হাসিনা-ওবামা শুভেচ্ছা বিনিময়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তর সংলগ্ন ওয়াল্ডর্ফ এস্টোরিয়া হোটেলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে প্রেসিডেন্ট ওবামা ও ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামার দেয়া অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছার পর ওবামা ও মিশেল অন্য নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনাকেও উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। এ সময় জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে তার দেয়া বক্তব্যের প্রশংসা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াল থাবা থেকে ধরিত্রীকে রক্ষায় অঙ্গীকারের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানান। গত ৫ই জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের পর এটাই শেখ হাসিনার প্রথম যুক্তরাষ্ট্র যাত্রা। দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও এটাই তার প্রথম সাক্ষাৎ। অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য বিশ্বনেতার সঙ্গেও শেখ হাসিনা শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন বলেও জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইসিটি খাতে নরওয়ের বিনিয়োগ কামনা: এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উদীয়মান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করার জন্য নরওয়ের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। নিউ ইয়র্ক সফররত শেখ হাসিনা মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে দ্বিপক্ষীয় কক্ষে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ইরনা সোলবার্গের সঙ্গে এক বৈঠকে এ আহবান জানান। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আইসিটি খাতে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনা আইসিটি খাতে উন্নয়ন দেখতে বাংলাদেশ সফরে আসার জন্য নরওয়ের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, গত সাড়ে পাঁচ বছরে বাংলাদেশে আইসিটি খাতে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখে আপনি অভিভূত হবেন। বৈঠকে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের প্রশংসা করেন। এদিকে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে দেয়া জাতিসংঘ মহাসচিবের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

কার্বন হ্রাসের অঙ্গীকার জোরদারের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর: ওদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষায় স্বেচ্ছায় কার্বন হ্রাসের অঙ্গীকার জোরদার করার জন্য বৃহৎ কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে কার্বন হ্রাস এবং জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলায় সামর্থ্য অর্জনের মহাসড়ক ধরে বাংলাদেশ অগ্রসর হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছেন তিনি। কার্বন নির্গমনকারী বৃহৎ দেশগুলোর অনুরূপ প্রচেষ্টা চালানো উচিত বলেও মনে করেন তিনি। আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ কখনও উন্নয়নশীল বিশ্বের গড় মাথাপিছু নির্গমনের সীমা অতিক্রম করবে না বলে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষ সম্মেলন-২০১৪ এর অধিবেশনে ‘ন্যাশনাল অ্যাকশন অ্যান্ড এম্বিশন অ্যানাউন্সমেন্ট’ শীর্ষক অধিবেশনে দেয়া বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অভিযোজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট অবনতিশীল পরিস্থিতির দিকে আমাদের ঠেলে দেয়া উচিত নয়।  আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই জোরালো অঙ্গীকার ও প্রচেষ্টা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্যও ‘অভিযোজন’ এবং ‘ক্ষয়ক্ষতি’ ইস্যু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং সক্ষমতা উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ‘ইন্টেন্ডেড ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনের (আইএনডিসি) ব্যাপারে প্রতিটি দেশকে পরিষ্কার ঘোষণা দিতে হবে এবং এই ঘোষণা প্রমাণযোগ্যভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে- এমন তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আইএনডিসি’র ব্যাপারে বাংলাদেশ সম্ভাব্য সব কাজ করে যাচ্ছে। তবে তা বাস্তবায়নে নতুন ও অতিরিক্ত সম্পদের প্রয়োজন হবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজি) সভাপতি সাম কুটিয়ার সভাপতিত্বে সম্মেলনে বলিভিয়া, ব্রাজিল, তুরস্ক, কোস্টারিকা, ভেনেজুয়েলা, ক্রোয়েশিয়া, অস্ট্রিয়া ও উগান্ডার প্রেসিডেন্ট বক্তব্য রাখেন। শেখ হাসিনা বলেন, অভিযোজন পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা জরুরি। প্রশমনের ক্ষেত্রে বেসরকারি আর্থিক সহায়তা শুধু সম্পূরক হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী সামপ্রতিক বছরগুলোতে সবুজ অর্থনীতির জন্য বাংলাদেশের অবিরাম প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ৩.২ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম (এসএইচএস) এবং ১.৫ মিলিয়ন ইমপ্রুভড কুক স্টোভ (আইসিএস) রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ১০ বছর মেয়াদি একটি ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান’ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে দুর্যোগ সহনীয় বিভিন্ন ধরনের শস্য উদ্ভাবন করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অসহায় ও স্বল্পোন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ এ পর্যন্ত অভিযোজন ও  প্রশমনের জন্য নিজস্ব সম্পদ থেকে ৩৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। তিনি বলেন, অব্যাহত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশে লাখ লাখ মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ত পানির প্রবেশ আমাদের উপকূলীয় এলাকাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের গম ও ধান (বোরো) উৎপাদন হুমকির সম্মুখীন। বহু মানুষ তাদের ঐতিহ্যবাহী জীবনধারণ পদ্ধতি পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে জিডিপি ২ থেকে ৩ শতাংশ কম হচ্ছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন-২০১৪-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইপিসিসি চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র কে. পাচাউরি এবং সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর।

No comments

Powered by Blogger.