ব্রাজিলের নেইমার হাহাকার

ব্রাজিলের হেক্সা জয়ের স্বপ্নে যেন তীব্র আঘাত করলেন হুয়ান ক্যামিলো জুনিগা। কলম্বিয়ান ফুলব্যাকের হাঁটুর মারটা লেগেছে কিনা স্বাগতিকদের বিশ্বকাপ স্বপ্নসারথি নেইমারের পিঠে! ব্যথাটা ছড়িয়ে পড়ল প্রায় ২০ কোটি ব্রাজিলিয়ানের বুকেও। নেইমারের যে বিশ্বকাপ শেষ!
কলম্বিয়ার বিপক্ষে শেষ আটে মাঠে নামার আগে কোচ লুইস ফেলিপে স্কলারি বলেছিলেন, শিরোপায় এরই মধ্যে এক হাত দিয়ে রেখেছে ব্রাজিল। ফোর্তালেজার ম্যাচটা শেষে হয়তো নিজের কথাটা বদলে নিতে চাইবেন। নেইমার ছিটকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সোনালি ট্রফিটা থেকে সেই হাতটাও যেন সরে গেছে ব্রাজিলের।
মহাতারকার পতনে কিছুটা কি দ্যুতি হারায়নি বিশ্বকাপও?

কত বড় ক্ষতি হয়েছে, তা এরই মধ্যে বুঝতে পেরেছে ব্রাজিলিয়ানরাও। কোয়ার্টার ফাইনালে জয়ের পরদিনও তাই ব্রাজিলের বেশির ভাগ পত্রিকার শিরোনাম—‘নেইমারের বিশ্বকাপ শেষ’। দেশটির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা ও গ্লোবোর অনলাইন সংস্করণের শিরোনাম—‘মেরুদণ্ডের অস্থিসন্ধি ভেঙে নেইমারের বিশ্বকাপ শেষ’। একই শিরোনাম সাও পাওলো থেকে প্রকাশিত ‘এস্তাদাও’র।
ব্রাজিলিয়ানদের জন্য এটা কত বড় ধাক্কা, সেটি বোঝা যাচ্ছে ১৯ বছর বয়সী সেলেসাও সমর্থক ফাবিয়ান রুইজের কথায়, ‘এটা ভয়ংকর খবর। সবচেয়ে বাজে খবর। নেইমার আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামনের ম্যাচে দলের অন্য খেলোয়াড়দের অনেক লড়াই করতে হবে। জার্মানির বিপক্ষে জেতা খুব কঠিন হয়ে যাবে।’
৩৩ বছর বয়সী এদোয়ার্দো গোমেজ থাকতে চাইছেন বাস্তববাদী, ‘সে আমাদের সেরা খেলোয়াড়। মনে হয় না নেইমারকে ছাড়া আমরা বিশ্বকাপ জিততে পারব।’
শুধু সমর্থকেরাই নয়, ডিয়েগো ম্যারাডোনা, লিওনেল মেসি, মেসুত ওজিল, বাস্তিয়ান শোয়েনস্টাইগার, লুকাস পোডলস্কি, পাতোর মতো সাবেক ও বর্তমান ফুটবলাররা ব্যথিত বিশ্বকাপ থেকে নেইমারের এভাবে ছিটকে যাওয়ার খবরে। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জন্য শুভকামনা থাকছে সবারই।
দলে নেইমারের গুরুত্ব বোঝাতে কোয়ার্টার ফাইনালের জয়ের নায়ক ডেভিড লুইজ বলছেন, ‘নেইমারকে ছাড়া খেলা সত্যিই কষ্টের। সে দারুণ একজন মানুষ, অসাধারণ খেলোয়াড়।’
দলের প্রাণভোমরাকে হারিয়ে স্বাভাবিকভাবেই হতবিহ্বল-ক্ষুব্ধ ব্রাজিল কোচ। তাঁর ক্ষোভটা কেবল কলম্বিয়ার জুনিগার ওপরই নয়, গোটা ফুটবল-বিশ্বের ওপরই। একাধিকবার নেইমার এ রকম কড়া ট্যাকলের শিকার হওয়ায় ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে রেফারিদের ওপরও ঝাল ঝেড়েছেন ‘বিগ ফিল’। তবে প্রাথমিক ক্ষোভটা কমে আসার পর নিশ্চয়ই নেইমারের বিকল্প ভাবতে গিয়ে কপালে ভাঁজ পড়েছে তাঁর। সঙ্গে বাড়তি দুশ্চিন্তা—নিষেধাজ্ঞার কারণে অধিনায়ক থিয়াগো সিলভাও খেলতে পারবেন না সেমিফাইনালে। পরশুর ম্যাচে সিলভা টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখার পর স্কলারির প্রতিক্রিয়াই বলে দিচ্ছিল এমন কিছুর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না তিনি।
সিলভা না থাকায় বায়ার্ন ডিফেন্ডার দান্তে একাদশে ঢুকে যাচ্ছেন এটা প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু নেইমারের জায়গা কে নেবেন? সম্ভাব্য বিকল্প চেলসির উইলিয়ান অথবা শাখতার দনেৎস্কের বার্নার্ড। কিন্তু বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড যেভাবে আগের ম্যাচগুলোয় প্রায় একা দলকে টেনে নিয়ে গেছেন সে রকম কিছু করা কি সম্ভব তাঁদের পক্ষে?
হাল্ক-ফ্রেডরা ছন্দে থাকলে এত দুশ্চিন্তার কিছু ছিল না। কিন্তু এই দুজনের কেউই এ পর্যন্ত নেইমারের মতো প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের আতঙ্ক হয়ে উঠতে পারেননি। অধিনায়ক সিলভা অবশ্য মনে করেন, হঠাৎ করে নেইমারের এভাবে ছিটকে যাওয়া বরং তাতিয়ে দিয়েছে সতীর্থদের। বললেন, ‘এ ঘটনাটা আমাদের আগের চেয়ে আরও ঐক্যবদ্ধ করে তুলবে। এখন আমরা নেইমারের জন্য হলেও বিশ্বকাপ জিততে চাই।’
বললেন বটে! কিন্তু নেইমারকে ছাড়া কাজটা যে অনেক কঠিন সিলভা তা জানেন ভালোই। জানেন তাঁর কোচ স্কলারিও। তথ্যসূত্র: এএফপি, রয়টার্স, স্কাই স্পোর্টস।

No comments

Powered by Blogger.