‘ফাঁসি দিতে আমার কিছুই বোধ হয় না’

সাব্বির মসিহ
পাকিস্তানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ওপর সাত বছরের নিষেধাজ্ঞা গত বছর তুলে নেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। সে ঘটনার পরদিনই লাহোরে সাবির মসিহর বাড়ির চারপাশে আলোকচিত্র সাংবাদিকদের জটলা শুরু হয়ে যায়। কারণ একটাই, সাবির মসিহ একজন জল্লাদ। ফাঁসি দেওয়াই তাঁর কাজ।
জল্লাদ সাবির গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার। ক্যামেরার সামনে ফাঁসি নিয়ে কথা বলতে পারলে তিনি খুশিই হন। কিন্তু সেদিন হাতে একদম সময় ছিল না। স্মৃতিচারণা করে সাবির বললেন, ‘১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যার মধ্যেই আমার ফয়সালাবাদে পৌঁছানোর কথা ছিল। কারণ ১৯ তারিখ ভোরেই দুজনকে ফাঁসিতে ঝোলাতে হবে।’
নিজের তরুণী বোনের পোশাক পরে মুখটা নেকাবে ঢেকে বেরিয়ে পড়েন সাবির। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার ভ্যানের পাশ দিয়েই চুপিসারে হেঁটে চলে যান সোজা বাসস্ট্যান্ড। পরদিন সেনাবাহিনীর দুই সাবেক কর্মকর্তা এবং কুখ্যাত জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যকে ফাঁসিকাঠে ঝোলান সাবির।
সেই থেকে এ পর্যন্ত পাঞ্জাব প্রদেশেই প্রায় ৬০ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন জল্লাদ সাবির। আর সব মিলিয়ে সংখ্যাটা দুই শতাধিক। তবে এ জন্য কোনো অনুশোচনা নেই সাবিরের। কারণ, জল্লাদগিরি যাঁদের পরিবারের ঐতিহ্যবাহী পেশা।
সাবির বলেন, ‘জল্লাদগিরি আমার পারিবারিক পেশা। আমার বাবা ছিলেন জল্লাদ। তাঁর বাবাও ছিলেন জল্লাদ।’
উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকেই তাঁর পূর্বপুরুষেরা এ কাজে নিয়োজিত। সাবিরের সবচেয়ে পরিচিত পূর্বপুরুষ সম্ভবত তাঁর দাদার ভাই তারা মসিহ। পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে তিনিই ১৯৭৯ সালে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন।
সাংবাদিকেরা সাবিরকে প্রায়ই প্রশ্ন করেন, ‘কাউকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আগের রাতে তিনি ঘুমাতে পারেন কি না?’, ‘পরের রাতে দুঃস্বপ্ন দেখেন কি না?’, ‘প্রথমবার এ কাজের পর কী অনুভূতি হয়েছিল’, ইত্যাদি।
সাবিরের সোজাসাপটা জবাব, ‘আমার কিছুই মনে হয় না। কারণ, এটা পারিবারিক বিষয়। কীভাবে ফাঁসের গিঁট বাঁধতে হয়, তা বাবাই আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন।’
সূত্র: বিবিসি

No comments

Powered by Blogger.