‘পুলিশ ক্ষমতার অপব্যবহার করে গুলি চালিয়েছে’

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে গত শুক্রবার পুলিশের গুলিতে ৪ জন নিহতের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে জাতীয় মানাবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড.মিজানুর রহমান বলেছেন, আমি যদি কালিহাতীর জনগণ হতাম তাহলে তাদের সাথে আমিও প্রতিবাদ সভায় অংশ নিতাম। পুলিশ তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে গুলি চালিয়েছে। যা কোন ভাবেই উচিৎ হয়নি। পুলিশের উচিৎ কাউকে রক্ষা না করে ফৌজদারি বিধি অনুযায়ী মামলা দায়ের করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।  এ ঘটনায় যে সব পুলিশ জড়িত তাদেরকে শুধু প্রত্যাহার করলে চলবে না। তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। সোমবার দুপুরে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে কালিহাতীর ঘটনায় নির্যাতনের শিকার মা ও ছেলেকে দেখতে গিয়ে এসব কথা বলেন ড. মিজানুর রহমান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকার। পরে তিনি পুলিশের গুলিতে নিহতদের বাড়ীতে যান এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
‘গুলি চালান দায়িত্ব আমার’
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে অপরাধ দমনে সরাসরি গুলি ছুড়তে বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের প্রধান। উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান গতকাল ফরিদপুরে এক সভায় পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, “একটি কথা মনে রাখতে হবে- যারা জনগণের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলে কিংবা সরকারি সম্পদ ধ্বংসের চেষ্টা করে, তাদের প্রতিহত করতে যা যা করা দরকার সবই করবেন। “প্রয়োজন হলে সরাসরি গুলি করুন। দায়-দায়িত্ব সব আমি নেব।”
শুক্রবার কালিহাতীতে বিক্ষুব্ধ জনতার উপর পুলিশের গুলিবর্ষণে মোট চারজন নিহত হন। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। ডিআইজি নূরুজ্জামান শনিবার কালিহাতী গিয়ে গুলিবর্ষণকারী পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহারের নির্দেশও দিয়ে আসেন। এরপর তিন এসআই ও চার কনস্টেবলকে বরখাস্তও করা হয়।
এর একদিন বাদেই ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ প্রধান ফরিদপুরের সালথা উপজেলার নবকাম পল্লী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ প্রাঙ্গণে কমিউনিটি পুলিশিং ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় গুলির নির্দেশ দেন। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে রাস্তাঘাটে চাঁদাবাজদের কোন ধরনের ছাড় না দিতে বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গুলির নির্দেশ দেন তিনি। “জনগণের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। তাদের টাকায় আপনাদের অস্ত্র কেনা হয়। তাদের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আপনাদের,” বলেন নূরুজ্জামান।  বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণ নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনা রয়েছে। একই অভিযোগ তুলে বিএনপি বরাবরই বলে আসছে, বিরোধী দল দমনে পুলিশকে ব্যবহার করছে সরকার। ডিআইজি নূরুজ্জামান হেফাজতে ইসলামীর সন্ত্রাস ঠেকাতে পুলিশের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, “হেফাজত ঢাকা অবরোধের সময় ব্যাংক লুট  ও সচিবালয়ে নাশকতা করতে চেয়েছিল। পুলিশ   সে অপতৎপরতা ব্যর্থ করে দেয়।” রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কর্মকর্তা নূরুজ্জামান আগের সরকারগুলোর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে সভায় বলেন, “আমি মুক্তিযোদ্ধা ও গোপালগঞ্জের লোক হওয়ায় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমাকে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। যথা সময়ে আমাকে পদোন্নতি দিলে আমি এখন আইজি থাকতাম।” ফরিদপুর  জলা পুলিশ সুপার মো. জামিল হাসানের সভাপতিত্বে এই সভায় রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির, গোপালগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার জাহিদ হাসানও বক্তব্য রাখেন।

No comments

Powered by Blogger.