ভারত নয়, আওয়ামী লীগই দায়ী- সাক্ষাৎকারে বেগম খালেদা জিয়া

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অমীমাংসিত সমস্যা নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য ভারত নয়, দায়ী আওয়ামী লীগ। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার শুধুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে। কোন বিশেষ দল বা ব্যক্তির সঙ্গে নয়, দু’দেশের জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নয়া দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে সম্পর্ক হওয়া উচিত। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির আদর্শগত পার্থক্য রয়েছে। ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি পত্রিকা দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এতে তিনি বলেন, বর্তমানে যে সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতায় তারা অবৈধ। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে ভারতের ইউপিএ সরকার চাপ সৃষ্টি করেছিল। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকার বিভিন্ন ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশকে ভারত বিরোধী কর্মকা- বে্যবহার করতে দেবো না। রোববার খালেদা জিয়া তার অফিসে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাংবাদিক শুভজিৎ রায়কে এ সাক্ষাৎকারটি দেন। এতে তিনি ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের কাছে তার প্রত্যাশা, ভারতের বিগত ইউপিএ সরকারের বিষয়ে তার চিন্তাভাবনা ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। এখানে প্রশ্নোত্তর আকারে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো:

প্রশ্ন: সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ কেমন ছিল?
এটা ছিল খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার। সুষমা খুব চমৎকার মানুষ। আমরা দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেছি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সীমান্ত হত্যাকা-ের মতো বিষয়। এ বিষয়ে সুষমা বলেছেন, তারা এ হত্যাকা- শূন্যতে নামিয়ে আনতে কাজ করে যাবেন। তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তির বিষয়ে তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, এটা বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলেছেন। কথার মধ্যে এমন সব প্রসঙ্গ এসেছে। শীতের সময় পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা হয়, তখন জনসাধারণ পানি না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ভারতের বিরুদ্ধে। ভারতকে একটি বড় প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করতে হবে। আমাদের রয়েছে দীর্ঘ সীমান্ত। ফলে সেখানে সমস্যা থাকতেই পারে। কিন্তু তাই বলে মানুষ হত্যা করা হলে তাতে জনসাধারণ ক্ষিপ্ত হয়, বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তিনি আমাদের উদ্বেগের বিষয় মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। তিনি শুনেছেন আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যেসব বিষয় এখনও সমাধান করা হয় নি তা নিয়ে উদ্বেগের কথা এবং জনগণ টু জনগণ সম্পর্ক শক্তিশালী করা নিয়ে আমার প্রস্তাব।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের প্রতি নরেন্দ্র মোদি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন বলে আপনি মনে করছেন?
এখনও তাদের অবস্থান পরিষ্কার নয়। আমি নরেন্দ্র মোদির কাছে দু’টি চিঠি লিখেছি। একটি লিখেছি নির্বাচনে তার বিজয়ের পর। আরেকটি চিঠি লিখেছি তার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পর। কারও প্রত্যাশা হতে পারে নতুন সরকার দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সম্পর্ক শক্তিশালী করতে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পন্থা খুঁজবে। নরেন্দ্র মোদি তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সার্কের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তার শুভ উদ্যোগ ও দূরদৃষ্টির প্রকাশ পেয়েছে। এটা মেনে নেয়া হয় যে, আমার প্রয়াত স্বামী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এখন থেকে তিন দশকেরও বেশি আগে সার্ক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখন মোদি এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমরা মনে করি এটা এ অঞ্চলের জন্য একটি ভাল উদ্যোগ। আমরা চাই আমাদের দেশের উন্নয়ন। পাশাপাশি আমরা ভারতেরও উন্নয়ন চাই।
প্রশ্ন: একজন নেতা হিসেবে মোদির বিষয়ে আপনি কি ভাবছেন?
মোদিকে বিচারের দায়িত্ব ভারতের জনগণের। তার সুশাসন ও অর্থনীতি যদি ভারতের জনসাধারণের জন্য হয় তাহলে তাকে তারা স্বাগত জানাবেন।
প্রশ্ন: তিনি কি আপনাকে ভারত সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন?
হ্যাঁ। আমি তাকে যখন অভিনন্দন জানিয়েছিলাম তখন আমাদের মধ্যে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
প্রশ্ন: আপনি কি ভারত সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন?
