দুই ঘণ্টা পর পানির নিচ থেকে জীবিত উদ্ধার!

রাজশাহীতে একটি সেতুর নিচে পানিতে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে আটকে থাকা এক কিশোরকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরের দিকে তানোর উপজেলার নড়িয়াল গ্রামে অস্বাভাবিক এই ঘটনাটি ঘটে। নড়িয়াল গ্রামের ওই কিশোরের নাম ওমর ফারুক (১৪)। বাবার নাম সনেট আলী। স্থানীয় বনগাঁ চকরহমতপুর উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র সে।
দুই ঘণ্টা পানির নিচে থেকে বেঁচে ফেরা ফারুক বলে, ‘যখন পানির নিচে আটকিয়ে ছিলাম, শুধু "আল্লাহ" "আল্লাহ" করছি। যখন পানি থেকে ওপরে উঠি, মনে হইছে নতুন জীবন পাইলাম।’
ফারুককে পানির নিচ থেকে উদ্ধারকারীদের একজন কৃষক জাহিদুল ইসলাম (৪০) জানান, গ্রামের ভেতরেই জোলাঘাটি খাঁড়ির ওপর কয়েক বছর আগে প্রথমে ছোট একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে সেটির পাশে নতুন করে আরেকটি উঁচু সেতু করা হলে আগের সেতুটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
তাঁর ভাষ্য, দুপুর একটার দিকে অন্য বন্ধুদের সঙ্গে পাশের উঁচু সেতু থেকে পানিতে লাফ দেয় ফারুক। অন্যরা ওপরে উঠে এলেও কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যার স্রোতের টানে ছোট সেতুর নিচের গর্তে আটকা পড়ে যায় সে। বন্ধুদের কাছ থেকে খবর শুনে অনেকের মতো তিনিও দৌড়ে যান সেখানে। ফারুকের বাবা-মায়ের আহাজারি দেখে তিনি পানিতে নামেন। কিন্তু স্রোতের তোড়ে কিছুতেই ছোট সেতুটির ওপরে উঠতে পারছিলেন না। পরে শরিফ ও সুমন নামের অপর দুই যুবক ছোট সেতুর ওপর উঠতে সক্ষম হলে তাঁদের এগিয়ে দেওয়া একটি বাঁশ ধরে তিনিও সেতুটিতে ওঠেন। এরপর তাঁরা ওই বাঁশের সঙ্গে দড়ি বেঁধে সেতুর নিচে ঢুকিয়ে দেন।
জাহিদুল বলেন, ‘দড়িসহ বাঁশটি সেতুর নিচে দেওয়ার সময় আশা ছিল বেঁচে থাকলে ফারুক বাঁশটি ধরবে। প্রথমবার দেওয়ার পর সে ধরেছেও। কিন্তু টান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি ভেঙে যায়। মোটামুটি পাঁচ হাত লম্বা বাঁশের ওই ভাঙা অংশ আবার সেতুর নিচে ঢুকিয়ে দেওয়ার পর ফারুক সেটি ধরে। তারপর বেলা তিনটার দিকে তাকে টেনে ওপরে তোলা হয়।
যানবাহন চলাচল না করলেও ছোট সেতুটি অপসারণ না করায় সেটি এলাকার মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাহিদুল। কয়েক দিন আগে প্রবল স্রোতে সেতুটির নিচে আটকা পড়ে একটি মহিষ মারা গেছে বলেও জানান তিনি।
পানির নিচে কীভাবে এত সময় ছিলে — এ প্রশ্নের উত্তরে ফারুক প্রথম আলোকে বলে, স্রোতের পাকের সঙ্গে সারাক্ষণই সেতুর নিচে বুদ্‌বুদ ঢুকছিল। তা থেকেই সে দম নেওয়ার প্রয়োজনীয় বাতাস পেয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.