দুই শিশুকে দড়ি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন

এভাবে দড়ি ও শিকল দিয়ে বেধে রাখা হয় দুই শিশুকে।
১৬ জুলাই সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার
জয়নগর গ্রামের ঘটনা এটি। ছবি: সংগৃহীত
সরকারি রাস্তায় খেজুরের কাঁটা দিয়ে তৈরি বেড়া ভেঙে ফেলায় দুই শিশুকে দড়ি ও শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ি ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে ১৬ জুলাই বৃহস্পতিবার। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ গোলাম মোস্তফা মোড়ল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে গতকাল বুধবার।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জয়নগরে গোলাম মোস্তফা মোড়লের বাড়িতে যাতায়াতের জন্য সরকারি সড়কে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সম্প্রতি মাটি ফেলা হয়। বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাবে—এ অজুহাতে গোলাম মোস্তফা মোড়ল ওই সড়কে খেজুরের কাঁটা দিয়ে বেড়া দিয়ে রাখেন।
১৬ জুলাই সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে গ্রামের আবদুল হামিদ তরফদারের ছেলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র নাছিম তরফদার (৯) ও প্রতিবেশী ইসমাইল তরফদারের ছেলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ইয়াছিন তরফদার (৮) ওই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় খেজুরের কাঁটা তাদের গায়ে লাগে। নির্যাতনের শিকার শিশু নাছিম ও ইয়াসিন গতকাল প্রথম আলোকে জানায়, তারা ওই বেড়া তুলে ফেলে দেয়। এর পরপরই গোলাম মোস্তফা মোড়ল তাদের ধরে নিয়ে এসে প্রথমে দুই হাত বেঁধে তাঁর বাড়ির ভেতরে নিয়ে যান। পরে শিকল দিয়ে পা বেঁধে ও সারা শরীর দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। সকাল সাতটা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাদের বেঁধে রাখা হয়। এ সময় পানি চাইলেও দেওয়া হয়নি।
দুজনই জানায়, পানি খেতে চাইলে পচা শামুক তাদের মুখের মধ্যে ভরে দেওয়া হয়। তাদের মারধরও করা হয়।
ওই দিন (১৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুই শিশুর নির্যাতনের ঘটনা জানতে পেরে নাছিমের দাদি সবজান্নেছা যান গোলাম মোস্তফার বাড়িতে। তিনি শিশুদের ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। সবজান্নেছা বলেন, ‘এ সময় গোলাম মোস্তফার স্ত্রী মাহফুজা মারধর করে আমাকে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে নাছিমের মা এসে কান্নাকাটি করার একপর্যায়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গোলাম মোস্তফা মোড়লের ছেলে গোলাম হোসেন তাদের বাঁধন খুলে দিয়ে গালিগালাজ করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।’
জানতে চাইলে গোলাম মোস্তফা মোড়ল বলেন, ‘বর্ষার সময় লোকজন চলাচল করলে সড়ক নষ্ট হয়ে যাবে এ কারণে বেড়া দিয়ে রেখেছিলাম। ওই ছেলে দুটো দুষ্টামি করে বেড়া তুলে দেওয়ায় বেঁধে রেখেছিলাম। মারধর করিনি।’
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, গতকাল এ বিষয়টি জানতে পারার পরপরই গোলাম মোস্তফা মোড়লকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিশু নাছিমের পিতা আবদুল হামিদ তরফদার বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.