থাইল্যান্ডে আরও ৬ মৃতদেহ উদ্ধার

থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের গহিন জঙ্গলে মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছে বুধবার আরও ৬ মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া গেছে। দেশটির শংখলা প্রদেশের প্রত্যন্ত সাদাও এলাকার ওই জঙ্গলে এর আগে ১ মে ২৬ অভিবাসীর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। পাচারকারীদের ভয়াবহ নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করলে ওইসব অভিবাসীর সেখানে গণকবর দেয়া হয়। ওই গণকবরের খুব কাছাকাছি এলাকা থেকে ছয়টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। খবর এএফপি ও ব্যাংকক পোস্টের।
থাইল্যান্ড পুলিশ জানায়, শংখলার ওই গণকবর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে ছয়টি মৃতদেহের সন্ধান পেয়েছে উদ্ধরকর্মীরা। পরে ওইসব দেহাবশেষ উদ্ধারের পর বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন। তবে এখনও মৃতদেহগুলো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
দেশটির জাতীয় পুলিশের মুখপাত্র প্রাউত থাবর্নসিরি সাংবাদিকদের বলেন, ছয় মৃতদেহের মধ্যে দুটি পুরুষের। আর বাকি চারটি নারীর। তারা সবাই মাঝ বয়সী। মঙ্গলবার যে পাঁচটি কবরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল সেখানে গর্ত খুঁড়ে ওইসব দেহাবশেষ উত্তোলন করা হয়। আগের মৃতদেহের মতো এগুলোও বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাদের বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে থাইল্যান্ডে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া পুলিশি অভিযানে সেখানকার অভিবাসীদের মধ্যে হয়রানি ও ধরপাকড়ের আতংক দেখা দিয়েছে। অভিবাসীদের অভিযোগ, পুলিশ নিরীহ লোকদের হয়রানি করছে। অভিবাসীরা তাই ঘর থেকে বের হলে আতংকে থাকেন।
খবরে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাজারে ১০ জন রোহিঙ্গা মুসলিম (বিশেষ করে মিয়ানমারের) দক্ষিণ থাইল্যান্ডে পাচার হয়েছেন। মানব পাচার রোধবিষয়ক সংগঠন ফ্রিল্যান্ড জানায়, সম্প্রতি এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, মানব পাচারকারীরা প্রত্যেক অভিবাসীর কাছ থেকে ৩ হাজার ডলার মুক্তিপণ দাবি করে থাকে। তা দিতে ব্যর্থ হলে তাদের ১ হাজার ডলারে মালয়েশিয়ান কৃষকদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। এ সময় মুক্তিপণ আদায় করতে গিয়ে তাদের ভয়াবহ নির্যাতন করে তারা। তাদের ঠিকমতো খেতে দেয়া হয় না। ফলে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
বন্দিশিবির থেকে পালানো রহিমা : থাইল্যান্ডে পাচারকারীদের বন্দিশিবির থেকে পালিয়ে আসা রহিমা খাতুন দেশটির একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মঙ্গলবার ব্যাংকক পোস্ট অনলাইন তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। রহিমা সংবাদ মাধ্যমটিকে জানান, গহিন জঙ্গলে পাচারকারীদের হাতে এখনও বহু বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা আটক রয়েছেন। তাদের অবস্থা শোচনীয়। ঠিকমতো খাবার পান না তারা।
তিনি জানান, তাকে যে শিবির বা ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছিল সে দলে ৪০০ বন্দি রয়েছেন। তার বেশির ভাগই বাংলাদেশের নাগরিক ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। রহিমা খাতুনের চোখেমুখে এখন আতংক। মানুষ দেখলেই চমকে উঠছেন তিনি। আবার তাকে অপহরণ করা হতে পারে এ ভয়ে তটস্থ’ রহিমা। আশ্বস্ত হওয়ার মতো কাউকে পেলে আকুতি জানাচ্ছেন তাকে বাঁচাতে। বন্দিশিবির থেকে পালিয়ে এখন জীবনের সঙ্গে লড়াই করছেন তিনি। ফেলে এসেছেন তার ১০ বছর বয়সী মেয়েকে। তার ভাগ্যে কি ঘটেছে বলতে পারেন না রহিমা।

No comments

Powered by Blogger.