‘বকশিশ’ দিলে মিটারে চলে কিছু অটোরিকশা by একরামুল হুদা

ঢাকা মহানগরীতে চলাচলরত সিএনজি চালিত অটোরিকশার মাত্র ৩৮ শতাংশ মিটারে চলাচল করে। মিটারে চলাচলকারী এসব অটোরিকশার ৮১ শতাংশই ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বকশিশ দাবি করে। এ ছাড়াও যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না ৭৩ শতাংশ অটোরিকশা।
বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রীদের নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। গত ২০ থেকে ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এক হাজার ৯৩টি অটোরিকশার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এবং এক হাজার ১৬০ জন অটোরিকশা যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জরিপ চলাকালীন সময় ও স্থানে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম দেখা যায়নি।  
রাজধানী ঢাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার নতুন ভাড়ার হার ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়। নতুন ভাড়া অনুযায়ী অটোরিকশার প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকা। পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১২ টাকা। প্রতি এক মিনিট ওয়েটিংয়ের (যাত্রাবিরতি, যানজট ও সিগন্যাল) জন্য দুই টাকা। মালিকের জমা ৯০০ টাকা। কিন্তু ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পরও অনেক চালকই তা মানছেন না। এ অবস্থার মধ্যেই আজ পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম মহানগরেও অটোরিকশার বাধ্যতামূলকভাবে মিটারে চলাচল শুরু হচ্ছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সচিব মুহাম্মাদ শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অটোরিকশার মিটারে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে। চট্টগ্রামের ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাজে সহযোগিতা করার জন্য দু-এক দিনের মধ্যে ঢাকা থেকে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট চট্টগ্রাম যাবেন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে মুহাম্মাদ শওকত আলী বলেন, পরিসংখ্যান সব সময় একটি বিতর্কের বিষয়। তা ছাড়া এই প্রতিবেদনটি বিআরটিএর কাছে দেওয়া হয়নি। জরিপটি করার সময় যদি বিআরটিএ অথবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হতো তাহলে হয়তো আরও ফলপ্রসূ ফলাফল পাওয়া যেত। তবে ১০০ ভাগ অটোরিকশা মিটারে চলে সেটা আমরাও বলছি না। যাতে সবাই মিটারে যায় বিআরটিএ বিভিন্নভাবে সেই চেষ্টাই করছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, প্রাইভেট নিবন্ধিত অটোরিকশাগুলো ভাড়ায় যাত্রী বহন করে এবং ঢাকা জেলার অটোরিকশা বেআইনিভাবে ঢাকা মহানগরে প্রবেশ করছে। এসব অটোরিকশার ৩৮ শতাংশ মিটার বিহীনভাবে চলাচল করছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবেদনটি করার সময় ঢাকা মহানগরীর সদরঘাট, গুলিস্তান, প্রেসক্লাব, পল্টন, কাকরাইল, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, খিলগাঁও চৌরাস্তা, ফকিরাপুল, ফার্মগেট, মালিবাগ, মিরপুর-১০, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ, বিমানবন্দর, মহাখালী এলাকাগুলো ঘুরে দেখা হয়েছে। এ সময় সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এ সব এলাকায় বিআরটিএ বা অন্য কোনো সংস্থার কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
এই ব্যাপারে বিআরটিএর সচিব মুহাম্মাদ শওকত আলী বলেন, যানবাহনের অনিয়ম পর্যবেক্ষণের জন্য বিআরটিএর ছয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। তবে এই ভ্রাম্যমাণ আদালতগুলোর কোনো নির্দিষ্ট সময় এবং নির্দিষ্ট স্থানে থাকে না। এ ছাড়া অনিয়ম ধরার সুবিধার্থে কখন কোনো জায়গায় কোনো আদালত বসবে বা কোনো আদালত থাকবে কি না তাও কাউকে জানানো হয় না।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বিআরটিএর কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। অথবা তারা যে ব্যবস্থা নিচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে যাত্রীদের কথা বিবেচনা না করে এক লাফে অটোরিকশার ভাড়া প্রায় ৬০ শতাংশ বাড়িয়েও এই খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না। চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা বেড়েই চলছে আর যাত্রীরা প্রতিনিয়ত জিম্মি হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.