আপনি জানেন দেশের এখন কি পরিস্থিতি। আমি এখন ভীষণ ব্যস্ত। এ দেশে গণতন্ত্র নেই। শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। তারা চাইছেন অবাধ, সুষ্ঠু, পক্ষপাতহীন ও সবার অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন।
প্রশ্ন: এ দেশে নির্বাচনের সময় ভারতের সাবেক সরকার আপনাকে সমর্থন করে নি বলে কি আপনি হতাশা বোধ করেন?
তাদের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, এইচ এম এরশাদের নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত। অন্যথায় নির্বাচন হবে না। পাশাপাশি মৌলবাদীরা ক্ষমতায় আসবে। তিনি আমাদেরকেও বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পারেন নি। আমরা কেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবো না সে বিষয়ে আমরা তাকে বলেছি। আমরা একটি রাজনৈতিক দল। আমরা আন্ডারগ্রাউন্ডের কোন সংগঠন নই। কিন্তু নির্বাচন যদি অবাধ না হয় তাহলে এতে অংশ নেয়ার কোন অর্থই থাকতে পারে না। পরে এরশাদ প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তারও পরে কেন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার একটি ভূমিকা রাখলো তা আমি বুঝতে পারি না। এরশাদ বলেছেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। এক্ষেত্রে নির্বাচনকে যারা স্বীকৃতি দিয়েছে তাদের মধ্যে ভারত-ও রয়েছে। এমনকি কমনওয়েলথ ও জাতিসংঘ বলেছে তারা একদলীয় নির্বাচন সমর্থন করে না। নির্বাচনে কোন পর্যবেক্ষক ছিল না। তাই তারা এ নির্বাচনকে মেনে নিতে পারে নি। এদেশের মানুষও এ নির্বাচনকে মেনে নেয় নি। তাই এ সরকার অবৈধ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদেরকে শিগগিরই নতুন নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ বুঝতে পেরেছে যে, দেশের ভিতরে ও বাইরে তাদের কোন বৈধতা নেই। আওয়ামী লীগ আমাদেরকে বলছে যে, প্রথমে তোমরা আমাদেরকে বৈধ সরকার বলে স্বীকৃতি দাও তারপরে আমরা আলোচনায় যাবো। সুতরাং তারা যে অবৈধ তা প্রকাশ হয়ে পড়েছে। আমি সুষমা স্বরাজকে বলেছি যে, কোন দেশই এমন নির্বাচন প্রত্যক্ষ করে নি যেখানে ৩০০ আসনের পার্লামেন্টে ১৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এমন হতে পারে ২ জন, ৪ জন বা ৫ জন। তাই বলে ১৫৪ জন? মন্ত্রিপরিষদের সব মন্ত্রীই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না। সেখানে একজন ডামি প্রার্থী দাঁড় করানো হয়েছিল এটা দেখাতে যে, নির্বাচনে তার আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।
প্রশ্ন: কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ও বিজেপি নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের মধ্যে পার্থক্য কি বলে আপনি মনে করেন?
এত অল্প সময়ের মধ্যে একটি সরকারের বিচার করা কঠিন। এ বিচার করার দায়িত্ব ভারতের জনগণের এ কথা আমি আগেও বলছি। তবে যে কোন পরিবর্তন ভাল কিছুর আশা জাগায়। আমাদের আগ্রহ হলো এটা দেখা যে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কি ঘটছে। এ অঞ্চলে কি ঘটছে। মোদি সরকার জোর দিয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোর জনসাধারণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে। এখানে উল্লেখ করার মতো পরিবর্তন হলো- তারা বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কে জোর দেয় নি।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে পারে নি?
এটা বাংলাদেশের জনমানুষের ধারণা। বস্তুত ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে সব বড় বড় সমস্যা রয়ে গেছে তা সমাধান করতে না পেরে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষায় আমাদের সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তাদের সদিচ্ছার অভাব ছিল।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন ভারতের ওই সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের খুব বেশি ঘনিষ্ঠ ছিল এবং এতে বাংলাদেশের শুভ হয় নি?
