ক্রিকেটের পিচ ধরে রাজনীতির রাজপথে

ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতির খেলোয়াড় ইমরান খান। ক্রিকেট পিচের ২২ গজের পথ ধরে তিনি উঠে এসেছেন রাজনীতির রাজপথে। পাকিস্তান ক্রিকেটের সফলতম অধিনায়ক এবার নেতৃত্ব দিতে চাচ্ছেন পরমাণু ক্ষমতাধর এই রাষ্ট্রের। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) প্রতিষ্ঠা করার পর গত বছরের মে মাসের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অবির্ভূত হন রাজনীতির ময়দানে। চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনের অগ্নিগর্ভে পাকিস্তানের নেপথ্য নায়ক তিনি। সত্তর ও আশির দশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিখ্যাত তারকা ছিলেন ইমরান খান। পাকিস্তান ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক হিসেবে ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয় করেন তিনি। পরবর্তীতে সেরা খেলোয়াড়ের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে সমাজসেবায় নেমে পড়েন। ১৯৯৬ সালে তার মায়ের নামে পাকিস্তানের সর্ববিখ্যাত ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র ‘শওকত খানম মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা করেন।
সেবছরই সিদ্ধান্ত নেন রাজনীতিতে নামার। পাক-রাজনীতির উঠোন থেকে দুর্নীতির ময়লা-আবর্জনা ধুয়েমুছে সাফ করতে নতুন ধারার দল গঠন করেন পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই)। ক্রিকেট জগতের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে তরুণদের কাছে টানতে সমর্থ হন তিনি। পাকিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলার কঠোর সমালোচক হয়ে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সমর্থন লুফে নেন ইমরান। তিনি ঘোষণা দেন প্রচলিত ধারা ভেঙে দুর্নীতিবিরোধী দেশপ্রেমিক ‘সাচ্চা রাজনীতিক’ তৈরি হবে তার পিটিআইয়ের প্লাটফর্মে। ২০০২ সালের হাতেখড়ি নির্বাচনে তার দলের একমাত্র বিজয়ী প্রার্থী ছিলেন তিনি। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচন বয়কট করে ইমরানের দল। গত দু’বছরে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা হঠাৎ করে অস্বাভাবিক রকম বেড়ে যায়। এক দশকের মধ্যে ইমরান খান হয়ে ওঠেন জনপ্রিয় রাজনীতিক। তার নির্বাচনী র‌্যালিগুলোতে সর্বাধিকসংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করতে থাকে।
অন্য দলের রাজনীতিবিদরাও যোগ দেয়া শুরু করেন তার দলে। ইমরান সম্পূর্ণ নতুন ভিন্নধারার সাচ্চা রাজনীতিবিদ তৈরির কথা বললেও প্রচলিত দলের নেতাদেরও তার দলে ভিড়তে দেন। ফলে ‘পরিবর্তন’ শুরু হয় তার মতাদর্শে। ইমরান খানের রাজনৈতিক আদর্শ বর্তমানে অনেকটাই ‘মিশ্র’। একদিকে তিনি উদারনৈতিক প্রগতিশীল ধারার কথা বলেন, একইসঙ্গে ইসলামী মূল্যবোধ ও পশ্চিমা বিরোধী ধারণারও পৃষ্ঠপোষকতা করেন। আবার সামরিক নেতা ও জেনারেলদের সঙ্গে সৌহার্দ্য বজায় রাখেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে তৃতীয় বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করেন। খায়বার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে সরকার গঠন করে ইমরানের পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ। এখানেই থেমে থাকেনি তার দেশ গড়ার ইনিংস। গত নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে নওয়াজ শরিফ সরকারের পতনে ইসলামবাদ অবরোধ করেছেন তিনি। পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএল-এন) সরকার হটিয়ে ‘নয়া পাকিস্তান’ গড়ার ডাক দিয়েছেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.