সন্ত্রাসবাদ মুছে ফেলার এখনই সময়

সন্ত্রাস দমনে রাশিয়ার সমর্থন প্রকাশ করতে সোমবার সকালে আমি ফ্রান্স সফরে যাচ্ছি। সেখানে দেশটির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলান্দের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের ভয়াবহতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে আলোচনা করব। প্যারিসের রাস্তায় লাশের মিছিল বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। আইএস এখন আর দুর্বোধ্য এলাকায় নয়, বরং হাজার হাজার মাইলের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ভয়াবহতা ছড়াচ্ছে। এটি এখন সামাজিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই ব্রিটেনের জনগণকে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তার গুরুত্ব বুঝতে হবে এবং তা সুরক্ষায় দেশের সরকারের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। সন্ত্রাস দমনে জঙ্গিদের ওপর হামলা করতে বেসামরিক মানুষ বাঁচানোর চিন্তা করার সময় এখন নয়। জিহাদি জন ও জঙ্গি রিয়াদ খান এ সাম্রাজ্যের দখল নিয়েছে বলে অন্য আরেকটি বিশ্ব গড়ে তুলতে হবে এটা ভাবাটাও এখন বোকামি। বরং বিশ্ব থেকে সন্ত্রাসবাদের ছায়া মুছে দিতে পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়। এজন্য আমি সন্ত্রাস দমনে কৌশলগত প্রতিরক্ষা বিভাগআ ও নিরাপত্তা জোট গঠনে বিশেষ সেনা ফোর্স ও সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশ বাহিনী গঠন করার পরিকল্পনা পার্লামেন্টে উপস্থাপন করেছি, যারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাজ করবে। জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সমগোত্রীয়।
এজন্য দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যা জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা। এর ফলে যুক্তরাজ্য তার জিডিপির ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ে বিশ্বের অন্যতম দেশে পরিণত হবে। কোনো খাতে বিনিয়োগ করার প্রধান উদ্দেশ্য থাকবে সেখান থেকে সন্ত্রাস দমনের ব্যাপারে পর্যাপ্ত অর্থায়নের খাত তৈরি করা। সন্ত্রাসবাদের অন্যতম কারণ কট্টর মনোভাব দূর করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য জঙ্গি দমন ও তার শিকড় উপড়ে ফেলতে যারা আমাদের সমর্থন করবে তাদের আমরা অর্থ বিনিয়োগ করব। এক্ষেত্রে আইনের শাসন, সুশাসন ও গণতন্ত্রের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করাও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের অন্যতম উপকরণ। সন্ত্রাস দমন ও তার ইন্ধন উপকরণ দূরীভূত করার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক উৎস বৃদ্ধি করা আমাদের কৌশলগুলোর মধ্যে অন্যতম। এজন্য নিরাপত্তা দফতরে ১ হাজার ৯০০ নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ, সন্ত্রাস দমনে বিশেষ পুলিশ বাহিনীকে ও ড্রোন নজরদারি বাড়াতে অর্থ বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। মনুষ্যবিহীন বিমান আমাদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বিচরণ করবে এবং দায়িত্বে নিয়োজিত অফিসারদের কাছে প্রতি সপ্তাহে তার প্রতিবেদন দাখিল করবে। ল্যানকাস্টার হাউস চুক্তির আওতায় মনুষ্যবিহীন আকাশযান সমৃদ্ধিতে ফ্রান্সের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ করবে যুক্তরাজ্য।
দেশের সৈন্যবাহিনী ব্যবহারের সামর্থ্য ও ইচ্ছানুযায়ী জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। সিরিয়া ও ইরাক অধ্যুষিত আইএস দমনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অংশ হিসেবে গত শুক্রবার নিরাপত্তা কাউন্সিলের রেজ্যুলেশন ২২৪৯ অনুমোদন করেছে জাতিসংঘ। এটা অবশ্যই আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার বৈশ্বিক হুমকি আইএস দমনে অভূতপূর্ব পদক্ষেপ। আন্তর্জাতিক এ যৌথ কমিটির সদস্য বৃদ্ধির জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে কাজ করব। তবে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্য দেশের ওপর আমরা বোঝা চাপিয়ে দেব না। এজন্য সন্ত্রাস দমনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সিরিয়া সংকট নিরসন করাটা আমাদের জন্য এখন প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরবর্তীতে সিরিয়ার প্রয়োজনে আমাদের সেনা ফোর্স কাজ করতে প্রস্তুত থাকবে। সন্ত্রাসবাদের আধুনিক সব কৌশল প্রতিহত করতে গত পাঁচ বছরে ব্রিটেনের সেনাবাহিনীকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বিশেষ সন্ত্রাসবিরোধী ফোর্স তৈরিতে পরবর্তী দশকের জন্য ব্রিটেন ১৭৮ বিলিয়ন ডলার অর্থ বিনিয়োগ করবে। এছাড়া আলাদা দুটি স্ট্রাইক ব্রিগেড (প্রতিটিতে পাঁচ হাজারের ওপর সৈন্য) গঠনের ব্যাপারে পরিকল্পনা নিয়েছে যুক্তরাজ্য।
[সংক্ষেপিত-সালমান রিয়াজ]

No comments

Powered by Blogger.