ক্ষমতার মঞ্চে ফেরার প্রত্যাশায় রাজাপক্ষে

মাহিন্দা রাজাপক্ষের​ বিশাল পোস্টারের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন
এক শ্রীলঙ্কান। গল শহর থেকে শুক্রবার তোলা ছবি। রয়টার্স
ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে। কাল সোমবার দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এবার প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসতে চান দেশটির একসময়ের প্রবল ক্ষমতাশালী এই নেতা। এবার কোনো একক দলের পক্ষে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সম্ভব নয় বলে আভাস মিলছে। আর খোদ প্রেসিডেন্টসহ নানা পক্ষের বিরোধিতায় রাজাপক্ষেরও ক্ষমতার মঞ্চে প্রত্যাবর্তন সহজ হবে না বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। খবর এএফপির। দ্বীপরাষ্ট্রটির নির্বাচনী প্রচারে বড় বড় সমাবেশ করেছেন রাজাপক্ষে। ৬৯ বছর বয়সী এ নেতা এক বিশাল সমাবেশে তাঁর ফিরে আসার চেষ্টার পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, ‘এখন যারা ক্ষমতায় আছে, তারা যদি ভালোভাবে সবকিছু চালাত, তবে আমি অবসরই নিতাম। তবে তাদের একের পর এক ভুল দেখে আমি রাজনীতিতে ফিরতে একরকম বাধ্য হয়েছি।’ রাজাপক্ষে প্রায় এক দশক ধরে ক্ষমতায় ছিলেন। গত ৮ জানুয়ারির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবাইকে বিস্মিত করে তিনি হেরে যান নিজ দল ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্সের (ইউপিএফএ) সাধারণ সম্পাদক মাইথ্রিপালা সিরিসেনার কাছে। সিরিসেনা এর আগ পর্যন্ত একজন মন্ত্রী ও রাজাপক্ষের ঘনিষ্ঠ সহযোগীই ছিলেন। দীর্ঘ ৩৭ বছরের তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী লড়াই অবসানে সাফল্যের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলি জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখনো রাজাপক্ষের জনপ্রিয়তা রয়েছে।
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজাপক্ষের চরিত্রের মধ্যে বিভক্তির যে বৈশিষ্ট্য আছে, সেটির বিবেচনায় তাঁর পক্ষে কোনো জোট সরকার করা সম্ভব হবে না। বর্তমান পরিস্থিতি এমন যে, যিনিই নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হতে চান, তাঁকে অন্য দলের সহায়তা নিতেই হবে। এবার কোনো দলের পক্ষে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। লন্ডনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা চাথাম হাউসের চেয়ারম্যান চারুলতা হোগ বলেন, ‘রাজনীতিতে রাজাপক্ষের প্রত্যাবর্তন শ্রীলঙ্কার জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। তামিল ও মুসলিমদের কাছে তিনি অভিশাপস্বরূপ আর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের উজ্জ্বল উদাহরণ।’ সিংহলিদের ব্যাপক সমর্থন, নির্বাচনী সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগমের পরও রাজাপক্ষের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে আরও বাধা আছে। প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা এখন ইউপিএফএ জোটের প্রধান। রাজাপক্ষের প্রার্থিতার বিষয়ে তিনি মোটেও রাজি ছিলেন না। নতুন সরকার গঠনের জন্য সিরিসেনা বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিঙ্গের ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টিকে (ইউএনপি) বেছে নেবেন বলে মনে করা হয়। সম্প্রতি সিরিসেনা এক সমাবেশে বলেই ফেলেন, ‘৮ জানুয়ারির নির্বাচনের নীরব বিপ্লবকে রক্ষা করুন।’ তাঁর কথায় বিশ্লেষকেরা রনিলকে সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত খুঁজে পান। বিরোধীরা বলছেন, ভবিষ্যতে মামলায় জড়ানোর ভয় থেকেই রাজাপক্ষে আবার রাজনীতিতে নেমেছেন। ক্ষমতা যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রী এবং দুই ভাই দুর্নীতির মামলায় ফেঁসেছেন। এক ছেলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। চাথাম হাউসের চারুলতা হোগ বলেন, নিজেকে বাঁচানোর জন্যই রাজাপক্ষে নির্বাচনে নেমেছেন। জনসংখ্যা: ২ কোটি ৩ লাখ ২০ হাজার। সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগত সিংহলি (৭৪.৯%) সংখ্যালঘু তামিল (১৫.২৬%) ভোটার: দেড় কোটি। ১৮ বছরের বেশি বয়সীরা ভোটার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান: প্রেসিডেন্ট প্রত্যক্ষ নির্বাচনে পাঁচ বছর করে দুই মেয়াদে নির্বাচিত হতে পারেন। আলাদাভাবে ২২৫ সদস্যের আইনসভা নির্বাচন হয়।

No comments

Powered by Blogger.