করেনি। নওয়াজের ছেলে হোসেন নওয়াজ শরিফ দেশটির জিয়ো টিভিকে বলেন, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশের আইন মেনেই সবকিছু করা হয়েছে। এসব আইনে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে অযথা কর এড়ানোর বিষয়টি একটি বৈধ উপায়। ভ্লাদিমির পুতিন: পানামা পেপারসে রুশ প্রেসিডেন্টের নাম সরাসরি আসেনি। তবে পুতিনের ঘনিষ্ঠজন, রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম আছে। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় ২০০ কোটি ডলার গোপন করে কর ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কীভাবে অর্থ পাচার হয়, তা নথিগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে। এসব কোম্পানি জাল শেয়ার লেনদেন, ভুয়া পরামর্শক চুক্তি, অবাণিজ্যিক ঋণ ও বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে সম্পদ কেনার মাধ্যমে মুনাফা করেছে। এর মধ্যে দুটি কোম্পানির মালিক পুতিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সেরগেই রলদুগিন। ‘পানামা পেপারস’ ফাঁস হওয়ার কড়া সমালোচনা করে ক্রেমলিন বলেছে, এর প্রধান লক্ষ্যবস্তু রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ও রাশিয়া। শি জিনপিং: ফাঁস হওয়া নথি মোতাবেক চীনা প্রেসিডেন্টসহ দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির বর্তমান ও সাবেক অন্তত আটজন শীর্ষ নেতার পরিবার নিজেদের সম্পদের তথ্য গোপন করতে বিভিন্ন কর রেয়াত অঞ্চলকে ব্যবহার করেছে। নথিতে নাম থাকা ব্যক্তিদের একজন জিনপিংয়ের শ্যালক দেং জিয়াগুই। নথিতে চীনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি পেংয়ের মেয়ে লি জিয়াওলিনের নামও রয়েছে। বাদশাহ সালমান: ফাঁস হওয়া নথি মোতাবেক সৌদি বাদশাহ সালমান লন্ডনে নিজের বিলাসবহুল কয়েকটি বাড়ির ওপরে ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার বন্ধকি ঋণ নেওয়ার জন্য ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডভিত্তিক একটি অফশোর কোম্পানিকে ব্যবহার করেছেন। ডেভিড ক্যামেরন: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের প্রয়াত বাবা ইয়ান ক্যামেরনও মোসাক ফনসেকার সেবা নিয়েছিলেন। তাঁর রেখে যাওয়া ২৭ লাখ পাউন্ডের মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে ক্যামেরন পেয়েছেন তিন লাখ পাউন্ড। তবে তিনি এ জন্য কর শোধ করেননি, এমন কোনো ইঙ্গিত নথিতে নেই। নাজিব রাজাক: নথি মোতাবেক মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের ছেলে নাজিফুদ্দিন নাজিব মোসাক ফনসেকার মাধ্যমে দুটি অফশোর কোম্পানি গড়ে তুলেছেন। ফাঁস হওয়া নথিতে এ ছাড়াও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কাতারের সাবেক আমির শেখ হামাদ আল থানি, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ, মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক, লিবিয়ার প্রয়াত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান। কালো টাকার গন্তব্য
ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্কের ২০১৫ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী
* সুইজারল্যান্ড কালোটাকার ক্ষেত্রে শীর্ষে
* দ্বিতীয় স্থানে ‘এশিয়ার পোস্ট অফিস’ হংকং
* তৃতীয় যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশিরা ব্যাংকে অর্থ রাখলে কর দিতে হয় না
* দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থ পাচারের ‘প্রবেশদ্বার’ সিঙ্গাপুর
* কেম্যান আইল্যান্ডসে মানুষের চেয়ে কোম্পানি বেশি
* অফশোর ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস হলো অর্থ পাচারের অন্যতম প্রধান উপায়

No comments

Powered by Blogger.