পথে পথে চাঁদাবাজি

পথে পথে ওত পেতে বসে আছে চাঁদাবাজরা। গরুবোঝাই ট্রাক দেখলেই তারা হামলে পড়ছে। নিচ্ছে চাঁদা। কখনও কখনও ছিনিয়ে নিচ্ছে পুরো ট্রাক। এ অবস্থায় গরু ব্যবসায়ী, খামারিদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। অন্যদিকে ঈদকে সামনে রেখে মিয়ানমারের পর ভারত থেকেও সীমান্ত পেরিয়ে আসছে অসংখ্য গরু। ইতিমধ্যে রাজধানীর পশুরহাটে গরু উঠতে শুরু করেছে। তবে বিক্রি হচ্ছে কম। গরু ব্যবসায়ীরা জানান, এখন দেখে যাচ্ছেন ক্রেতারা। পরে এসে কিনবেন। এছাড়া, গরু বাজারকে ঘিরে জাল টাকার কারবারিরাও সক্রিয়। মলম পার্টির সদস্যরাও বসে নেই। গরু ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে তারা নেমেছে মাঠে। ইতিমধ্যে গরুর হাটকে কেন্দ্র করে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশ চালাচ্ছে বিশেষ অভিযান। সরজমিন দেখা গেছে, দুইদিন আগ থেকে হাটে গরু-ছাগল আসা শুরু করলেও গতকাল থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে জমতে শুরু করেছে রাজধানীর ২২টি কোরবানির পশুরহাট। বিভিন্ন পশুরহাটে ক্রেতাদের কিছুটা উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে বিক্রি ছিল না তেমন। বাজার পরিস্থিতি দেখতে গেছেন অনেকেই। ওদিকে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত পথে গরু আসা শুরু হয়েছে বেশ জোরেশোরে। মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান থেকে গরু আসা দেখে অবশেষে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও গরু ছাড়তে শুরু করেছে। ফলে দেশের সকল সীমান্ত পথ এবং হাটবাজার গরু ব্যবসায়ীদের তৎপরতায় সরগরম। তবে পথে পথে চাঁদাবাজি এবং ছিনতাই ব্যবসায়ীদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। পুলিশের নানা তৎপরতার পরও খোদ রাজধানীতে শুক্রবার রাতে ১৫টি গরুসহ ট্রাক ছিনতাইয়ের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীতে এবার ২২টি পশুরহাট বসছে। এগুলোর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ১০টি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় ছয়টি। ঢাকা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে থাকছে আরও ছয়টি হাট। হাটগুলোকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। নানা রঙের তোরণ, ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে হাটের প্রবেশপথ। পোস্টার ছাপিয়ে ও মাইকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নানা সুযোগ-সুবিধার কথা জানানো হচ্ছে। অন্যান্য বছর ঈদের আগের তিনদিন হাট বসানোর নিয়ম ছিল। তবে এবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অনুরোধে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন সাত দিন হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছে।
ওদিকে রাজধানীর একমাত্র স্থায়ী ও দেশের সবচেয়ে বড় পশুরহাট গাবতলীতে গিয়ে দেখা যায়, ট্রাক-পিকআপে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু-মহিষ ও ছাগল আসছে। তবে ক্রেতার উপস্থিতি খুবই কম। গোশত ব্যবসায়ীরাই কেবল গরু-ছাগল কিনছেন। এছাড়া কুমিল্লা, সিলেটসহ বাইরের জেলার ব্যবসায়ীরাও এ হাট থেকে গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে পুরো হাটে দেশী গরুর আধিপত্য। বাংলাদেশ গোশত ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম জানান, দেশে প্রতি বছর এক কোটি ২৫ লাখের মতো গরু জবাই