ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি

ফসলি জমিতে গভীর গর্ত করে পাশের ইটভাটায় মাটি
নেওয়া হয়েছে। এতে ভেঙে যাচ্ছে পাশের ধানি জমি।
ছবিটি গত রোববার চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার
ছড়ারকুল এলাকা থেকে তোলা l প্রথম আলো
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ছড়ারকুলের দুই কিলোমিটার পশ্চিমে পাহাড়ের পাদদেশে ও বসতি এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি ইটভাটা। এই ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য ফসলি জমিতে গভীর গর্ত করে নেওয়া হয়েছে মাটি। এতে আশপাশের ধানি জমি ভেঙে যাচ্ছে।
ইটভাটাটির মালিক হাটহাজারী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোরশেদ আলম চৌধুরী।
গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, ছড়ারকুলের পশ্চিমে পাহাড়ের পাদদেশে আমানত ব্রিকস ইন্ডাস্ট্রিজ (এবিআই) গড়ে তোলা হয়েছে। আশপাশে আরও কয়েকটি ইটভাটা। আমানত ব্রিকস থেকে ৪০০ গজ দূরে একটি বাড়ির পাশে ফসলি জমি। আবুল কালাম ওরফে কালু সওদাগর নামের এক ব্যক্তি তাঁর জমির মাটি আমানত ব্রিকসে বিক্রি করেছেন। মাটি কাটার কারণে আবুল কালামের ১২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮০ ফুট প্রস্থের জমিটি এখন গভীর পুকুরে পরিণত হয়েছে।
কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, গত কয়েক মাসের মধ্যে জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গর্তের দক্ষিণ পাশে মো. আলমগীরের জমি। পশ্চিম পাশে মো. শফির, পূর্বপাশে নুরুল আবছারের ও উত্তর পাশে মো. রুবেলের। পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশের জমি ভেঙে গর্তের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। তা ঠেকাতে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে। ওই বেড়াগুলো নিয়ে জমির কিছু অংশ গর্তের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।
মো. আলমগীরের জমির বর্গাচাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, জমির পাশে গভীর গর্ত না করার জন্য বারবার বলা হলেও মাটিকাটা শ্রমিকেরা শোনেননি। গত কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ায় জমির কিছু অংশ ভেঙে ধানসহ গর্তে পড়ে গেছে। এতে প্রায় আট মণ ধান নষ্ট হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আকাশে মেঘ দেখলে ভয় লাগে। কারণ, বৃষ্টির পানির সঙ্গে ধানসহ জমি ভেঙে মাটি গর্তের মধ্যে পড়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গত ২৪ এপ্রিল ও উপজেলা প্রশাসনে ৩০ এপ্রিল লিখিতভাবে অভিযোগ করা হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিষয়টি তদন্তের জন্যও কেউ ঘটনাস্থলেও আসেননি।
ইটভাটার মালিক মোরশেদ আলম চৌধুরী জানান, জমির মালিক মাটি বিক্রি করায় তাঁরা কিনেছেন।
একাধিকবার চেষ্টা করেও ইটভাটায় মাটি বিক্রিকারী আবুল কালামের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তাঁর ছেলে মো. রুবেল জানান, মাছ চাষ করার জন্য তাঁরা ইটের ভাটায় মাটি বিক্রি করেছেন। আশপাশের জমিতে ভাঙনের সৃষ্টি হওয়ায় বেড়া দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিককে ৪০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে। বর্ষার আগে গর্তের চারপাশে ভালো করে বাঁধ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আইন অনুযায়ী পাহাড়ের পাদদেশে ও বসতি এলাকার মধ্যে কোনো অবস্থাতেই ইটভাটা তৈরি করা যাবে না। ইট তৈরির জন্য ফসলি জমির মাটিও কাটা যাবে না। তিনি জানান, কোনো ইটভাটার মালিক ফসলি জমিতে গভীর গর্ত করলে সেটা দণ্ডনীয় অপরাধ।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোয়াজ্জম হোসেন জানান, এ ব্যাপারে তদন্ত করে ইটভাটার মালিক ও মাটি বিক্রিকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের পরিচালক শহীদুল আলম বলেন, নদী ও মজা পুকুর থেকে মাটি সংগ্রহ করে ইট তৈরি করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.