‘তোর বাসার ফ্ল্যাটে লাশ পড়ে আছে, গিয়ে দেখ’ by ওয়েছ খছরু

গ্রেপ্তারকৃত কেয়ারটেকার আবদুল কাদির
‘তোর বাসার ফ্ল্যাটে লাশ পড়ে আছে, গিয়ে দেখ।’ এ কথা বলেই ফোন কল কেটে দেয় ভাড়াটে মিজান। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। কে এই মিজান-  সেটিও বাসার তদারক আবদুল কাদির সঠিকভাবে জানাতে পারেননি। এ কারণে পরিচয়হীন ওই তরুণীর লাশ পড়ে আছে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমাগারে। পুলিশ বলছে, পলাতক থাকা মিজানকে গ্রেপ্তার না করলে ওই তরুণীর পরিচয় পাওয়া সম্ভব নয়। তবে তাকে খুন করার পর মিজার পালিয়ে গেছে। তবে, পুলিশ ভাড়াটের সন্ধান পেতে গ্রেপ্তার করেছে বাসার তদারক আবদুল কাদিরকে। আবদুল কাদির পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের আগে সাংবাদিকদের জানিয়েছিল, প্রায় ১৫ দিন আগে মিজানের ফ্ল্যাটে ওই তরুণী এসেছিল। তবে, তিনি তার পরিচয় জানেন না। এদিকে, করেরপাড়ার একটি ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাতনামা তরুণীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার রাতে জালালাবাদ থানার এসআই প্রদীপ সরকার বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত করেরপাড়ার সুফিয়া মঞ্জিল মোহনা বি-৩৮/১ নম্বর ৫ম তলা ফ্ল্যাট বাড়ির  কেয়ারটেকার আবদুল কাদিরকে রোববার পুলিশ ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে হাজির করে। পরে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। ধৃত কাদির বিশ্বনাথ উপজেলার  গোয়াহরি গ্রামের মৃত চমক আলীর পুত্র। স্থানীয়রা জানান, টমটমচালক পরিচয় দিয়ে মিজান নামের এক ব্যক্তি ওই  ৫ তলা বিল্ডিংয়ের ৪র্থ তলার ৪০১ নং ফ্ল্যাটে ভাড়া হিসেবে তার স্ত্রী-সন্তানসহ বসবাস করে আসছিলেন। গত মাসের ১৫ তারিখে ওই বাসায় এসে অজ্ঞাত পরিচয় এক তরুণী থাকতো। গত ২৯শে  মে সন্ধ্যার সময় ভাড়াটে মিজান স্ত্রী-সন্তান মার্কেটে যাওয়ার কথা বলে কেয়ারটেকার কাদিরকে বলে বের হয়ে যান। রাত ১০ টার দিকে মিজান কাদিরকে মুঠোফোনে জানান, ‘তারা রাতে বাসায় ফিরবেন না’। পরদিন সকাল ৮ টার দিকে মিজান কেয়ারটেকার কাদিরকে আবারও ফোনে জানায়, ‘তোর বাসার ফ্ল্যাটে লাশ পড়ে আছে, গিয়ে দেখ।’ এ খবর পেয়ে বাসার তদারক আবদুল কাদির ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখতে পান দরোজা খোলা। ফ্ল্যাটের ভেতরে উত্তর পশ্চিম কোনের রুমে খাটের উপরে একজন অজ্ঞাতনামা তরুণীর লাশ পড়ে আছে। পরে কাদির বাসার লন্ডন প্রবাসী মালিকের স্ত্রীসহ ঘটনাটি অন্যান্য লোকজনকে জানান। পরে ঘটনার খবর পেয়ে জালালাবাদ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে অজ্ঞাতনামা পরিচয় যুবতীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। মামলার বাদী জালালাবাদ থানার এসআই প্রদীপ সরকার জানান, সুরতহাল প্রস্তুতের সময় লাশের গলায় জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এতে পুলিশের ধারণা করছে, অজ্ঞাত যুবতী পরিবারের কেউ হবেন। তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে অন্যরা পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ ভাড়াটে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে বাড়ির কেয়াটেকার আবদুল কাদিরকে আটক করেছে। সিলেটের জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ময়নাতদন্ত শেষে নিহত তরুণীর লাশ সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মরচ্যুয়ারিতে রাখা হয়েছে। কোন স্বজনের সন্ধান পেলে তাদের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করা হবে। আর আবদুুল কাদিরের মুঠোফোনটি এ হত্যাকাণ্ডের আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের ক্লু-উদঘাটনের তদন্ত চলছে। এদিকে, স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন, বেনামে অনেকেই এসে ওই এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে অপরাধ কর্ম সংগঠিত করে। আর অপরাধ সংগঠনের পর তারা গোপনে চলে যায়। এ ব্যাপারে তারা স্থানীয় পুলিশের সহায়তা কামনা করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.