আবারও বলি এটা এখানকার মানুষের ধারণা। বাংলাদেশের মানুষ আসলে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখায় আন্তরিক। কোন বিশেষ দল বা ব্যক্তি নয়, এ সম্পর্ক হওয়া উচিত দু’দেশের মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে। আমি কাউকে দায়ী করতে চাই না। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাদেরকে এমনটা করতে বাধ্য করেছে। তাই ভারত সরকার তাদেরকে সমর্থন দিয়েছে। এমনকি এখনও এ বিষয়ে কথা বলেন এরশাদ। তিনি বলেন, তিনি নির্বাচনে যান নি। তাকে নির্বাচনে যেতে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এ জন্য তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু তার সেই চিঠি গৃহীত হয় নি। তাই ধারণা প্রচলিত আছে যে, ভারত সরকার ওই নির্বাচনে একটি ভূমিকা পালন করেছিল।
প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিস্তা চুক্তিতে বিরোধিতা করেছেন। তার এ ভূমিকাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় ঘোষণা দেয়া হয়েছিল যে, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে, যদিও বাংলাদেশের মানুষ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারে নি। শেষ মুহূর্তে ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় নি মমতার বিরোধিতার কারণে। বাংলাদেশের মানুষ প্রকৃতপক্ষেই কিছু জানতে পারে নি যে, আসলে কি ঘটেছে। মমতার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয় নি। আমি জানি না কে এ চুক্তিতে বাধা দিয়েছেন। আমাদের সরকার মমতার কথা বলে। হাসিনা-ও তাই বলেন।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করেন যে, সীমান্ত চুক্তি সামনে এগিয়ে নিতে পার্লামেন্টে তা তুলতে সক্ষম হবে বিজেপি, অথবা আবারও মমতা এতে বাধা সৃষ্টি করবেন অথবা বিজেপির আসাম ইউনিট এতে বাধা সৃষ্টি করবে?
ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। বাংলাদেশ তা ওই বছরেই অনুমোদন করেছে। কিন্তু ভারত এখনও তা করতে পারে নি। ছিটমহলের মানুষগুলো অপরিসীম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। দীর্ঘদিন তারা অনিশ্চিত এক অবস্থায় বসবাস করছেন। দু’দেশের ওপরই এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এখন ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় বিজেপি। এটা আশা করা যায় যে, এ সমস্যার সমাধান হবে শিগগিরই।
প্রশ্ন: আপনি দু’দফায় যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন আপনি দেখেছেন ভারতের তিনজন প্রধানমন্ত্রী। আপনি কিভাবে পিভি নরসিমা রাও, অটল বিহারী বাজপায়ী ও মনমোহন সিংয়ের মধ্যে রেটিং করবেন?
তারা সবাই চমৎকার মানুষ। মনমোহন সিং অতিশয় ভদ্র মানুষ। অতি বিনয়ী। বাজপায়ী একজন সিনিয়র ব্যক্তিত্ব। তার সঙ্গে আমার মতবিনিময় হয়েছে। আমি ভারত সফরকালে নরসিমা রাওয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আমি বলতে চাই না কে ভাল কে মন্দ। তারা সবাই ও ভারতে বর্তমানে মোদির অধীনে নতুন সরকার সবাই বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যে সব ইস্যু এখনও সমাধান করা যায় নি তা সমাধান করা উচিত।
প্রশ্ন: কিন্তু তারা তো এসব ইস্যুর কোন সমাধান দিতে সক্ষম হন নি?
এখনও তারা সেটা করতে পারেন নি। তাই আমরা আশা করছি যে, আগের সরকার যা করতে পারে নি পূর্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নরেন্দ্র মোদি তা করতে পারবেন।
প্রশ্ন: বিএনপির বিগত সরকারের সময়ে ভারতবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকা- নিয়ে একটি উদ্বেগ ছিল। আপনি ভারতকে কিভাবে আশ্বস্ত করবেন?
এ উদ্বেগ ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে। বিএনপি সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই প্রচারণা চালানো হয়েছিল। ভারত বা যে কোন প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে আমরা কখনওই বাংলাদেশের ভূখ-কে ব্যবহার করতে দেবো না। এটা আমাদের প্রতিশ্রুতি। আমরা এর প্রমাণও দিয়েছি।
আরেকটি উদ্বেগ রয়েছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে।
আমি সংখ্যালঘু শব্দটি ব্যবহার করি না। আমি বলি, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের রয়েছে সমান অধিকার। বিএনপি সরকারের সময়ে তারা ভাল ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষমতার সময়ে সেই পরিস্থিতির অনেক অবনতি হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে মন্দির। কেউই নিরাপদ নয়। যখন বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল তখন আমি ছিলাম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তখন যারা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল অনতিবিলম্বে আমি তাদের দমন করেছিলাম। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের টেলিভিশন কভারেজ বন্ধ করেছিলাম। হিন্দু সম্প্রদায়কে নিরাপত্তা দিতে আমার মন্ত্রীরা কাটিয়েছেন বিনিদ্র রজনী।
প্রশ্ন: মোদি সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে যে অবস্থান নিয়েছেন তাতে কি আপনি উদ্বিগ্ন?
