এরশাদ কি সত্য বলছেন?

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কি সত্য বলছেন? গতকালই সাবেক এই স্বৈরশাসক দাবি করেছেন গণতান্ত্রিক হতে গিয়েই তিনি বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারেননি। এরশাদ বলেছেন, আমার শাসনামলে একক সিদ্ধান্তে অনেক কিছু করেছি। একক সিদ্ধান্তে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারিনি। এটা পারলে তার নামের পাশে আমার নাম লেখা থাকতো। আমি সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে  চেয়েছিলাম। এটা ছিল ভুল। তাই পারিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এরশাদের এ দাবির সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। বেশ কিছু কারণে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন। এরশাদ তাদের চাকরিচ্যুত করেননি অথবা তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি। মেজর শরীফুল হক ডালিম সে সময় হংকং এ কর্মরত ছিলেন। রশীদ, ফারুক ও অন্যরা দেশে ফিরে দল গঠন, পত্রিকা প্রকাশ, ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে। খোন্দকার মোশ্‌তাক আহমাদের আমলে পাস হওয়া বিতর্কিত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের কারণে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ বন্ধ ছিল। নয় বছরের শাসনামলে এরশাদ কখনওই তা বাতিলের কোন উদ্যেগ নেননি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করা হয়। এতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ খুলে যায়। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিয়ে গঠিত দল ফ্রিডম পার্টি এরশাদের আমলে পুরোমাত্রাতেই সক্রিয় ছিল। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেয়নি। ওই নির্বাচনে ফ্রিডম পার্টি ১১১টি আসনে প্রার্থী দেয় এবং দু’টি আসনে জয়লাভ করে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ বেতার রেডিও বাংলাদেশ নামে পরিচিত হয়। পাকিস্তানি ভাবধারায় তা করা হয়। এরশাদের সচিবালয়ে কর্মরত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত চরমপত্রের পাঠক এম আর আখতার মুকুল পুনরায় বাংলাদেশ বেতার নামকরণের প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু এরশাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ওই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়া হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবার বাংলাদেশ বেতার নামকরণ করা হয়।

ওদিকে, গতকাল দুপুরে বনানী কার্যালয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এরশাদ আরও বলেন, আমি একক সিদ্ধান্তে কাজ করতাম। উপস্থিত নেতাকর্মীদের  কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, একক সিদ্ধান্ত কি খারাপ? একক সিদ্ধান্তে উপজেলা করেছি। ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের সাতটি বেঞ্চ করেছি। এগুলো কি স্বৈরাচারী কাজ? যদি তা হয়ে থাকে, তাহলে আমি স্বৈরাচার!। এরশাদ বলেন, গণতন্ত্র মানতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা করতে পারিনি। এখন দেশে কিসের গণতন্ত্র চলছে? গণতন্ত্র কোথাও দেখি না। গণতন্ত্র মানে সুশাসন। দেশে কি সুশাসন আছে? আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকে ফিরে আসতে পারে না। এ কেমন গণতন্ত্র? এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি আপনার পিতা ও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন এবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন। তাহলে জনগণ আপনাকে মনে রাখবে। এ সময় প্রতিনিধিদল হিন্দু সমপ্রদায়ের ওপর নানা অত্যাচার ও নির্যাতনের কথা তুলে ধরে। এ সব অত্যাচারের কারণে হিন্দুরা এখন  দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। ভারতের বাবরি মসজিদের ভাঙার কথা উল্লেখ করে এরশাদ দাবি করেন, তার সময় ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির, কালী মন্দির ও  চট্টগ্রামের কৈবল্যধাম মন্দির বাদে দেশের কোথাও হিন্দুদের ওপর হামলা হয়নি। এরশাদ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, আমাকে স্বৈরাচার বলা হলেও মানুষের দুঃখ বেদনা বুঝি। মানুষের কষ্টে আমার হৃদয় কাঁদে। আপনারা কখনই নিজেদের সংখ্যালঘু বলবেন না। এই মনোভাব নিয়ে চলবেন না। আপনারাও এ  দেশের নাগরিক। আপনাদের আমাদের সমান  অধিকার । শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এরশাদ হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট, জন্মাষ্টমীর ছুটি তার শাসনামলেই হয়েছিল উল্লেখ করে বলেন, সরকারের কাছে দাবি জানাই দূর্গাপূজার ছুটি যেন তিন দিন দেয়া হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এখন শুধুমাত্র বিজয় দশমীতে ছুটি পেয়ে থাকেন। এছাড়া সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধে নিজ দলের এমপিদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের এলাকায় কোন হিন্দুদের ওপর হামলা হলে তোমরা দায়ী হবে। যার এলাকায় হামলা হবে তাকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। এরশাদ বলেন, ‘একবার  নৌকা ছাড়া   ভোট দিয়ে দেখেন না কি হয়? কথা দিচ্ছি, আর  কোন অভিযোগ থাকবে না। শুধু একবার সুযোগ দিন।’ এরশাদ অন্যান্য দলের নেতাদেরও একই নির্দেশ দেয়ার দাবি জানান। শুভেচ্ছা বিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সর্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জুয়েল ভৌমিক, এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ, জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, এস এম ফয়সল চিশতি প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.