বিদ্যুৎ ভবনে গুলি- অস্ত্র তোমার বাহকেই পরিচয়

সর্বাধিক পাহারা মানেই সর্বাধিক নিরাপত্তা নয়, যদি নিরাপত্তা ভঙ্গকারী হয় সরকারযন্ত্রের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা। রাষ্ট্রযন্ত্রের কেন্দ্র সচিবালয় ও পুলিশ নিয়ন্ত্রণকক্ষের গা ঘেঁষা বিদ্যুৎ ভবনে গুলি ও মারামারি হলো কিন্তু পুলিশ ও কর্তৃপক্ষ কিছুই করল না? এতেই প্রমাণিত হয়, পুলিশের চোখে সব অপরাধ সমান নয়। অর্থাৎ অস্ত্রধারীরা যদি হয় সরকারের সমর্থক, তাহলে তাদের অপরাধ মাফ? অস্ত্র তোমার বাহকেই পরিচয়!
মঙ্গলবার ছিল বিদ্যুৎ বিভাগের দুটি নির্মাণকাজের দরপত্র জমা দেওয়ার তারিখ। বাংলাদেশে সরকারি ঠিকাদারি কাজ মানে দলীয় নেতা-কর্মীদের অনুগ্রহ বিতরণের সুযোগ এবং যথারীতি এখানে সরকার-সমর্থকেরা নিজেরাই নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী। দুটি প্রকল্পে মোট ৭৭ লাখ টাকার কাজের ভাগাভাগি নিয়েই গন্ডগোলের সূত্রপাত। মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বনাম মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক; তারা বিনা যুদ্ধে নাহি দেবে সূচ্যগ্র মেদিনী। তবে কার্যত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একটি পক্ষই দরপত্র দাখিলের সুযোগ পেয়েছে। নিরাপত্তাকর্মীদের দিয়ে অপর পক্ষকে দরপত্র জমাদানে বাধাদানের ছবি বুধবারের প্রথম আলোতে প্রকাশিতও হয়েছে।
সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন কিংবা সাধারণ মানুষকে হয়রানির বেলায় যেখানে পুলিশ অতি উৎসাহে মামলা করে ও ধরপাকড় চালায়, সেখানে নাকের ডগায় সন্ত্রাস ঘটলেও তারা নিষ্ক্রিয় ছিল কেন? ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির প্রধান প্রকৌশলী দিলীপ কুমার সেন কার্যালয়ে উপস্থিত থেকেও কীভাবে প্রথম আলোর কাছে বলতে পারেন, ‘শুনেছি, নিচতলায় কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে...?’ দরপত্র জমা দেওয়া নিয়ে মারামারি ও গুলি হলো, তিনি কিছুই জানলেন না ও করলেন না? এর আগেও এই ভবনের জানালা থেকে সচিবালয়ে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। সরষের মধ্যে এত ভূত থাকলে চলবে কী করে?
অবিলম্বে শুধু মামলাই নয়, ৭৭ লাখ টাকার কাজ যাতে স্বচ্ছভাবে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়, সেই ব্যবস্থা নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রমাণ করতে হবে, সন্ত্রাস ও সুবিধাবাদের পক্ষে তারা নয়।

No comments

Powered by Blogger.