খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক- অভিযান হতে হবে নিখুঁত

মন্ত্রিসভার সাম্প্রতিক বৈঠকে ফরমালিনের অপব্যবহার রোধে যে কঠোর আইনের প্রস্তাব করা হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে উৎসাহজনক। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সমস্যা শুধু ফরমালিনই নয়, খাদ্যে আরও অনেক ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয়, যা বন্ধ করতে না পারলে জনস্বাস্থ্যঝুঁকি দিনের পর দিন বাড়তেই থাকবে। ফরমালিন বন্ধের কথা নিরাপদ খাদ্য আইনের (২০১৩) ২৩ ধারায়ও আছে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য, যেমন ক্যালসিয়াম কার্বাইড, সোডিয়াম সাইক্লামেট, ডিডিটি বা পিসিবি তেল প্রভৃতি কীটনাশক বন্ধের কথাও সেই আইনে আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আইন কেবল খাতায় থাকাই কি যথেষ্ট? বাস্তবে এর ফলপ্রসূ প্রয়োগ না হলে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে মানুষ নিশ্চয়তা পাবে না।
পুলিশ অবশ্য বসে নেই। সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে অনেক আম ধ্বংস করেছে। কিন্তু এ সময় জানা গেল, আম, লিচু ও আপেলের ছয়টি নমুনা পরীক্ষা করে বিএসটিআই ফরমালিন পায়নি। এক মাস আগের এ পরীক্ষার ফলাফল যাচাই-বাছাইয়ের আগেই পুলিশের অভিযানে বোঝা যায়, সরকারের অন্তত এ দুটি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় নেই। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ আশ্বস্ত হবে কীভাবে? আর বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় ফরমালিন ধরা না পড়লেও নির্লিপ্ত থাকা যাবে না। আজ নেই, কাল যে থাকবে না, তার কী নিশ্চয়তা আছে? স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো বন্ধের জন্য যা কিছু করা দরকার, করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী দেশে বিভিন্ন রাসায়নিক পরীক্ষাগারে, আসবাবশিল্পে ও অন্যান্য সুনির্দিষ্ট কাজে ফরমালিন ব্যবহারের চাহিদা মাত্র ১০০ টন, অথচ দেশে আমদানি করা হয় ৫০০ টন। এ ছাড়া বিভিন্ন নামে হাজার হাজার টন ফরমালডিহাইড আমদানি হয় বলেও খবর পাওয়া গেছে।এক শ্রেণির অসাধু আমদানিকারক অতিরিক্ত ফরমালিন আমদানি করে খোলাবাজারে ছাড়ে বলেই এর অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তাই আমদানি পর্যায়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে যেসব রং ব্যবহার করা হয়, তা স্বাস্থ্যসম্মত কি না, তা-ও পরীক্ষা করে দেখা দরকার। অতিমুনাফার লোভে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্যে নির্বিচারে আসবাবে ব্যবহারের রং মেশায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে আইন প্রয়োগ করতে হবে দক্ষতার সঙ্গে। একবার নকল ওষুধ ধরতে গিয়ে মিটফোর্ডে ওষুধের পাইকারি বাজারে শুরু হয় ধর্মঘট। এবার আমে ফরমালিন রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ায় হলো ফলের বাজারে ধর্মঘট। এ রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি কাম্য নয়। আইনের প্রয়োগ হতে হবে নিখুঁত। একদিকে যেমন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন, অন্যদিকে এমন কড়া নজরদারি থাকতে হবে, যেন ফরমালিন বা অন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর সময় হাতেনাতে অপরাধীদের ধরা যায়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণসহ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে কারও কোনো আপত্তি থাকবে না। বাড়াবাড়ির কারণে অভিযান ব্যর্থ হলে ফরমালিনের অপব্যবহারকারীরাই উৎসাহিত হয়। তাই এসব ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়।

No comments

Powered by Blogger.