অটোওলা এখন পাইলট

আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখত ছেলেটা। স্বপ্ন দেখত, ঘুড়ির মতো উড়ে বেড়াবে নীল আকাশের বুকে। একদিন সে পাইলট হবে। সে স্বপ্ন দেখার স্পর্ধা লাগে। কারণ, তার কাছে সেটা ছিল, ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার মতো অলীক, আকাশকুসুম। বা, বামুন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানোর মতো অসাধ্যকে স্পর্শের আকুলি। শেষ অবধি কিন্তু স্বপ্নকে ছুঁয়েছে সে। আজ সে পাইলট।
নাগপুরের শ্রীকান্ত পান্তাওয়ানেকে একসময় পাড়ার লোকে দেখেছে অটো চালাতে। বাবা সিকিওরিটি গার্ড। আয় সামান্যই। তাতে সংসারে দু-মুঠো ভাত জোগাবেন, নাকি সন্তানের পড়াশোনার খরচ! তাই অল্পবয়সেই সংসারের জোয়াল ধরতে হয় শ্রীকান্তকে। তখনও অটো চালানোর হাতেখড়ি হয়নি। পড়ার ফাঁকে ডেলিভারি বয়ের কাজ করেন। মাসশেষে যা আসে, সবটাই তুলে দেন মায়ের হাতে। তারপর একদিন অটো শিখে, রাস্তায়।
কিন্তু, দিনের শেষে ব্যালেন্স বজায় রাখতে জানতেন শ্রীকান্ত। জীবনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে, এই ভারসাম্যটা জরুরি। ডেলিভারি বয় বা অটোচালক, যখন যে ভূমিকাতেই তাঁকে দেখা যাক, পড়াশোনায় ফাঁকিবাজি ছিল না কখনও। কারণ, শ্রীকান্ত জানতেন লক্ষ্য ছুঁতে গেলে, শিক্ষার সোপান বেয়েই তাঁকে ধাপে ধাপে উঠতে হবে। তিন চাকার সেই ছেলেবেলার প্রেম তাঁকে ভূমি থেকে টেনে নিয়ে গেছে আকাশে। অটোর চালক শ্রীকান্ত আজ বসেন বিমানের স্টিয়ারিংয়ে।
শ্রীকান্ত আজ যা হয়েছেন, তা রূপকথার গল্পের মতোই। কঠোর পরিশ্রম, লেগে থাকার মানসিকতা আর কিছুটা ভাগ্য। এই তিনের ত্রিবেণী সংগমেই লক্ষ্য ছুঁয়েছেন নাগপুরের সেই দারিদ্রপীড়িত ছেলেটি।
একবার পার্সেল দিতে এয়ারপোর্টে যেতে হয়েছিল তাঁকে। সেখানেই এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর আলাপ। তাঁর কাছেই জানতে পারেন, ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সে যোগ না দিয়েও পাইলট হওয়া যায়। সেই বিমানবন্দরে বাইরে এক চা বিক্রেতার কাছে শোনেন, ডিজিসিএ’র পাইলট স্কলারশিপ প্রোগ্রামের কথা। এটুকু জানার পর আর কেউ তাঁকে থামাতে পারেনি। নীরবে চলে প্রস্তুতি।
বারো ক্লাসের পরীক্ষার পরপরই পাইলট স্কলারশিপের জন্য তৈরি হতে থাকেন। এরপর রেজাল্ট বেরোতেই চলে যান মধ্যপ্রদেশের ফ্লাইট স্কুলে। কিন্তু, বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় ইংরেজি। কিন্তু, শ্রীকান্তর মতো পরিশ্রমী ছেলের কাছে, সেটা খুব বেশদিন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি। বন্ধুদের সহযোগিতায় চটপট সেই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠেন। পাশ করে কমার্শিয়াল লাইসেন্স পান শ্রীকান্ত। কিন্তু, প্রথমেই পাইলটের চাকরি জোটেনি। পারিবারিক আর্থিক দৈন্যতায় বেশিদিন অপেক্ষা করাও সম্ভব ছিল না। শুরুটা তাই করতে হয় কর্পোরেট এগজিকিউটিভ হিসেবে। তবে, আশা ছিল, ঠিক একদিন পাইলট হবেনই।
ঠিক হাতে গুনে দু-মাস। ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স থেকে ডাক আসে। তার পর শুধুই উড়ে চলা স্বপ্নের বুকে।

No comments

Powered by Blogger.