বৃটেনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত টিনএজারদের ভাড়ায় ‘শখ’ পূরণ

বৃটেনের দরিদ্রতম বরোগুলোতে (প্রশাসনিক এলাকা) টিন-এজ কিশোর কিশোরীরা দামী গাড়ি হাঁকাচ্ছেন তাদের স্কুলের সমাপনী দিনটি উদযাপনের জন্য। চোখ-ধাঁধাঁনোভাবে নিজেদের উপস্থাপন করতে চান তারা। গাড়ি ভাড়া নেয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। টাওয়ার হ্যামলেটস, ইস্ট লন্ডনের মতো অঞ্চলের ১৬ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরা ল্যাম্বরগিনি, ফেরারি ও বেন্টলির মতো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নামকরা ব্র্যান্ডের সুপারকার হাঁকাচ্ছেন। গাড়িগুলো কেনার সাধ্য তাদের বা তাদের পরিবারের নেই। তাই কয়েকদিনের জন্য ভাড়া নিয়ে বিশেষ একটি শখ পূরণ করেন।
বৃটেনের টাওয়ার হ্যামলেটসে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বৃহত্তম সম্প্রদায়ের বসবাস। ওই এলাকাগুলোতে একটি বাড়ি কেনার চেয়ে তাদের ভাড়া করা চোখ-ধাঁধাঁনো অধিকাংশ গাড়ির দাম আরও বেশি। তারপরও ন্যাশনাল রেকর্ড অব অ্যাচিভমেন্টের (এনআরএ) অনুষ্ঠানের জন্য তারা আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেন না। স্কুলে এনআরএ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সান্ধ্য পোশাকে সেজে তারা তাদের ভাড়া করা সুপার কারের সঙ্গে বিভিন্ন পোজে ছবি তোলেন ও ভিডিও করেন এবং অনলাইনে পোস্ট করেন। অনুষ্ঠানে পুরস্কার ও সনদ তুলে দেয়া হয় কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে। অনুষ্ঠান শেষে সবাই একসঙ্গে ঘুরতে বেরোন। দামী গাড়ি ছেড়ে একসঙ্গে স্যালুন জাতীয় কোন গাড়ি বা আরও বড় কোন যানবাহনে একসঙ্গে আনন্দযাত্রা করে কিংবা সড়কে তারা গাড়ি চালানোর প্রতিযোগিতায় নামেন।
গর্বের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীরা জানাতে দ্বিধা করছেন না যে, পূর্ব লন্ডনের কাঁকরম-িত সড়কে ল্যাম্বরগিনি, ফেরারি ও এমনকি বেন্টলির মতো গাড়ি তারা ভাড়া করেছেন শুধু অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই। কিছুটা সময় স্পটলাইটে থাকার বাসনা পূরণ করতেই তাদের এ ভাবনা। বৃটেনের বাজারে এর একেকটি গাড়ির মূল্য ৩ লাখ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে। অথচ, ওই বরোর কয়েকটি অংশে এক বেডরুমের একটি ফ্ল্যাটের দাম পড়বে ৭০ হাজার পাউন্ড। ন্যাশনাল রেকর্ড অব অ্যাচিভমেন্ট (এনআরএ)-এর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে নিজেদের চোখ ধাঁধাঁনো করেই অন্যদের সামনে উপস্থাপন করতে চান।
সোয়ানলি স্কুলের ছাত্র ফয়জুর রহমান বলছিলেন, এটা মূলত মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। গান বাজানো, এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় গাড়ি হাঁকিয়ে বেড়ানো, সেখান থেকে আরেক এলাকায়। এ বছর স্কুলের সমাপনী ওই অনুষ্ঠানটিতে অংশ নিয়েছিলেন ফয়জুর। এক বন্ধুর সঙ্গে ৪০০ পাউন্ড ভাগাভাগি করে ৪ দিনের জন্য একটি অডি এস৪ ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি বলছিলেন, আপনার গাড়ি দেখানো, সবাই আপনাকে দেখছে। এটা সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে বা স্পটলাইটে থাকার মতো ব্যাপার।
ইব্রাহিম হুসেইন নামে একজন তার ভাইয়ের গাড়ি ভাড়া দেয়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। খ-কালীন কর্মচারী সেখানে চাকরি করছেন। তারা এ ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য গাড়ি ভাড়া দিয়ে থাকেন। ইব্রাহিম বলছিলেন, প্রতিবার যখন এনআরএ আসে, কিশোর-কিশোরীদের জন্য সুখময় উত্তেজনা বোধ করেন। তিনি বলছিলেন, কিছু মানুষ অবশ্যই পয়সা খরচ করতে চান না। আপনি সেটা বুঝতে পারেন। তাদের পিতামাতা হয়তো কোন কাজ করেন না। তবে কিছু কিশোর-কিশোরী বেশ উত্তেজনা বোধ করে। অল্প বয়স থেকেই পয়সা জমাতে শুরু করে তারা এবং গাড়িগুলো ভাড়া নিতে চায়। ইয়ুথ অ্যান্ড কমিউনিটি অর্গানাইজেশন ‘ওসমানি ট্রাস্ট’-এর এক সিনিয়র তরুণ-কর্মী আবদুল হাসনাত। ১৪ বা ১৫ বছর আগে প্রমের মতো উদযাপন শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা সে সময় লিমোজিন ভাড়া করতো। এরপর থেকে আরও দামী গাড়ির প্রতি উৎসাহ তৈরি হয়েছে। তিনি জানাচ্ছিলেন, প্রথমদিকে বেশ অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থীই এ চল শুরু করে। কিন্তু, এখন সম্ভবত শিক্ষার্থীদের ডায়েরিতে ঈদ ও অন্যান্য বিশেষ দিনসহ এ দিনটি সবচেয়ে বিশেষ উপলক্ষ। ১৬ বছর গাড়ি চালানোর জন্য উপযুক্ত বয়স নয়। তাই গাড়ি ভাড়া করার প্রতিষ্ঠান কিংবা বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনের সাহায্য নিয়ে থাকে কিশোর-কিশোরীরা।
কোন কোন টিনএজারের জন্য এতো অর্থ একসঙ্গে যোগাড় করাটা দুরূহ হয়ে পড়ে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ছাড়াও বৃটিশ বা অন্য দেশের শিক্ষার্থীরাও এমন গাড়ি ভাড়া করছেন। সোয়ানলি স্কুলের ছাত্র স্টিফ্যান বোলোম্পা বলছিলেন, প্রথমবার যখন তিনি তার মাকে এতো দাম দিয়ে একটি গাড়ি ভাড়া নেয়ার কথা বলেছিলেন, পরিবারের বাজেটের সঙ্গে তার এ ব্যয়টা একেবারেই সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। শেষ পর্যন্ত একটি চোখ ধাঁধাঁনো একটি গাড়ি তিনি ঠিকই যোগাড় করতে পেরেছিলেন। এ জন্য তার এক বন্ধুর মায়ের ধন্যবাদ প্রাপ্য। বন্ধুটির মায়ের সঙ্গে একটি প্রতিষ্ঠানের জানাশোনার কারণে তিনি একটি রেঞ্জ রোভার স্পোর্টস কার বিনামূল্যে যোগাড় করে দিতে পেরেছিলেন। গাড়িটি পাওয়া তার জন্য বিশাল কোন প্রাপ্তির মতোই ছিল।

No comments

Powered by Blogger.