সালাহ উদ্দিনের বিচার শুরু, নির্দোষ দাবি- ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগ by রাহীদ এজাজ

আদালতের পথে সালাহ উদ্দিন আহমদ l ছবি: প্রথম আলো
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদ গতকাল বুধবার শিলংয়ের আদালতে হাজির হয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অনুপ্রবেশের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এখানকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠনের শুনানির সময় তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
এর ফলে সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ভারতের ফরেনার্স অ্যাক্ট, ১৯৪৬ অনুযায়ী, অনুপ্রবেশের মামলার বিচারে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে। আদালত ৩০ জুলাই মামলার শুনানির জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।
গতকাল বুধবার দুপুরে শিলংয়ের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের মুখ্য বিচারক কে এম লিংদো নংব্রির আদালতে শুনানি শেষে সরকারপক্ষের আইনজীবী আই সি ঝা ও সালাহ উদ্দিন আহমদের আইনজীবী এইচ আব্রাহাম প্রথম আলোকে তাঁদের দপ্তরে এ তথ্য জানান।
শুনানির পর সালাহ উদ্দিন আহমদ আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ আদালতে আমার বিরুদ্ধে ভারতে অনুপ্রবেশের মামলার অভিযোগপত্র গঠন করা হয়েছে। বিচারক স্বাভাবিকভাবে অভিযোগপত্র গঠনের সময় জানতে চেয়েছেন, আমি দোষী কি না। আমি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছি।’
শুনানিতে উপস্থিতির জন্য গতকাল সকালে সালাহ উদ্দিন আহমদ আইনজীবীদের নিয়ে আদালতে যান। কিন্তু মামলার জট থাকায় দুপুরে শুনানি হয়। এই আদালত থেকে জামিন নিয়ে শিলংয়ের একটি কটেজে রয়েছেন তিনি।
সালাহ উদ্দিনের আইনজীবী এইচ আব্রাহাম আদালত চত্বরে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার মক্কেল তাঁর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এখন তাঁর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে।’
জানতে চাইলে সরকারপক্ষের আইনজীবী আই সি ঝা বিকেলে আদালত এলাকায় তাঁর দপ্তরে প্রথম আলোকে বলেন, সালাহ উদ্দিন আহমদ নিজেকে নির্দোষ দাবি করায় ৩০ জুলাই থেকে অনুপ্রবেশের মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে।
ফরেনার্স অ্যাক্ট, ১৯৪৬-এর ১৪ ধারা সম্পর্কে জানতে চাইলে আই সি ঝা বলেন, এই ধারাতে অনেকগুলো উপ-ধারা রয়েছে। সালাহ উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া তাঁকে ভারতের ভূখণ্ডে পাওয়া গেছে। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, অনুপ্রবেশের মামলায় সাধারণত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী কিংবা নির্দোষের সপক্ষে বলার সুযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগপত্র দাখিল করেই কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় না। কেউ দোষ স্বীকার করলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তির বিষয়টি সামনে চলে আসে। কেউ যদি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন, তাহলে সাক্ষীর উপস্থিতিতে তাঁকে আদালতে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে সেটি প্রমাণ করতে হবে।
এই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পি লামারেসহ ১১ সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হবে। ১১ জনের মধ্যে ছয়জন চিকিত্সকও আছেন, যাঁরা শিলংয়ের বিভিন্ন হাসপাতালে সালাহ উদ্দিনের চিকিত্সা করেছেন।
বিনা পাসপোর্টে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
গত মার্চের শুরুতে উত্তরা থেকে অপহৃত হন বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব। এর প্রায় আড়াই মাস পর ১১ মে ভোরে শিলংয়ের গলফ লিংক এলাকায় উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরির সময় লোকজনের ফোন পেয়ে পুলিশ সালাহ উদ্দিন আহমদকে আটক করে। এরপর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে পাস্তুর পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। পরে তাঁর প্রাথমিক স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য নেওয়া হয় সেখানকার সিভিল হাসপাতালে। এরপর শিলং সদর থানা হয়ে নেওয়া হয় মানসিক হাসপাতাল মিমহানসে। এক দিন পর মিমহানস থেকে আবার তাঁকে পাঠানো হয় সিভিল হাসপাতালে। ২০ মে সিভিল হাসপাতাল থেকে নেগ্রিমসে নেওয়া হয়। নেগ্রিমস হাসপাতালের চিকিত্সকদের ছাড়পত্র পাওয়ার পর পুলিশ ২৬ মে তাঁকে শিলং সদর থানা হেফাজতে নিয়ে যায়।

No comments

Powered by Blogger.