চ্যালেঞ্জে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ by কাজী সোহাগ

হাতে সময় রয়েছে তিন বছর। কাজ এখনও অনেক বাকি। সরকার চায় আগামী ২ বছরের মধ্যেই দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করতে। তাই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এ কার্যক্রম। বড় ধরনের চার ধাপ পেরিয়ে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা যাবে স্যাটেলাইট। এরমধ্যে মহাকাশে স্লট কেনা শেষ হয়েছে। স্যাটেলাইট তৈরির টেন্ডার জমা দেয়া হয়েছে। এখন চলছে মূল্যায়নের কাজ। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কানাডা ও ফ্রান্সের চারটি কোম্পানি ওই টেন্ডারে অংশ নিয়েছে। গাজীপুর ও চট্টগ্রামে দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণের কাজও এগিয়েছে। এরপরই রয়েছে স্যাটেলাইটের উদ্বোধন। এটাকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। সাধরণত রকেটের মাধ্যমে স্যাটেলাইট পাঠানো হয় মহাকাশে। অনেক সময় রকেট উৎক্ষেপণের আগে-পরে কিংবা অন্য যে কোন কারণে বিগড়ে যেতে পারে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে কোন ঝুঁকি নিতে চায় না বাংলাদেশ। বিকল্প হিসেবে আরও একটি অতিরিক্ত রকেট মজুত রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। একটি ব্যর্থ হলে আরেকটি উৎক্ষেপণ করা হবে। এ জন্য ওই প্রকল্পে ব্যয় কিছুটা বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান (বিটিআরসি) সুনীল কান্তি বোস সম্প্রতি টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, একটি রকেট ব্যর্থ হলে সাধারণত আরও ৬ মাস সময় লাগে পরবর্তী রকেটের জন্য। আমাদের হাতে সময় খুব কম। তাই খরচ বাড়লেও বিকল্প হিসেবে বাড়তি একটি রকেট হাতে রাখা হচ্ছে। স্যাটেলাইটসহ একটি রকেট উৎক্ষেপণের জন্য সাধারণত ব্যয় হয় চারশ’ থেকে সাড়ে চারশ’ কোটি টাকা। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমাদের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে হবে। তা না হলে কোন লাভ নেই। যদিও আমাদের লক্ষ্য ২০১৭ সালের শেষদিকে উৎক্ষেপণ করা। বিটিআরসি চেয়ারম্যান জানান, সফলভাবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে। বিটিআরসি জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হলে বাংলাদেশসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি দেশ টেলিযোগাযোগ ও সমপ্রচার সেবা দিতে জিয়োসিক্রোনাস স্যাটেলাইট সিস্টেম (৪০টি ট্যান্সপন্ডার, ২৬ কেইউ ব্যান্ড, ১৪ সি ব্যান্ড)-এর গ্রাউন্ড সিস্টেমসহ সব ধরনের সেবা দেবে। দরপত্রের আওতায় স্পেস সিগমেন্ট, লঞ্চ সার্ভিস, গ্রাউন্ড সিগমেন্ট ও উৎক্ষেপণের এক বছর পর্যন্ত বীমা সুবিধা রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সুনীল কান্তি বোস বলেন, বিশাল এ প্রজেক্ট কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারের যেন বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি না হয় সেদিকটি বিবেচনা করে ইন্স্যুরেন্স করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মহাকাশের বিভিন্ন রেখায় স্থাপন করা ৬৯টি দেশের শতাধিক স্যাটেলাইট যোগাযোগ ও সমপ্রচার এবং গোয়েন্দাগিরির কাজ করে যাচ্ছে। নিজেদের স্যাটেলাইট না থাকায় বাংলাদেশের ওপর বিদেশী ৫টি স্যাটেলাইট ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্বের ৪৫টি দেশের মহাকাশে নিজস্ব স্পেস রয়েছে। তাদের আকাশে অন্য কোন দেশের স্যাটেলাইট নেই। ৫০টি দেশ অন্য দেশের সহযোগিতায় স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। ১১টি দেশ নিজস্ব ব্যয়ে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। এসব দেশের শতাধিক স্যাটেলাইট বিষুবরেখা, মেরুবিন্দু বা ক্রান্তীয় অঞ্চল অথবা বিভিন্ন কৌণিক পথে পরিভ্রমণ করছে। যোগাযোগ মাধ্যমের স্যাটেলাইটগুলো সাধারণত বিষুবরেখার ওপর স্থাপন করা হয়। কক্ষপথের এই স্থানে স্যাটেলাইট স্থাপন করলে পরিচালন ব্যয় অনেক কম হয়। তাই উন্নত দেশগুলো এই কক্ষে একটার পর একটা যোগাযোগ স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। এর আগে বিটিআরসি বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের জন্য অরবিটাল স্লট ইজারা নিতে চুক্তি করে। চুক্তির আওতায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপনে ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্লটের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারস্পটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনসকে কয়েক কিস্তিতে দুই কোটি ৮০ লাখ ডলার দেবে বিটিআরসি। এরইমধ্যে প্রথম কিস্তির টাকা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি অনুমোদন করে। এর মধ্যে এক হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে। দাতা সংস্থা দেবে এক হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। বিডার্স ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে এই প্রকল্পের অর্থায়নের ব্যবস্থা করা হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণের জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)-এর নিজস্ব জমিতে দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.