নির্বাচনী প্রচারণা থেকে অনেক বার এ কথা আমরা শুনেছি। এ কথা আমরা অতীতেও শুনেছি। কেউই অকাট্য প্রমাণ দিতে পারেন নি যে, ভারতে বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসী রয়েছেন। সুষমা স্বরাজ এ ইস্যুটি উত্থাপন করেন নি। নির্বাচনের সময় মানুষ অনেক কথাই বলেন জেতার জন্য। আমরাও অনেক কথা বলি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, তার সব কিছুই বাস্তবায়ন করতে হবে। আমি মনে করি না যে, অনেক বাংলাদেশী ভারতে যান। তারা তো এখানেই ভাল আছেন।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের রাজনীতিতে দু’টি পরিবার প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। আগামী বছরগুলোতেও কি এ ধারা অব্যাহত থাকবে?
এটা ঠিক না। যেহেতু মুজিবুর রহমানের অবদান আছে, জিয়াউর রহমানের অবদান আছে তাই তাদের পরিবার সম্মান পায়। এ জন্যই জনগণ তাদের ওপর আস্থা রাখেন। দেখুন, এটা শুধু রাজনীতির জন্যই নয়। একজন ব্যারিস্টারের ছেলে ব্যারিস্টার হন। ডাক্তারের ছেলে হন ডাক্তার। ব্যবসায়ীর ছেলে হয় ব্যবসায়ী। তাই রাজনীতিও পরিবারের আগ্রহী সদস্যদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। তারপর তা যায় জনগণের কাছে। যাকে তারা গ্রহণ করেন। এটাই হলো মূল কথা। জনগণ যদি গ্রহণ না করেন তাহলে তারা তো রাজনীতিতে ঠাঁই পাবে না।
প্রশ্ন: বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সম্পর্ক কি রকম?
আদর্শগত কোন মিল নেই। আমরা কট্টর ডান বা বামপন্থি নই। আমরা মধ্যপন্থি। আপনি যদি অতীত ইতিহাসের দিকে যান তাহলে দেখবেন ১৯৮৬ সালে এরশাদ যখন নির্বাচন দিতে চাইছিলেন তখন জামায়াতের সঙ্গে হাতে হাত রেখে চলেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে এখন যে সহযোগিতা তা হলো নির্বাচনকেন্দ্রিক। তারা কোন কোন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। আমরা কিছু আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। এর বাইরে কিছু নেই। তারা তাদের আদর্শ অনুসরণ করে। আমরা আমাদেরটা।
প্রশ্ন: গত ছয় বছরে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে হাসিনার চেয়ে আপনি আলাদা কি করেছেন?
আওয়ামী লীগ সরকারের মতো আমরা নই। আমরা সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার ক্ষেত্রে সার্কের অধীনে যে বিধান আছে তার আলোকে সব ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে করার জন্য জোর আহ্বান জানিয়েছি। আমি এ ইস্যুতে খুব জোর দিচ্ছি যে, দু’দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। বিভক্তি ও ঔপনিবেশিক শাসন আতঙ্ক ও অনাস্থা সৃষ্টি করেছে। আমাদের দু’দেশের মধ্যেই এমন কিছু অংশ আছে যারা অব্যাহতভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং তা অব্যাহত রাখে। তাই এটা অত্যাবশ্যক যে, নতুন একটি ভিত্তি তৈরি করতে আমাদেরকে একত্রে কাজ করতে হবে। এর প্রথম পদক্ষেপ হলো, আমাদেরকে আলোচনায় বসতে হবে। পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করতে হবে। বিএনপি যদি সরকার গঠন করতে পারে তাহলে জনগণ টু জনগণ সম্পর্ক উৎসাহিত করবে। সার্কের মতো সংগঠনকে ব্যবহার করে আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিস্তৃত করতে হবে। সমস্ত ক্ষেত্রে বাড়াতে হবে সহযোগিতার হাত।

No comments

Powered by Blogger.