হয়। এর মধ্যে ৬৫ লাখ কোরবানির সময়। আর বাকি ৬০ লাখ জবাই হয় সারা বছরে। এছাড়া কোরবানির সময় ৫০ লাখের মতো ছাগল জবাই হয়ে থাকে। তিনি বলেন, দেশে ভারতীয় গরুর কোন প্রয়োজন নেই। বিকল্প হিসেবে মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান থেকে গরু আসছে। তাছাড়া, দেশেই গরু উৎপাদন বাড়িয়ে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। এদিকে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন পশুরহাট ও আশপাশ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু হবে আগামীকাল থেকে। হাটের পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা দেখার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিও দেখবেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত ২২টি পশুরহাটে সাতজন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও মনিটরিং সেল কাজ করবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 
পথে পথে চাঁদাবাজি
চাহিদা বেশি থাকায় সীমান্তবর্তী হাট লালমনিরহাটের দুড়াকুঠি, দইখাওয়াহাট, চাপারহাট, রসুলগঞ্জহাট ও বড়খাতা হাটে উঠতে শুরু করেছে বিনা করিডোরে আনা গরুগুলো। সরকারিভাবে প্রতিটি গরু করিডোর করতে লাগে ৫০০ করে টাকা। যে হারে গরু আসছে তাতে করে করিডোর করলে সরকারি কোষাগারে যেতো বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। জেলার সীমান্তের প্রধান রুট মোঘলহাট ও দুর্গাপুর দিয়ে নদীপথে গরু আসছে ভারত থেকে। সীমান্তে ২৬৮ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া পথ আর ২৪ কিলোমিটার নদী কাঁটাতারবিহীন নৌপথ ব্যবহার করে করিডোরবিহীন গরুগুলো রাতের আঁধারেও আসছে। লালমনিরহাটের মোঘলহাট, দুর্গাপুর ও বুড়িমারীর চোরাচালানিরা চালাচ্ছে এ কারবার। প্রতিদিন সীমান্ত পেরিয়ে আসছে ৭ থেকে ৮ হাজার গরু। স্থানীয় হাটে বিক্রির পর ওই সব গরু ট্রাকযোগে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিন রাতে সীমান্ত পেরিয়ে আসা গরুগুলো সীমান্তবর্তী ইউনিয়নের মেম্বার-চেয়ারম্যানরা ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা গরুপ্রতি নিয়ে বাংলাদেশী গরুর সার্টিফিকেট দিয়ে ক্রয়-বিক্রয় চলছে হাটগুলোতে। লালমনিরহাট জেলার মোঘলহাট, কুলাঘাট, বুড়িমারী, পাটগ্রাম, দইখাওয়া সীমান্ত দিয়ে করিডোরবিহীন গরু অবাধে আসায় হাটবাজারে ভাল মূল্য পাচ্ছে না দেশী ডেইরি ফার্ম মালিকরা। সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের শতাধিক ডেইরি ফার্ম মালিক ব্যাংক ঋণ নিয়ে ডেইরি ফার্ম গড়ে তুললেও পড়েছে লোকসানের মুখে। একেকটি গরুর পেছনে ডেইরি ফার্ম মালিকরা ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করলেও বর্তমানে ভারতীয় করিডোরবিহীন গরুগুলোর কারণে প্রতি গরুতে লোকসান খাচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। ব্যাংক ঋণ নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছে। সীমান্তে করিডোরবিহীন গরু আনার ব্যাপারে কঠোরভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে একদিকে সরকার হারাবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব অন্যদিকে ঋণ নিয়ে গড়ে ওঠা ডেইরি ফার্ম মালিকরা পড়বে লোকসানের মুখে। গরু পরিবহনে পথে পথে হচ্ছে ব্যাপক হারে চাঁদাবাজি। জেলায় প্রতিটি হাটে চাঁদাবাজির কারণে ঘটছে গরু ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই। গরু প্রতি