অস্থায়ী পাঠশালায় পাঠদান শুরু

ভয়াল ভূমিকম্পের ধকল কাটিয়ে অবশেষে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরছে নেপাল। ৩৫ দিন বন্ধ থাকার পর দেশটির হাজারও বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ আবারও মুখরিত হল শিশুদের প্রাণবন্ত পদচারণায়। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হাজার হাজার স্কুলে সীমিত আকারের পাঠ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। নেপালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লাভেদও অবস্তি বলেন, অস্থায়ী ক্লাস রুমগুলোতে আগামী দু’বছর পর্যন্ত ক্লাস চলবে। নতুন স্কুল ভবন নির্মাণের পর পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, শিশুদের বেশিক্ষণ বিদ্যালয়ে ধরে রাখা হবে না। মূলত খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যেই শিশুদের শিক্ষাগত কার্যক্রম সীমিত রাখা হবে। শিশুদের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে ধাঁধা এবং ছবির বইসহ নানা বিনোদনমূলক শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করেছে জাতিসংঘ। গত ২৫ এপ্রিল ৭ দশমিক ৯ মাত্রার প্রলয়ংকরী ভূমিকম্প এবং এরপর থেকে ধারাবাহিক মৃদু থেকে শক্তিশালী ভূকম্পনে দেশটির প্রায় ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং বিধ্বস্ত হয়েছে ২৫ হাজারেরও বেশি শ্রেণীকক্ষ। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নতুন করে কাজ শুরু করেছে বাঁশ, কাঠ ও তারপুলিনের মতো নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহারের মাধ্যমে অস্থায়ী ভিত্তিতে। বিবিসি জানিয়েছে, দুর্যোগ-পরবর্তী মানসিক আঘাত থেকে শিশুদের বের করে নিয়ে আসার জন্য দলবদ্ধ কাজের ওপর প্রাথমিক পর্যায়ে গুরুত্ব দেয়া হবে। রাজধানী কাঠমান্ডু এবং এর আশপাশের জেলাগুলোতে মে মাসজুড়ে সব বিদ্যালয় বন্ধ রেখেছিল নেপাল সরকার। ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গোর্খা, সিন্ধুপালচক এবং নুয়াকোটে ৯০ শতাংশেরও বেশি বিদ্যালয় ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। ২৫ এপ্রিল আঘাত হানা ভূমিকম্পে স্কুলগুলো ধ্বংস বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর অনেক শিশু খেলার মাঠে বাঁশের তৈরি অস্থায়ী শ্রেণীকক্ষ বা তাঁবুতে শিক্ষা গ্রহণ করছে। ৮ বছর বয়সী সহজ শ্রেষ্ঠা তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে হেঁটে হেঁটে রাষ্ট্র পরিচালিত মদন স্মারক স্কুলে প্রবেশ করে। স্কুলটি কাঠমান্ডু উপত্যকায় অবস্থিত।
তার মা মিনা শ্রেষ্ঠা বলেন, ভূমিকম্পে তাদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তারা তাঁবুতে বাস করার পর থেকে ছেলেটি তাদের কাছ থেকে দূরে থাকতে এমনকি শৌচাগারে যেতেও ভয় পায়। তিনি আরও বলেন, ‘ভূমিকম্প-পরবর্তী কম্পন এখনও চলছে। তাদের স্কুলে পাঠিয়ে আমরা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘তবে শিক্ষকরা সেখানে শিশুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করেছে। তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে এবং পুনরায় লেখাপড়া শুরু করলে অন্তত তার মন কিছুটা হলেও ভালো হয়ে যাবে।’ স্কুলের খেলার মাঠে বাঁশ দিয়ে শ্রেণীকক্ষ তৈরি করা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়াররা ভূমিকম্পের পর যেসব ভবনকে ‘নিরাপদ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সেখানেও কিছু ক্লাস হচ্ছে। শিশুরা ছবি আঁকা ও খেলার সময় শিক্ষকরা তাদের পাশে বসে থাকেন। নয় বছর বয়সী মুসকান বজ চারিয়া বলে, ‘আমরা দীর্ঘদিন বাড়িতে ছিলাম। এখন আমার বন্ধুদের সঙ্গে আবার খেলাধুলা করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।’ উচ্চ শ্রেণীগুলোর ছাত্রছাত্রীরা ভূমিকম্পের সময় তাদের পরিবারের কি অবস্থা হয়েছিল বন্ধুদের কাছে তা বর্ণনা করে। শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক দিল্লি রামরিমাল আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও স্কুল খুলবে বলে আশা করছেন। এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.