চাভেজের প্রতিশ্রুতি পূরণে ‘মরিয়া’ বিরোধীরা!

কারাকাসের উপকণ্ঠের এই ভবনগুলোর
মতো দরিদ্রদের জন্য দেশজুড়ে বহু বাড়ি
বানি​য়েছেন প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজ
রাজধানী কারাকাস থেকে গাড়িতে প্রায় এক ঘণ্টার পথ কিউদাদ মিরান্দা। সেখানে গেলেই চোখে পড়ে অনেকগুলো ছিমছাম ভবন। আকাশে মাথা তুলে দাঁড়ানো এসব ভবনে ২০ হাজার মানুষের বাস, আগে যাঁরা ছিলেন বস্তির বাসিন্দা। বাড়িগুলো বানিয়েছিলেন ভেনেজুয়েলার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো চাভেজ। বাস্তুহারা মানুষগুলোর হাতে তিনি তুলে দিয়েছিলেন ঘরের চাবি; আর তাঁরা চাভেজকে দিয়েছিলেন ভোট।
অবশ্য, চাভেজ মানুষগুলোকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ফ্ল্যাটগুলো তাঁদের নামে লিখে দেবেন। তখন কেউ ইচ্ছা করলেই নিজের বাড়ি বিক্রি করে দিতে পারবেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি চাভেজ পূরণ করেননি।
কাঁড়ি কাঁড়ি সরকারি অর্থ ঢেলে এই গৃহায়ণ প্রকল্প যখন হাতে নেওয়া হয়েছিল, তখন চাভেজের বিরোধিতায় কোমর বেঁধে নেমেছিলেন বিরোধীরা। অনেকে সেই আন্দোলন থেকেই জনপ্রিয়তা পেয়ে আজ ভেনেজুয়েলার পার্লামেন্ট সদস্য। গত মাস থেকে পার্লামেন্টের দখলও চাভেজবিরোধী জোট ডেমোক্রেটিক ইউনিটি রাউন্ড টেবলের (এমইউডি) হাতে। সেই জোটই এখন চাভেজের নেওয়া উদ্যোগের ফায়দা নিতে চাইছে।
কিউদাদ মিরান্দা কারাকাসসহ দেশজুড়ে চাভেজ ও তাঁর সমাজতন্ত্রী আন্দোলন বাস্তুহারাদের জন্য বানিয়েছিল হাজার হাজার বাড়ি। সেগুলোর মালিকানা এখন দরিদ্রদের হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে আগামী দিনগুলোতে ভোট টানতে চায় চাভেজবিরোধীরা। অথচ চাভেজ যখন এসব প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন, তখন এই নেতারাই বলতেন, এটা চাভেজের ভোট কেনার একটা কৌশল।
ব্যাংক অব আমেরিকা মেলি লিঞ্চের অর্থনীতিবিদ ফ্রান্সিসকো রড্রিগুয়েজ বলেন, ‘ভেনেজুয়েলার বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এখন চাভেজমের (চাভেজের রাজনৈতিক আন্দোলন) জনপ্রিয় উপাদানগুলোকেই নকল করার চেষ্টা করছে।’
ভেনেজুয়েলার পার্লামেন্ট ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে চলতি মাসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় চাভেজবিরোধীরা। গত ১৬ বছরের মধ্যে এই প্রথম সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েই তারা দ্রুততার সঙ্গে পার্লামেন্ট থেকে চাভেজের ছবি সরিয়ে ফেলেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তির জন্য এরই মধ্যে খসড়া প্রস্তাব প্রস্তুত। এমনকি চাভেজের অনুগত বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকেও নানাভাবে শাসাচ্ছে তারা।
কিন্তু দেশের বিধ্বস্ত অর্থনীতির কারণে আইনপ্রণেতারা জনপ্রিয় কিছু করতে বাড়তি চাপে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলায় বছরে ৭২০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ঘটতে পারে। খাদ্যসংকট ক্রমেই বাড়তে থাকায় দোকানগুলোর সামনে মানুষের সারিও ক্রমেই লম্বা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির প্রাণ হিসেবে বিবেচিত তেলের মূল্য কমতেই আছে। আর প্রেসিডেন্ট পদে চাভেজের অনুগত মাদুরো থাকায় অর্থনীতি-সংক্রান্ত নীতিতে পার্লামেন্টের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। সুতরাং, চাভেজবিরোধী আইনপ্রণেতারা এখন চাভেজ ও তাঁর অনুসারীদের নির্মিত বাড়িগুলোর দিকেই ঝুঁকছেন।
ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৩ সালে মারা যাওয়া চাভেজ সুউচ্চ ভবন বানিয়ে দেশের দরিদ্র মানুষগুলোকে বস্তি থেকে সেখানে নিয়ে ঠাঁই দেওয়ার মাধ্যমে প্রক্রিয়াটা শুরু করে দিয়েছিলেন। পরে মাদুরো তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। কিন্তু চাভেজের আগের সরকারগুলোও ভোটারদের বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার নজির রেখেছে।
এ-সংক্রান্ত আইনের খসড়া লেখার কাজে নিয়োজিত আইনপ্রণেতা হুলিও বোর্হেসের যুক্তি, এসব বাড়ি দরিদ্র মানুষগুলোকে প্রথমবারের মতো পুঁজি দেবে। এটা ভেনেজুয়েলার অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে সাহায্য করবে। এটা এখন থেকে দরিদ্র মানুষগুলোকে তাদের নিজেদের ভাগ্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দেবে। তিনি বলেন, ‘লোকজনের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়েছে, যেন তারা শিশু। এই আইন আপনাকে বাড়ি বিক্রি ও এর উত্তরাধিকার নির্বাচনের সুযোগ করে দেবে, যা এখন আপনি করতে পারছেন না।’
তবে প্রেসিডেন্ট মাদুরোর সমর্থকদের ভাষ্য, প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন তাঁরা। অথচ, বিরোধীরা এখন তার কৃতিত্ব নিতে মরিয়া। মাদুরোর ইউনাইটেড সোশ্যালিস্ট পার্টির আইনপ্রণেতা দারিও ভিভাস বলেন, ‘আমরাই লোকজনকে বাড়ি দিয়েছি। হুলিও বোর্হেসরা একটি বাড়িও বানায়নি।’

No comments

Powered by Blogger.