ট্রাকে ১২ স্থানে দিতে হয় চাঁদার টাকা। প্রতি ট্রাকে ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা দিতে হয় চাঁদার টাকা। ট্রাকচালক রসুল মিয়া জানান, দুড়াকুঠি হাটে গরু নিয়ে আসার সময় হাটের বাইরে ৭০০ টাকা, তিস্তা সেতু এলাকায় ৩০০ টাকাসহ পথে পথে চাঁদার টাকা না দিলে ট্রাক আটক করে। পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম জানান, চাঁদাবাজি রোধে গরুর হাটগুলোয় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সতর্ক রাখা হয়েছে পুলিশ বাহিনীকে।
রংপুর থেকে ঢাকা ১৯ স্পটে চাঁদাবাজি
কোরবানি ঈদের পশুকে ঘিরে চাঁদাবাজরা তৎপর হয়ে উঠেছে। রংপুর থেকে ঢাকায় এক ট্রাক গরু-ছাগল পাঠাতে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন চাঁদাবাজদের ১৯ ঘাটে চাঁদা দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ী ও ট্রাক ড্রাইভারদের। এতে করে এক ট্রাক গরু পাঠাতে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা চাঁদাবাজদের দিতে হয়। রংপুর নগরীর লালবাগ হাটের গরু ব্যাপারী আব্দুল জব্বার মিয়া, মজিবর মিয়াসহ অন্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোরবানি ঈদ উপলক্ষে রংপুর বিভাগের প্রায় ৮ শতাধিক পশুরহাট থেকে প্রতিদিন শতাধিক গরু ও ছাগল বোঝাই ট্রাক ঢাকা ও চট্টগ্রামে যায়। প্রতিটি ট্রাকে ২০-২২টি গরু থাকে। রংপুর থেকে ঢাকার ট্রাক ভাড়া স্থানভেদে ২৫-৩৫ হাজার টাকা ও চট্টগ্রামের ভাড়া ৩৫-৫০ হাজার টাকা। ঢাকা যেতে গরু প্রতি চাঁদা দিতে হয় ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। তারা জানায়, এসব টাকা তারা গরু বিক্রির সময় মূল্য হিসেবে তুলে নেয়। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, হাট এলাকায় রসিদ লেখা বাদেও গরুপ্রতি দেড় থেকে ২০০ টাকা, নগরীর রংপুর- লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, চৌরাস্তা সাতমাথা এলাকায় প্রতি ট্রাকে ১০০ টাকা এর অদূরেই মডার্ন মোড় পার হয়ে ৫০ টাকা, মিঠাপুকুর মহাসড়কে ১০০ টাকা, শঠিবাড়ী ৫০ টাকা, পীরগঞ্জ ৫০ টাকা, এরপর গাইবান্ধা-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কে ১০০ টাকা, বগুড়ার চৌরাস্তার মোড় থেকে ধাপে ধাপে ২০০ টাকা দিতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন সড়কেও সন্ত্রাসী মাস্তানরা গরুর ট্রাক আটক করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছে বলে তারা জানায়। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয় টাঙ্গাইলে। সেখানে ২টি স্পটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে চাঁদা দিতে হয় ১ থেকে দেড় হাজার টাকা। কথামতো টাকা না দিতে পারলে রাস্তার পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাক দাঁড় করে রাখা হয় বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। ঢাকাগামী ট্রাক ড্রাইভার আমিন হোসেন ও চট্টগ্রামগামী ট্রাক ড্রাইভার আশেক আলী বলেন, ঢাকায় গরুর ট্রাক নিয়ে যেতে হলে ১৯ স্থানে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে তারা হয়রানির কবলে পড়েন। এব্যাপারে রংপুরের এক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, চাঁদা আদায়ের বিষয় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগ না করার বিষয়ে গরু ব্যবসায়ী সাইফুল, আবদুল হামিদসহ অন্যদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, অভিযোগ করতে গেলেই অনেক ঝুটঝামেলা পোহাতে হয়। তাই আমরা চাহিদা মতো চাঁদা দিয়ে দ্রুত গন্তব্যে চলে যাই।
কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে আসছে গরু
ঈদকে সামনে রেখে কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন আসছে হাজার হাজার গরু। তবে ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি হওয়ায় বাজারে গরুর দাম চড়া। হাটেই গরুপ্রতি গুনতে হয় ১০৫০ টাকা আর প্রতি গরুর ট্রাক সিরাজগঞ্জ পৌঁছা পর্যন্ত অতিরিক্ত চাঁদা গুনতে হয় ১১৫০ টাকা। ফলে অতিরিক্ত চাঁদাবাজির খেসারত গুনতে হয় ভোক্তাদের। ঈদের বাজারে কোরবানির পশুর দাম ক্রমেই বাড়ছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, গরু সীমান্ত পার করার পর করিডোর ৫৫০ টাকা, দালাল ১০০ টাকা, ইজারাদার ৩০০ টাকা, বিট ১০০ টাকা সীমান্তবর্তী হাটে পৌঁছলেই দিতে হয়। এরপর হাটে ট্রাকে গরু লোড দিলে ট্রাক মালিক ও শ্রমিক সংগঠনকে দিতে হয় ৬০০ টাকা। দালাল চক্রকে  ১৫০ টাকা, ট্রাক শ্রমিকদের সাহায্যে ১০০ টাকা, কুড়িগ্রাম পৌরসভার টোল ১০০ টাকা, বগুড়ায় চাঁদা ২০০ টাকা এবং সিরাজগঞ্জে চাঁদা দিতে হয় ২০০ টাকা। গরু ব্যবসায়ী জহুর আলী ও আসাদুল জানান, একটি গরু ভারত থেকে বাংলাদেশে আনলে করিডোরে দিতে হয় ৫৫০ টাকা। অথচ সরকারি নিয়মে করিডোরের মূল্য ৫০০ টাকা। হাটে দালাল চক্রকে ১০০ টাকা, ইজারাদার ১৮০ টাকার স্থলে নেয় ৩০০ টাকা, খোয়াড়ে (বিট) ১০০ টাকা দিতে হয়। অতিরিক্ত খরচের কারণে লাভই থাকছে না ব্যবসায়ীর ঘরে। ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজির কারণে। ট্রাক ড্রাইভার আবদুর রহিম জানান, যাত্রাপুর হাটে প্রতি ট্রাকে দিতে হয় ৮০০ টাকা। এছাড়া, গরুর ট্রাক ঢাকা পর্যন্ত যেতে তিনটি ব্রিজের টোল দিতে হয়। কুড়িগ্রাম পৌরসভার ১০০ টাকা টোল এবং বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে দিতে হয় অতিরিক্ত ৪০০ টাকা চাঁদা। যাত্রাপুর হাটের ইজারাদার আবদুল গফুর হাটে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কোটি টাকা দিয়ে হাট ইজারা নেয়া হয়েছে এক বছরের জন্য। সরকারের হাটের কোন জায়গা নেই। ভাড়া জায়গায় হাট চালাতে হয়। তাই ১২০ টাকা অতিরিক্ত নেয়া হয়।
জেলা ট্রাক-ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, যাত্রাপুর ট্রাকস্ট্যান্ডে প্রতি ট্রাকে মালিক সমিতির ৫০ টাকা ও শ্রমিক ইউনিয়নের জন্য নেয়া হয় ২০০ টাকা। ধরলা ব্রিজের পশ্চিম প্রান্তে শ্রমিকদের সাহায্যের জন্য নেয়া হয় ১০০ টাকা।
খুলনার পথে পথে হয়রানি
কোরবানির পশুর হাটে গরু আনতে পথে পথে হয়রানির  শিকার হচ্ছে ব্যাপারীরা। মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশ ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের কতিপয় নেতারা ট্রাক ও পিকআপ থামিয়ে চাঁদা আদায় করছে বলে ব্যাপারীরা অভিযোগ করেছেন। নৌপথেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। ফলে খুলনার হাটগুলোতে গরু আনতে মারাত্মক সমস্যায় পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, পুলিশ হাটগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করলেও পথে পথে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। এদিকে খুলনা জেলার  ৯ উপজেলায় ৫০ শতাংশ কোরবানির পশুর হাট সরকারি অনুমোদনবিহীন। এসব হাটগুলো সরকারি দলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফলে গ্রাম থেকে আসা গরু এক প্রকার জোর করেই এসব অনুমোদনহীন হাটগুলোতে ঢোকানো হচ্ছে। অর্থাৎ একটি ট্রাকভর্তি গরু খুলনার জোড়াগেট হাটের উদ্দেশে রওনা হলে তা পথে থামিয়ে অবৈধ হাটগুলোতে জোরপূর্বক ঢোকানো হচ্ছে।
