পান্থপথ–ফার্মগেট সড়ক: রাস্তা–ফুটপাত দখল করে রিকশার অবৈধ গ্যারেজ by মোছাব্বের হোসেন

গ্রিন রোডের ফুটপাতটি দখল করে তৈরি হয়েছে
রিকশার গ্যারেজ। রিকশা মেরামতের জায়গা
হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হচ্ছেl -মনিরুল আলম
রাজধানীর পান্থপথ থেকে ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা হলে যাওয়ার পথে হাতের ডান দিকের সড়ক ও ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে রিকশার অবৈধ গ্যারেজ। এতে এই রাস্তায় তীব্র যানজট হচ্ছে। দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের।
স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, জনগণের ভোগান্তিকে তোয়াক্কা না করে সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে রাস্তা-ফুটপাত দখল করে রিকশা গ্যারেজ তৈরি করে চাঁদা তোলা হয়।
সরেজমিনে গত বুধবার সকালে দেখা গেছে, পান্থপথ থেকে ফার্মগেটে যাওয়ার ডান দিকের এই সড়ক-ফুটপাত পুরোটাই দখল। প্রায় ৩০০ রিকশা নিয়মিত এখানে রাখা হচ্ছে। ফুটপাতে রিকশা রাখার পর আর অবশিষ্ট জায়গা না থাকায় সড়কের ওপরেও রিকশা সারি করে রাখা হয়েছে। রাস্তার ওপর কিছুদূর পরপর রিকশার মিস্ত্রি সরঞ্জাম নিয়ে বসে মেরামতের কাজ করছেন। এর ফাঁকে ফাঁকে ফুটপাতের ওপরেই বসেছে চায়ের দোকান। ফলে ওই ফুটপাত দিয়ে পথচারীদের চলার জায়গা নেই, এমনকি রাস্তারও অনেকটা অংশ দখলে। এর ফলে সড়ক সংকীর্ণ হয়ে গেছে, সারা দিন যানজট লেগেই আছে।
কিন্তু সন্ধ্যার পরের চিত্র আরও কিছুটা ভিন্ন। সরেজমিনে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর রিকশাচালকেরা রিকশা জমা দিতে আসেন, রাত যত বাড়তে থাকে, রিকশার সংখ্যাও বাড়তে থাকে। তখন আরও বেশি অংশজুড়ে এই দখল ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পর মাদকসেবীরা দাঁড় করিয়ে রাখা সেই সব খালি রিকশায় বসে গাঁজা সেবন ও মাদক গ্রহণ করে। এই রাস্তায় রাত গভীর হলে ছিনতাইয়ের অভিযোগও রয়েছে।
এই পথে নিয়মিত যাতায়াত করেন মো. আলম। তিনি বলেন, ‘ফুটপাত তো দখল হয়েছেই, রাস্তাও দখল। বাধ্য হয়ে বাঁ দিকের ফুটপাত দিয়ে চলি। এভাবে দখল করে রিকশার গ্যারেজ হয় কীভাবে? নিশ্চয় কারও ব্যাকআপ আছে ওদের।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এখানে রিকশার গ্যারেজে বিল্লাল হোসেন ওরফে কালাম, লিটন, এরশাদ, সুলতানসহ আরও কয়েকজনের প্রায় ৩০০ রিকশা আছে। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে এঁদের চারজনের কথা হয়। এখানে রিকশার অবৈধ গ্যারেজ স্থাপনের কথা তাঁরা প্রত্যেকেই স্বীকার করেছেন। তাঁদের ভাষ্য, তাঁদের কোনো গ্যারেজ না থাকায় তাঁরা এখানে গ্যারেজ বানিয়েছেন। রাস্তার ওপরই মেরামত করার কাজ সারেন তাঁরা। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, প্রতিটি রিকশা রাখার জন্য দৈনিক ১২ টাকা দিতে হয়। এই হিসাবে ৩০০ রিকশার জন্য দৈনিক এখান থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা ওঠে। মাসে এই টাকা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। আবদুল্লাহ নামের একজন এই চাঁদা নেন। যিনি নিজেকে এই এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছের লোক আর ক্ষমতাসীন দলীয় কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন। চাঁদা তোলার বিষয়ে কথা বলতে চাইলে আবদুল্লাহ এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
গ্যারেজের সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়। সেখানের কর্মকর্তারাও এই গ্যারেজের কারণে বিরক্ত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনজন কর্মকর্তা জানান, এখান দিয়ে আসতে উল্টো পথের রাস্তা ও ফুটপাত ব্যবহার করতে হয়। গাড়ি নিয়ে প্রবেশে সমস্যা হয়। এর নিয়ন্ত্রণে দলীয় লোক থাকায় প্রতিবাদ করা যায় না।
কয়েকজন রিকশাচালক নিয়মিত এখান থেকে রিকশা নেন। তাঁরা বলেন, প্রতিটি রিকশা সকাল ছয়টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নিলে জমা দিতে হয় ১০০ টাকা। ফার্মগেটের আশপাশের এলাকায় তাঁরা এই রিকশা চালান। তাঁরাও স্বীকার করেন, এখানে রিকশা থাকার কারণে তাঁদেরও বাড়তি যানজটে পড়তে হয়।
এই এলাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর জোন ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ফোন ধরেননি।
দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে এই জোনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি এই জোনে কয়েক দিন আগে যোগ দিয়েছেন। তবে ফুটপাত দখলের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

No comments

Powered by Blogger.