কাশ্মীরে বন্যার পর ভূমিধসে দুর্ভোগ

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মিলেছে ত্রাণসামগ্রী। তাই নিয়ে বাড়ি
ফেরা। প্রায় কোমরসমান পানি ঠেলে চলতে হচ্ছে, তবু
চোখেমুখে স্বস্তির ছাপ। বন্যাকবলিত কাশ্মীরের
শ্রীনগর থেকে গতকাল তোলা ছবি। এএফপি
ভারতশাসিত কাশ্মীরের বন্যাদুর্গত মানুষ গতকাল শুক্রবার একাধিক ভূমিধসের কারণে নতুন করে বিপর্যয়ের শিকার হয়। এতে সেখানকার বন্যাপীড়িত এলাকায় উদ্ধার ও সহায়তা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। খবর রয়টার্স, এএফপি ও এনডিটিভির। কাশ্মীর অঞ্চলের দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর প্রধান মেহরাজ-উদ-দিন শাহ গতকাল জানিয়েছেন, রাজ্যের প্রধান শহর গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগর এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। তিনি বলেন, এখনো প্রায় এক লাখ মানুষ বিভিন্ন স্থানে সহায়তা কার্যক্রমের আওতার বাইরে রয়েছে। শ্রীনগর শহরে বিভিন্ন আশ্রয়ে থাকা হাজার হাজার অসহায় মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। কয়েকটি শহরের পথে লাশ ভাসতে দেখেছে স্থানীয় লোকজন। একটি গ্রামে ভূমিধসে অন্তত ৪০ জন প্রাণ হারিয়েছে। বন্যাবিধ্বস্ত কাশ্মীর উপত্যকা থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রত্যাশায় হাজারো মানুষ শ্রীনগরে বিমানবাহিনীর ঘাঁটির বাইরে জড়ো হয়। বিমানবাহিনী ভারী পরিবহন উড়োজাহাজ সি-১৭ ও সি-১৩০ দিয়ে পানিবন্দী মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে।
তবে উদ্ধারপ্রত্যাশী মানুষের সংখ্যা উড়োজাহাজের তুলনায় অনেক বেশি। কাশ্মীরে ত্রাণ সরবরাহ ও বিতরণ কার্যক্রম নিয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা শুরু হওয়ার ছয় দিন পর উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ গতকাল বলেন, তাঁর সরকার দুর্যোগ শুরু হওয়ার পর প্রথম ২৪ ঘণ্টা কোনো সাড়া দিতে পারেনি। কারণ, তখন সরকার কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। রাজধানী শহর অচল হয়ে পড়ে। তিনি মাত্র ছয়জনকে নিয়ে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন। অতিবৃষ্টিজনিত বন্যায় তাঁর সরকারের সচিবালয়, পুলিশ সদর দপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ সব অবকাঠামো পানির নিচে চলে যায়। মুখ্যমন্ত্রী ওমর গতকাল এনডিটিভিকে বলেন, ‘আমার কোনো মুঠোফোন ও টেলিফোন সংযোগ পর্যন্ত ছিল না। এখন মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে শুরু করেছি। আজ আমি মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাঁদের অনেকেই নিজেরাও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়তা করে কঠিন পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনী অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে।’ অস্বাভাবিক ভারী বর্ষণের প্রভাবে গত সপ্তাহে ঝিলম নদীর পানি অনেক বেড়ে যাওয়ায় কাশ্মীরের ভারত ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত দুই অংশেই গত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা শুরু হয়। এতে পাকিস্তানে গতকাল পর্যন্ত ২৬৪ এবং ভারতে প্রায় ২০০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। দুই দেশে বন্যাকবলিত মানুষের মোট সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ।

No comments

Powered by Blogger.