জেলা বিশেষ পুলিশ সুপার চলতি সপ্তাহে ঢাকা সদর দপ্তরের স্পেশাল ব্রাঞ্চের বিশেষ পুলিশ সুপারের কাছে অননুমোদিত ১৪টি হাটের তালিকা পাঠিয়েছেন। জেলায় মোট হাটের সংখ্যা ২৭টি। গতকাল নগরীর জোড়াগেট এলাকায় সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়নে পশুরহাট শুরু হয়েছে। খুলনার জোড়াগেট পশুরহাটে আসা ব্যাপারী মনির বলেন, গরুর ট্রাক থামিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের পরিচয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। চাঁদার টাকা না দিলে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম মশিউর রহমান জানান, আঠারো মাইল, খর্নিয়া, শাহপুর অনুমোদিত হাট ছাড়া অন্য কোন স্থানে গরুর বিকিকিনি বন্ধ করা হবে। তিনি জানান, মহাসড়কের ওপর হাট বসতে দেয়া হবে না। পুলিশি হয়রানির বিষয়টি তার জানা নেই।
দিঘলিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রবিউল হোসেন জানান, অননুমোদিত হাটের বিকিকিনি সরকারি নীতিমালার পরিপন্থি। হাট থেকে আদায়কৃত রাজস্ব বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেখভাল করেন। নিরাপত্তার বিষয়টি পুলিশের হাতে। অননুমোদিত চুকনগর হাটের পরিচালনাকারী নজরুল ইসলাম স্থানীয় ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাবেক আহ্বায়ক বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, জনগণের কেনাকাটার সুবিধার্থে হাট বসানো হয়েছে। শুক্রবার কেনাবেচা হয়েছে। হাট অনুমোদনের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশ নিয়ে জেলা প্রশাসনে আবেদন করা হয়েছে। দিঘলিয়ার মোল্লা জালাল উদ্দিন কলেজের হাট পরিচালনাকারী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামীম হোসেন জানান, সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা মোল্যা জালাল উদ্দিনের পরামর্শে এ হাট পরিচালনা করা হয়। গরুর হাটের জন্য সরকারি অনুমোদন নেই বলে তিনি স্বীকার করেছেন। কলেজ পরিচালনা পর্ষদ হাট দেখভাল করেন। হাট থেকে অর্জিত অর্থ কলেজের কাজে ব্যয় করা হয়। এ কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়নি।
পশুর ট্রাকে চাঁদাবাজি বরদাশত করা হবে না: ভারপ্রাপ্ত আইজিপি
ঈদুল আজহা উপলক্ষে মহাসড়কে পশুবাহী ট্রাকে পুলিশ চাঁদাবাজি করলে তা বরদাশত করা হবে না বলে নিজ সংস্থার সদস্যদের হুঁশিয়ারি করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. মোখলেসুর রহমান। ভারপ্রাপ্ত আইজিপি বলেন, দুই একজন পুলিশ সদস্যের জন্য সমগ্র পুলিশ বাহিনীকে কলঙ্কিত হতে দেয়া হবে না। যদি কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে পশুর ট্রাক থেকে চাঁদা নেয়ার নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তাহলে সাময়িক বরখাস্ত, বিভাগীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি নিয়মিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশের এ ধরনের কর্মকাণ্ড নজরদারি করতে ইন্টেলিজেন্স এবং ফিল্ড কমান্ডাররা নিয়োজিত রয়েছেন। তারা এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করছেন। এ ক্ষেত্রে আমরা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি।

No comments

Powered by Blogger.