মুনের দেখে যাওয়া সেই ক্লিনিক by মাসুদ আহমদ

মোবারকপুর কমিউনিটি ক্লিনিক। জাতিসংঘের মহাসচিব এই ক্লিনিক পরিদর্শন করে যাওয়ার পর সেবা ভোগকারী মানুষের দৃষ্টি পড়েছে। বাড়ছে সেবার চাহিদা। কমিউনিটি হেল্‌থ কেয়ার প্রোপাইটার ও স্বাস্থ্য বিভাগের অন্য কর্মীরা সাধ্য অনুযায়ী সেবা দিচ্ছেন। এখন এলাকার মানুষের দাবি এই ক্লিনিকে যদি একজন এমবিবিএস পাস ডাক্তার সপ্তাহে দুই বা একদিন বসতেন এলাকার মানুষ আরেকটু সেবা পেতেন।
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার টিলাগাঁও ইউনিয়নে অবস্থিত মোবারকপুর কমিউনিটি ক্লিনিক। জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে মাতৃ ও নবজাতক স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক। গত ২০১১ সালের ১৭ই জুলাই বিনা অস্ত্রোপচারে মোবারকপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে পাল্লারকান্দি গ্রামের পিয়ারন বেগমের শিশুপুত্রের জন্ম হয়। অল্প সুযোগ নিয়ে গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত এই ক্লিনিকে বিনা অস্ত্রোপচারে শিশু এমরান (পিয়ারা বেগমের শিশুপুত্র)-এর জন্মকাহিনী এবং ক্লিনিকের সেবার কথা ছড়িয়ে পড়ে। বিনা অস্ত্রোপচারে পিয়ারা বেগমের ডেলিভারি করান স্বাস্থ্য সহকারী রেহানা বেগম। বিষয়টি  পৌঁছে যায় জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে। ২০১১ সালের ১৫ই নভেম্বর জাতিসংঘের মহাসচিব সস্ত্রীক দেখতে আসেন এই কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম। ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে কুলাউড়া উপজেলার সালন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এসে নামেন মুন ও তার সফরসঙ্গীরা। সেখান থেকে সড়ক পথে ৬ কিলোমিটার দূরের কমিউনিটি ক্লিনিকে যান। সেদিন সেই ক্লিনিকের সীমানায় প্রবেশ করেই বসে থাকা ১৫ কিশোরীর দিকে এগিয়ে যান এবং তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। মহাসচিব বান কি-মুন ও তার স্ত্রী মোবারকপুর কিশোরী ক্লাবের সদস্য আকিলা, রাখিলা, শিউলি, নিলা দাশের সঙ্গে চাটাইয়ে বসে স্বাস্থ্য বিষয়ে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন। কথা বলেন। মুগ্ধ হন ক্লিনিকের কার্যক্রম দেখে। এই প্রকল্পে অর্থ বাড়ানোর কথা বলেন এই সময়।
সরজমিন দেখা যায়, ক্লিনিকের বাউন্ডারি দেয়ালের গেইটের কাছে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুনের রোপণ করা পামগাছ শাখা মেলেছে, ইটের নিরাপত্তা দেয়াল  ছেড়ে উপরে উঠে এসেছে পাম গাছের শাখা। ক্লিনিকে বসে সেবা নিতে আসা রোগীদের সমস্যা শুনছিলেন এবং ওষুধ দিচ্ছিলেন কমিউনিটি হেল্‌থ কেয়ার প্রোপাইটার সামছুন বেগমের কাছে। সামছুন বেগম জানালেন জাতিসংঘের মহাসচিব দেখে যাওয়ার পর এই ক্লিনিকের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়ে গেছে। রোগীর চাপও বাড়ছে। সেবা দেয়া হয় সাধ্যমতো। ক্লিনিকে সাধারণ রোগের ৩০ পদের ওষুধ দেয়া হয়। কথা হয় সেবা নিতে আসা নিপা  বেগম (৩০), জেরিন বেগম (৩৫) ও ছায়মা বেগম (৪০)-এর সঙ্গে। জানালেন জ্বর, সর্দিকাশি, রক্তস্বল্পতা, ডায়রিয়া,  আমাশয় ইত্যাদি রোগেরও ওষুধ দেয়া হয়।
হেল্‌থ প্রোপাইটার সামছুন বেগম আরও জানালেন ২০১১ সালের পর থেকে এই ক্লিনিকে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। এই ক্লিনিকে গত তিন বছরে ১৩৭টি নরমাল ডেলিভারি করানো হয়েছে। এর কারণ হিসেবে তার ব্যাখ্যা হচ্ছে এই ক্লিনিক চালু হওয়ার পর প্রসূতি পূর্ব সেবা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে এমনটি হয়েছে।
সামছুন বেগম আরও বলেন, কোন প্রসূতির জটিলতা দেখা দিলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি গ্রুপ সদস্য আব্দুল জব্বার জানান, জাতিসংঘের মহাসচিব আসার পর থেকে প্রতিবছর তার এখানে আসার দিনকে স্মরণ করে ছোটখাটো অনুষ্ঠান করা হয়। সরকারি কর্মকর্তারাও আসেন। এই ক্লিনিকের কিছু উন্নয়নও করা হয়েছে ইতিমধ্যে। সৌর প্যানেল লাগানো হয়েছে। পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাউন্ডারি ওয়াল করা হয়েছে। একটি কক্ষ বাড়ানো হয়েছে। ডেলিভারি কিড্‌স মিলেছে। এখন আরও অন্তত ২টি কক্ষ নির্মাণ করা প্রয়োজন। রোগীদের ভিড় হলে বসার জায়গা হয় না। কমিউনিটি গ্রুপের সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম জানান, প্রতি কমিউনিটি ক্লিনিকের ৬ হাজার মানুষের সেবা দেয়ার কথা। আমাদের এই ক্লিনিকের সেবা নেন ৮ গ্রামের ১২ হাজারের কাছাকাছি মানুষ। অন্যান্য ক্লিনিকের তুলনায় আমাদের ওষুধ বেশি বরাদ্দ দেয়া হলেও মাস কাভার করা যায় না। আব্দুল জব্বার ও আব্দুস সালাম দুজন জানান, এখন এলাকার মানুষের দাবি এই ক্লিনিকে সপ্তাহে দুই বা একদিন যদি একজন এমবিবিএস ডাক্তার বসার ব্যবস্থা হতো তবে সেবা গ্রহীতারা আরেকটু উপকৃত হতো। জানালেন বিষয়টি বিভিন্ন সময় পরিদর্শনে আসা সরকারি দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে আবদার করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.