খায়রুল হক আবারও দৃশ্যপটে by সাজেদুল হক

দৃশ্যপটে আবারও ফিরেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। বাংলাদেশের ইতিহাসের গতি নির্ধারণে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদে ফেরাতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল যখন পাসের অপেক্ষায় তখন আদালতপাড়ায় আবারও আলোচনার শীর্ষে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি। বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক এখন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান। তার নেতৃত্বাধীন কমিশনই সরকারকে সংবিধান সংশোধনের পরামর্শ দেয়। যদিও দল-মত-নির্বিশেষে দেশের শীর্ষ আইনজীবীরা এ সংশোধনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বারবারই উঠে আসে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নাম। দেশের কয়েকজন শীর্ষ আইনজীবী তার তীব্র সমালোচনা করেন। আলোচনায় এসেছে পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায় ঘোষণার অবস্থান থেকে তার সরে যাওয়ার বিষয়েও। বিচারপতি খায়রুল হক পঞ্চম সংশোধনী মামলা অবৈধ ঘোষণার রায়ের লেখক। মোটা দাগে তিনি ওই সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করলেও কিছু কিছু বিষয় বহাল রাখেন। তার অন্যতম হচ্ছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সংক্রান্ত সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ। এরপর তার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বেঞ্চই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ওই রায় দেয়া হয়েছিল। চার বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করেন। বিপরীতে তিন বিচারপতি মত দেন এ ব্যবস্থা অসাংবিধানিক নয়। বাংলাদেশের আদি সংবিধানে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের কাছে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের আমলে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে দেয়া হয়। ষোড়শ সংশোধনী বিলের প্রস্তাবনায় এ সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হলেও সংসদীয় কমিটি প্রস্তাবনা বাদ দেয়ার কথা জানিয়েছে। আইন মন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, তিন মাসের মধ্যেই এ ব্যাপারে আইন প্রণয়ন করা হবে। আইনে বিচারপতিদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্তে একটি কমিটি থাকবে। সে কমিটিতে কারা থাকবেন সে প্রশ্নটিই এখন সর্বাধিক আলোচিত। তবে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান বিচারপতিরা এ কমিটিতে থাকছেন না। সাবেক বিচারপতিদের দিয়েই এ কমিটি গঠনের সম্ভাবনা বেশি। সংসদ সদস্যদেরও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের এ কমিটিতে থাকার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা চলছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বুধবার বলেছেন, বিচারপতিদের অসদাচরণ বা অযোগ্যতার বিষয়টি তদন্ত করবেন কারা। আমি শুনেছি আইনমন্ত্রী নাকি বলেছেন, সেখানে প্রধান বিচারপতি থাকবেন না। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং সাবেক দুই বিচারপতির সমন্বয়ে এ কমিটি হবে। তাহলে সেখানে কি তিনটা দালালের জায়গা হবে। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এবিএম খায়রুল কি ওই কমিটির চেয়ারম্যান হবেন? বিচারপতি খায়রুল হকের জ্ঞান-গরিমার প্রতি আমার সম্মান রয়েছে। কিন্তু তার জন্য আমরা কিছু অসুবিধাতেও রয়েছি। আমি শুনেছি বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের পরামর্শেই সংবিধানে এ সংশোধনী আনা হচ্ছে। তিনি সাত অনুচ্ছেদের জবাবদিহির কথা বলেছেন। তার কাছে আমার একটা প্রশ্ন। আপনি যখন পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায় লিখেন তখন সাত অনুচ্ছেদ ছিল। সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর ধারণাও ছিল। কারণ অষ্টম সংশোধনী মামলার রায়েই বাংলাদেশে এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়। তাহলে আপনি কেন তখন ৯৬ অনুচ্ছেদ বহাল রাখলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আরেক সাবেক সভাপতি এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনও বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সিংগেল মেজরিটি ভোটে মৌলিক কাঠামোর দোহাই দিয়ে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করা হলো। অথচ কিছু দিন আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি সিংগেল মেজরিটি ভোটে একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় সিদ্ধান্ত দেননি। বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ে প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদ বহাল রেখেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হলো। অথচ পৃথিবীর সব দেশেই নির্বাচনের সময় যে সরকার থাকে তারা তখন নির্বাচিত থাকেন না। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সময় পর্যন্ত তাদের দায়িত্ব পালন করে যেতে বলা হয়।

No comments

Powered by Blogger.