২৪ বছর পর সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা by তালহা বিন নজরুল

কক্ষপথেই আর্জেন্টিনা। জোর গতিতে ছুটছে তারা। কোন অঘটন নয়। বেলজিয়ামকে হারিয়ে ২৪ বছর পর সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা। স্বপ্নের ফাইনাল থেকে আর মাত্র এক ম্যাচ দূরে। আগের খেলার মতো ভক্ত-সমর্থকদের কোন চাপে ফেলেনি তারা এবার। সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে গোল পেতে ১১৮ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। এবার তা হয়নি। ৮ মিনিটেই গোল। আর ওই গোলেই নিশ্চিত সেমিফাইনাল। হারেনি আর্জেন্টিনা।  ম্যারাডোনার পথেই যেন হাঁটছেন মেসি। ১৯৯০-এ ম্যারাডোনার নেতৃত্বেই সর্বশেষ সেমিফাইনাল এবং ফাইনালও খেলে আর্জেন্টিনা। এবার আর্জেন্টিনার জার্মানির মতো জয়ে সেই ৯০’র পুনরাবৃত্তিই কি হতে যাচ্ছে? শুক্রবার জার্মানি ১২ মিনিটের গোলে ফ্রান্সকে হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয়। মঙ্গলবার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে জার্মানির মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। চার সেমিফাইনালিস্টের মধ্যে তিন দলই সাবেক চ্যাম্পিয়ন।

গতকাল বিশ্বকাপের তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে মাত্র আট মিনিটের মাথায় গোল করেন গনজালো হিগুয়েইন। এবারের আসরে এটি তার প্রথম গোল আর জাতীয় দলের হয়ে ২২তম। মাঝমাঠে অসাধারণ গতি আর কৌশলে কয়েকজনকে কাটিয়ে গোলে শট নেন মেসি। কিন্তু তার সেই শট বেলজিয়ান ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে চলে যায় অপেক্ষমাণ হিগুয়েইনের পায়ে। সেখান থেকে দারুণ কোনাকুনি হাফভলি শটে তিনি পরাস্ত করেন বেলজিয়ামের গোলরক্ষক কুরতোয়াকে। বাছাই পর্বে ৯ গোল দেয়া রিয়াল মাদ্রিদের এ তারকা আগের চার খেলায় ছিলেন নিসপ্রভ। আরও একটি গোল করতে পারতেন হিগুয়েইন। হলে সেটি হতে পারতো আসরেরই সেরা এক গোল। কিন্তু এবার কুরতোয়া ইউরোপের ডার্ক হর্স বা কালো ঘোড়ার দৌড় আবারও থেমে গেল আর্জেন্টাইনদের বাধাতেই। এখানেও সেই ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ সালের সেমিফাইনালে বেলজিয়ামকে ম্যারাডোনার ২ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল আর্জেন্টিনা এবং মেঙিকোর সেই আসরে জার্মানিকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। মিল পাওয়া যাচ্ছে অনেকই। এর আগেরবার ১৯৮২ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের কাছে ১-০ গোলে হেরেই বিদায় নিয়েছিল ১৯৭৮এর চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। এবার আর বেলজিয়াম সে রকম ঘটনার জন্ম দিতে পারে নি। যতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাশা করা হয়েছিল তাও দেখা যায়নি। ইডেন হ্যাজার্ড, ফ্যালাইনিরা চমক দেখাতে পারেন নি। সমতা ফেরাতে পারেন নি বদলি হিসেবে নামা লুকাকুও। ৭৫ মিনিটের সময় হ্যাজার্ডকে উঠিয়ে নেন কোচ উইলমট। খেলাটি এতটাই অপরিকল্পিত ছিল যে, সারা খেলায় একেবারে গোল বরাবর শট গিয়েছে মাত্র তিনবার যা ১৯৯০-এর ফাইনালের পর আর দেখা যায়নি। তবে বল দখলে এগিয়েছিল বেলজিয়াম। তাদের ৫৪ শতাংশের বিপরীতে আর্জেন্টিনার পায়ে বল ছিল ৪৬ শতাংশ সময়।
রাজধানী ব্রাসিলিয়ার স্তাদিও ন্যাসিওনালে (গারিঞ্চা সেটডিয়াম) আর্জেন্টিনা মেসি ও হিগুয়েইনকে সামনে রেখে খেলেছে। ভিন্নভাবে সাজানো দলে ডি মারিয়া বামে ও ডানে লাভেজ্জিকে রাখা হয়। মাঝে রাখা হয় মাসকেরানো ও বিলিয়াকে। আর্জেন্টিনা যেন মেসি নির্ভরতা থেকেও খানিকটা বেরিয়ে এসেছে এ খেলায়। ৪০ মিনিটের সময় আরেকটি গোল পেতে পারতো আর্জেন্টিনা। বিপদজনকভাবে বেলজিয়ামের সীমানায় ঢুকে পড়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন লিওনেল মেসি। কিন্তু ডি বঙে ঢোকার মুহুর্তে তাকে অন্তত তিনজন বেলজীয় খেলোয়াড় আঘাত করে ফেলে দেন। ফলে ফ্রি কিক পায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু মেসির নেয়া ফ্রি কিকের বল তীব্র গতিতে বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। প্রথমার্ধে বেলজিয়াম দু’একবার আক্রমণের চেষ্টা করলেও আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক রোমেরোকে পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি তারা।
দ্বিতীয়ার্ধে খানিকটা আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করে বেলজিয়াম। ৬৫ মিনিটের সময় ফেলাইনি সুযোগও তৈরি করেন। কিন্তু তার হেডের বল বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ৬৬ মিনিটের নময় বেলজিয়াম সমতায় ফিরতে পারতো। কেভিন ডি ব্রুয়েন ডান দিক থেকে নিচু ক্রস দিয়েছিলেন গোল বরাবর। কিন্তু বল সতীর্থ কারও কাছে যাওয়ার আগে পা বাড়িয়ে দিযেছিলেন ইজেকুয়েল লাভেজ্জি। বল ঢুকে যাচ্ছিল বারের দিকে। হতে পারতো আত্মঘাতি গোল। কিন্তু রোমেরো দ্রুত তা রুখে দিয়ে দলকে বাঁচান অঘটন থেকে। এ জয়ে আর্জেন্টিনার ৫৬ বছরের রেকর্ড অটুট থাকলো। ১৯৫৮ সালের পর বিশ্বকাপের কোন খেলায় আগে গোল করার পর আর হারেনি তারা। বিশ্বকাপে এটি ছিল আর্জেন্টিনার ৭৫তম খেলা।
৪ বছর আগে ১৯৯০ বিশ্বকাপে ফাইনালও খেলে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। সেবার ফাইনালে ১-০ গোলে হেরে যায় তারা জার্মানির কাছে। গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে ৪-১ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। এবারও আর্জেন্টিনা-জার্মানি ফাইনাল হওয়ার সম্ভাবনা যেমন উড়িয়ে দেয়া যায় না তেমনি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা স্বপ্নের ফাইনালও হতে পারে এবার। অপেক্ষা ঘুচবে ৯ই জুলাই।

No comments

Powered by Blogger.