‘পিপি বলার কে?’

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের আগে সাংবাদিকদের বের করে দেওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দুই আইন বিশেষজ্ঞ। তাঁদের মতে, সাংবাদিকেরা থাকতে পারবে, না পারবে না, তা নিয়ে বলার কোনো অধিকার রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির (পিপি) নেই। এক আইনজীবী প্রশ্ন তুলেছেন, এ নিয়ে ‘পিপি বলার কে’?
আজ সোমবার প্রথম আলোর কাছে এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক।
শফিক আহমেদ বলেন, এটা খুব অদ্ভুত ঘটনা। সাক্ষ্যগ্রহণের সময় সাংবাদিকেরা থাকবেন এবং দায়িত্বপালন করবেন—এটাই স্বাভাবিক। সাংবাদিকেরা থাকতে পারবেন না—এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়ার অধিকার পিপির নেই। এটা সম্পূর্ণ অনধিকার চর্চা বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে বিচারক বিশেষ কোনো কারণ বা যুক্তিতে এটা বলতে পারেন।
একই মন্তব্য করেন আইনজীবী শাহদীন মালিক। তিনি পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘পিপি বলার কে?’ তিনি বলেন, পিপি কেন এ ধরনের কথা বললেন, তা খতিয়ে দেখা দরকার। এ ধরনের মামলায় সাংবাদিকদের দায়িত্বপালনে কোনো বাধা নেই। বিচারক কোনো যুক্তি থেকে এটা বলতে পারেন।
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলায় কারাগারে থাকা ২৩ আসামিকে আজ আদালতে হাজির করা হয়। তাঁদের উপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আদালতের কার্যক্রম শুরুর আগে এজলাসকক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বের করে দেওয়া হয়।
আদালতে বিচারক আসন গ্রহণের কিছু আগে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) আইনজীবী ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, সাক্ষ্যগ্রহণের কার্যক্রম চলাকালে বাদী, আসামি ও আইনজীবী ছাড়া আর কেউ এজলাসকক্ষে থাকতে পারবেন না বলে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে।
প্রধান আসামি নূর হোসেনের আইনজীবী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহাও একই কথা বলেন।
এরপর গণমাধ্যমকর্মীদের আদালতের এজলাসকক্ষ থেকে বের করে দেয় পুলিশ। সাংবাদিকেরা আদালতের এজলাসকক্ষের বাইরে অবস্থান করেন।
সাক্ষ্যগ্রহণকে সামনে রেখে সকাল নয়টার দিকে আদালতে প্রধান আসামি সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‍্যাবের সাবেক কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানাসহ ২৩ জন আসামিকে হাজির করা হয়। প্রথমে তাঁদের আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। পরে সকাল সোয়া ১০টার দিকে সেখান থেকে আসামিদের আদালতের কাঠগড়ায় নেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণের তিন দিন পর তাঁদের লাশ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় নজরুল ইসলাম ও তাঁর চার সহযোগী হত্যার ঘটনায় একটি এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় আরেকটি মামলা ফতুল্লা মডেল থানায় করা হয়। প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে নূর হোসেন ও র‍্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
৮ ফেব্রুয়ারি এসব মামলায় নূর হোসেন ও র‍্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ২৩ আসামির উপস্থিতিতে আদালত অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন। র‍্যাবের আট সদস্যসহ ১২ আসামি এখনো পলাতক। তাঁদের অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.