অভিবাসীদের দ্বীপে সাংবাদিক ঢুকতে দিচ্ছে না মিয়ানমার

সাগরে ভাসমান ৭ শতাধিক অভিবাসীকে উদ্ধারের পর তাদের জনমানবহীন যে দ্বীপটিতে রাখা হয়েছে সেখানে সাংবাদিক প্রবেশ করতে দিচ্ছে না মিয়ানমার নৌবাহিনী। গত সপ্তাহে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ৭৪ নারী ও ৪৫টি শিশুসহ মালয়েশিয়াগামী ৭২৪ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে সাগর থেকে উদ্ধারের ঘোষণা দেয়। এরপর থেকেই ইরাওয়াদ্দি নদীর মোহনায় অবস্থিত থামি হ্লা নামের ওই দ্বীপটিতে প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন সাংবাদিকরা।
সাংবাদিকরা ছোট ছোট নৌকায় করে থামি হ্লা দ্বীপে প্রবেশের চেষ্টা করলে মিয়ানমার নৌবাহিনীর টহল সেনারা তাদের গতিরোধ করে ফেরত পাঠায়। এমনকি সাংবাদকিদের ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজগুলোও মুছে ফেলতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে জানান পার্শ্ববর্তী দ্বীপ হায়ইগায়িতে অবস্থান করা বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদক। এছাড়া ফিরে আসা সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, আসার সময় তাদের কাছ থেকে পুনরায় ওই দ্বীপে প্রবেশের চেষ্টা না করার প্রতিশ্র“তি সংবলিত দলিলপত্রেও জোর করে স্বাক্ষর রাখা হয়েছে! নোবেলজয়ীদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান : মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যার মতো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে বলে নোবেল বিজয়ীদের করা মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটির সরকার। তাদের দাবি, সরকার রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মধ্যে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। খবর এপির। মিয়ানমারের পত্রিকায় রোববার প্রকাশ হওয়া দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ ধরনের ভারসাম্যহীন ও নেতিবাচক মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করছে মিয়ানমার সরকার। এর আগে একদল নোবেল বিজয়ী এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চালানো অত্যাচার গণহত্যার চেয়ে কম নয় বলে উল্লেখ করে। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ডেসমন্ড টুটু, ইরানের শিরিন এবাদি ও পূর্ব তিমুরের সাবেক প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা রয়েছেন।
নোবেল বিজয়ীদের বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে পাল্টা বিবৃতি দেয়া হল। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, একচোখা হয়ে এ ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মধ্যে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে মিয়ানমার সরকার। জাতীয়ভাবে নিরীক্ষার মাধ্যমে মিয়ানমারে অনেকদিন ধরে বসবাস করা ‘বাঙালিদের নাগরিকত্ব মঞ্জুর করা হবে’। মিয়ানমারে বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম রয়েছে। দেশটির বাইরে রয়েছে আরও প্রায় ১০ রোহিঙ্গা। দেশটির সরকার হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করে না। তাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। রাখাইন রাজ্যে বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা। ২০১২ সালে এ ধরনের এক দাঙ্গায় হাজারও রোহিঙ্গা নিহত ও দেড় লাখ গৃহহীন হয়। এ ঘটনার পর থেকে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার আহ্বান জানালেও মিয়ানমার সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে। সম্প্রতি আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগরে মানবপাচারকারীদের নৌকায় ভাসমান অবস্থায় কয়েক হাজার রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশীর সন্ধান পাওয়া যায়। এছাড়া থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় বিদেশ গমনেচ্ছুদের নির্যাতন শিবির এবং লাশ পাওয়ার ঘটনায় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার বিষয়টি আবারও উঠে এসেছে।

No comments

Powered by Blogger.