ফল- হেঁতাল by সৌরভ মাহমুদ

হেঁতাল ফল, সুন্দরবন থেকে তোলা ছবি l লেখক
জীবনে প্রথম হেঁতালগাছের সঙ্গে দেখা হয়েছিল ২০০২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যায় অনার্স অধ্যয়নের সময়, শিক্ষাসফরে সুন্দরবনের করমজলে গিয়ে। আমাদের শিক্ষক অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম ও অধ্যাপক শেখ ওয়াহিদুজ্জামান সেই শিক্ষাসফরের সময় সুন্দরবনের অনেক গাছগাছড়া চিনিয়েছিলেন। ওই তালিকায় ছিল সুন্দরী, পশুর, ধুন্দল, কেওড়া, গোলপাতা, হেঁতাল ইত্যাদি। তখন ছাত্রদের উদ্দেশে এক শিক্ষক বলেছিলেন ‘হেঁতালগাছে খেজুরের মতো ফল হয় এবং সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার হেঁতাল বনে থাকে।’
মঞ্জরিসহ হেঁতাল ফুল
হেঁতাল বিশ্বে নিকট বিপন্ন একটি উদ্ভিদ হলেও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত হিসেবে বিবেচিত। বন থেকে অতিমাত্রায় আহরণ, আবাসস্থল ধ্বংস, সামুদ্রিক ও নদীভাঙনের ফলে এ উদ্ভিদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। যাঁরা সুন্দরবন গিয়েছেন, অবশ্যই হেঁতালগাছ দেখে থাকবেন। হেঁতাল চিরসবুজ উদ্ভিদ। আমাদের চিরচেনা খেজুরগাছের মতো পাতা ও কাঁটাযুক্ত গাছ। ঝাড় আকারে বাড়ে। তবে কাণ্ড চিকন, খেজুরগাছের মতো মোটা নয়। গাছের কাণ্ড প্রায় দুই থেকে আট মিটার উঁচু হয়। প্রস্থ ৩০ থেকে ৪৫ সেমি। পাতা ২.৪-৩.০ মিটার। হেঁতালগাছ শুধু আমাদের সুন্দরবনে পাওয়া যায়। সুন্দরবনের খাল, নালা ও নদীর কিনারঘেঁষা পাড়ে এ গাছ দেখা যায়। সুন্দরবনের করমজল ও কটকা অভয়ারণ্য ও এলাকার টাইগার পয়েন্টে এ গাছের অনেক ঝোপ চোখে পড়বে। ঝোপালো বলে এ গাছের ভেতরে বাঘ লুকিয়ে থাকে ও বিশ্রাম নেয়। হেঁতালের ঘন ঝোপালো পাতার কারণে লুকিয়ে থাকা বাঘকে হরিণ ও অন্যান্য বন্য প্রাণী দেখতে পায় না। শিকার ধরতে বাঘের বেশ সুবিধা হয়।
হেঁতালের ইংরেজি নাম ম্যানগ্রোভ ডেট পাম। বাংলাদেশ বাদে চীন, আন্দামান দ্বীপ, থ্যাইল্যান্ড, মিয়ানমার এলাকার সমুদ্র মোহনার জঙ্গলে জন্মে। ফল খেজুরের মতো তবে আকারে ছোট। ফুল ছোট, হলদেটে সাদা। পুষ্পবিন্যাস স্পাডিক্স। ফুল ফোটে এপ্রিলে।

No comments

Powered by Blogger.