অপহরণের উৎস -সত্য উন্মোচন ও দুষ্টের শাস্তি নিশ্চিতের দায় সরকারের

গুম-খুন রয়ে গেছে। অতীতে যাঁরা অপহরণের পর নিখোঁজ ছিলেন, তাঁদের বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীলতা দেখা যায়নি। এর মধ্যে অপহরণের সাড়ে তিন মাস পর ছাড়া পেলেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান ও তাঁর গাড়িচালক। মুক্ত হয়ে মুজিবুর রহমান যা বলেছেন, তাতে মানবাধিকার সংস্থাগুলোসহ দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কাই সত্য মনে হয় যে এসব কোনো প্রশিক্ষিত ও সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর কাজ।
গত ৪ মে তিনি সুনামগঞ্জে বিএনপি আয়োজিত ‘হত্যা-গুম’-এর প্রতিবাদ সভা থেকে ফেরার পথে নিজেই গুম হন। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করার সময় এবং মুক্ত হয়ে মুজিবুর রহমান নিজেই এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন। মুজিবুর রহমান যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা এবং তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিকও বটে। বিষয়টির রাজনৈতিক ও মানবাধিকারগত গুরুত্ব থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো উদ্ধার করতে পারেনি; অপহরণকারীরাই তাঁকে ছেড়ে দিয়েছে।
অপহৃত মুজিবুর বিনা মুক্তিপণেই ছাড়া পেয়েছেন। এর আগে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী অনেক দিন আটক থেকে মুক্ত হয়ে র‍্যাবকে দায়ী করেছিলেন। আইনজীবী ও পরিবেশ আন্দোলনের নেত্রী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক অপহরণকারীদের হাত থেকে ছাড়া পেলেও এখনো এর রহস্য ভেদ হয়নি। আরও অনেকে ছাড়া পাননি। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালকের খোঁজ এখনো মেলেনি। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য হচ্ছে, ২০১৩ সালেই অপহরণের শিকার হয়েছেন ৫৩ জন।
অনেক ঘটনাতেই সরাসরি র‍্যাব ও পুলিশ অভিযুক্ত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় র‍্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার স্বীকারোক্তিও আদালত জেনেছেন। যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অধিকাংশ অপহরণ ও গুমের ঘটনার প্রতিকার করতে ব্যর্থ, যখন আসল-নকল পোশাকধারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমছে, তখন তাদেরই দায়িত্ব অপহরণের ঘটনাগুলোর প্রতিকার করে জনমনের সংশয় ও উদ্বেগ দূর করা। 

No comments

Powered by Blogger.