পাকিস্তানের ওপর মার্কিন চাপ


ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের সীমান্তবর্তী পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে জঙ্গি হামলায় অপরাধীদের দ্রুত ধরে সাজা দিতে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তারা বলেছে, মুম্বাই হামলার মতো এ ক্ষেত্রেও তারা যেন অপরাধীদের আড়াল করতে বাজে যুক্তি না দেখায়। যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে এই চাপের মুখে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহম্মদ আসিফ জানিয়েছেন, দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ভেস্তে যাক এমন কোনো অপকর্ম কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনকে করতে দেওয়া হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের এই চাপ এবং পাকিস্তানি তৎপরতার মধ্য দিয়ে আপাতত এটুকু বোঝা যাচ্ছে, এই দুই দেশই দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যেতে বিশেষ আগ্রহী। চলতি মাসের মাঝামাঝি ইসলামাবাদে ভারত-পাকিস্তান পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের আলোচনা হওয়ার কথা। ভারত ইতিমধ্যে পাকিস্তানকে জানিয়ে দিয়েছে, তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এর ওপরেই নির্ভর করছে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভবিষ্যৎ। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘পাকিস্তান বলেছে তারা তদন্ত করবে। আমরা চাই সেই কাজটা তারা এগিয়ে নিয়ে যাক। অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি হচ্ছে, সেটা আমরা দেখতে আগ্রহী।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা এই ইঙ্গিতও দেন যে অতীতে এমন ঘটনায় পাকিস্তান অনেক টালবাহানা করেছে। সেই টালবাহানা এবার না হওয়া বাঞ্ছনীয়। ওই কর্মকর্তা এই কথাও বলেন, পাকিস্তানের কথা ও কাজের মধ্যে মিল দেখতে তাঁরা সে দেশের সরকারকে পর্যাপ্ত সময় দিতে রাজি। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার ভারতীয় মনোভাবেরও পরিবর্তন লক্ষণীয়। পাঠানকোটের ঘটনার পর তারা পাকিস্তান সরকারকে একবারের জন্যও দোষারোপ করেনি। পাকিস্তানও চুপ করে না থেকে সেনা ও গোয়েন্দা বিভাগের বৈঠক ডেকে ঘটনার নিন্দা করেছে এবং অবিলম্বে তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
পাকিস্তান সরকারের এই তৎপরতার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হলো ওবামা প্রশাসনের স্পষ্ট ইঙ্গিত। সেই অর্থবহ ইঙ্গিতটি হলো, আগেরবারের মতো এবারও অপরাধীদের ধরতে ও সাজা দিতে টালবাহানা করলে যুক্তরাষ্ট্রও সামরিক সাহায্যের ক্ষেত্রে হাত গুটিয়ে নেবে। একদিকে ভারতের কড়া মনোভাব, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় চাপের ফলেই এই প্রথম দেখা গেল পাকিস্তানের নির্বাচিত সরকার, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বিভাগ আইএসআইয়ের নেতৃত্বকে একযোগে তৎপর হতে। আপাতত সবারই লক্ষ্য পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি ও দ্বিপক্ষীয় আলোচনা না পিছিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে শুরু করা। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহম্মদ আসিফের বক্তব্যকে এই আলোতেই দেখতে হবে। কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনকে আলোচনা ভেস্তে দিতে দেওয়া হবে না বলে যে মন্তব্য তিনি করেছেন, তার মূল লক্ষ্য কিন্তু জইশ-ই-মুহাম্মদ ও তার নেতা মাওলানা মাসুদ আজহার। ভারতের পক্ষ থেকে পাঠানকোট ঘটনার যেসব প্রমাণ পাকিস্তানকে দেওয়া হয়েছে, তাতেও মূল চক্রী জইশ-ই-মুহাম্মদ। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানকে এবার এই প্রমাণ দিতে হবে যে তারা সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে আগ্রহী। সে জন্য তাদের অপরাধীদের ধরতে হবে ও সময় নষ্ট না করে সাজা দিতে হবে। সূত্রটির স্পষ্ট ইঙ্গিত মাসুদ আজহারের প্রতি। এই কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল শনিবার পাঠানকোট বিমানঘাঁটি ঘুরে আসেন। ঘটনা তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। তদন্তকারীদের সন্দেহ, ছয়জন সন্ত্রাসীর মধ্যে দুজন হয়তো এক দিন আগেই ঘাঁটিতে ঢুকেছিল। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কাদের সংস্রব ছিল, তদন্তের বিষয় সেটাও। পাঞ্জাব পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট সালবিন্দর সিংকে একেবারেই সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখা হচ্ছে না। তাঁর অপহরণ নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে। তাঁকে জেরার জন্য দিল্লি আনা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.