ভারতের বিরুদ্ধে আইসিসিতে বিদ্রোহ!

শাহরিয়ার খান
ভারত-পাকিস্তান সিরিজ নিয়ে অনিশ্চয়তার জের ধরে সংহতি বিপন্ন খোদ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা আইসিসি-র!
পাকিস্তান বোর্ডের সঙ্গে সাক্ষরিত মউ-এর শর্ত মেনে ভারত আসন্ন ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে রাজি না হলে পাকিস্তান দলের পক্ষে পরের বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে আসা সম্ভব না-ও হতে পারে বলে এ দিন প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে রাখলেন পাকিস্তান বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খান। সঙ্গে চাপ আরো বাড়াতে আইসিসি-র অভ্যন্তরে ‘বিগ থ্রি’ ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের জমি তৈরি হচ্ছে বলেও ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন তিনি।
ভারতীয় বোর্ডের প্রেসিডেন্ট শশাঙ্ক মনোহর নিজে তাদের আলোচনায় ডাকার পরেও শিব সেনার হুমকিতে তা ভেস্তে যাওয়া এবং ভারতীয় বোর্ডের সিরিজ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করাকে পাকিস্তান যে এ বার মোটেই সহজে মেনে নিচ্ছে না, সেটা শনিবার দুবাইয়ে শাহরিয়ারের কথাতেই পরিষ্কার। ‘‘ভারত যদি এ ভাবে সব দরজা বন্ধ করে দেয়, তা হলে আমাদেরও এ ব্যাপারে একটা নীতি নিতে হবে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতে দল পাঠানো আদৌ উচিত হবে কি না, সে ব্যাপারে আমাদের ইসলামাবাদের পরামর্শ নিতে হবে। এবং যে ধরনের হুমকি রয়েছে তাতে আমার ধারণা, পাকিস্তান সরকার দল না পাঠানোর পরামর্শই দেবে।’’
দিন দু’য়েক আগেও পাকিস্তানে ফিরে একই ভাবে হুমকি দিয়েছিলেন শাহরিয়র।
শিব সেনার নেতৃত্বে মহারাষ্ট্রে যে পাকিস্তান-বিরোধিতা চলছে তার পরিপ্রেক্ষিতে শাহরিয়রের পাক দলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট ভিত্তিও রয়েছে। গুলাম আলির মতো কিংবদন্তি গায়কের অনুষ্ঠান বাতিল করানো, পাকিস্তানি লেখকের বই নিয়ে অনুষ্ঠান ভেস্তে দেওয়ার পর শশাঙ্ক-শাহরিয়র বৈঠক বানচাল করতে ওয়াংখেড়েতে ঢুকে খোদ বোর্ড প্রেসিডেন্টের দফতরে হামলা চালায় শিব সৈনিকরা। যার পর বোর্ড সচিব ও পার্লামেন্ট সদস্য অনুরাগ ঠাকুর বিবৃতি দিয়ে জানান, আপাতত ভারত-পাকিস্তান সিরিজের কোনো সম্ভাবনাই নেই। তবে পাকিস্তান এ ব্যাপারে অনমনীয় দেখে আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুল্ক ‘‘বিষয়টি আমরা পুনর্বিবেচনা করব,’’ বলে আশ্বাসবাণী শুনিয়েছেন। কিন্তু তাতে যে চিড়ে ভেজেনি সেটা স্পষ্ট।
উল্টে শাহরিয়ারের মতো দুঁদে কূটনীতিক অন্য চাপ তৈরি করে বলেছেন, ‘‘আট বছরে ভারত আমাদের সঙ্গে ছ’টি সিরিজ খেলবে, এই শর্তেই আমরা আপত্তি থাকা সত্ত্বেও আইসিসি-র গঠনতন্ত্র সংশোধনে সায় দিয়ে ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের প্রাধান্য মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু তার এক বছরের মধ্যেই যদি আমাদের এমন বৈষম্যের শিকার হতে হয়, তা হলে গোটা বিষয়টা আমাদের পুনর্বিবেচনা করতে হবে।’’ পাশাপাশি, বিগ থ্রি-র হাতে আইসিসি-র সমস্ত ক্ষমতা ও উপার্জনের সিংহভাগ কেন্দ্রীভূত থাকা নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আরো কয়েকটি দেশও বিক্ষুব্ধ বলে দাবি করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘শুধু পাকিস্তান নয়, আমি জানি আইসিসি-র সদস্য আরও কয়েকটি দেশও আইসিসি-র নতুন গঠনতন্ত্রে খুশি নয়। আইসিসি-র বোর্ডের মধ্যেই ক্ষমতার এই ফারাকটা শুধু বৈষম্যমূলক নয়, অগণতান্ত্রিকও। তবে আমরা যেহেতু নতুন গঠনতন্ত্রে সই করেছি, তাই মেনে নিচ্ছি। কিন্তু মাত্র এক বছরেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে আইসিসি-র কাছে সদস্য দেশরা সবাই সমান নয়। ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে কিন্তু যা কিছু হওয়া সম্ভব।’’

No comments

Powered by Blogger.