রক্তপাত এড়ালো ব্রাজিল গুলি ও বোমার ঘটনা ফাঁস

অল্পের জন্য ব্রাজিলে গোলাগুলি হলো না। বোমা পাতা হয়েছিল কিনা তা এখনও অনুদঘাটিত। তবে রক্ত ঝরেনি। ফুটবল রক্তাক্ত হয়নি। সভ্যতা লজ্জিত হয়নি।  তিন শ’ কোটি মানুষ, যারা ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচটি উপভোগ করছিলেন সারা বিশ্ব জুড়ে তারা আতঙ্কিত, চিন্তিত হতে পারতেন।
কিন্তু কিছুই ঘটলো না। এতবড় উত্তেজনা কাকপক্ষী টের পেলো না। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচকে কেন্দ্র করে দু’টি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে সাও পাওলোর শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা ফোলহা দ্য এস. পাওলো। একটি বোমা পাতার ষড়যন্ত্র। অন্যটি সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গুলি করার পরিকল্পনা।
জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ১২ই জুনের ম্যাচটি চলছিল। ম্যাচটি উপভোগ করছিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ। তাঁর পাশে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এবং ফিফা প্রেসিডেন্ট সেফ ব্লাটার ও অন্য অতিথিবৃন্দ। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত স্পেশাল ফোর্সের কাছে আগেই ইঙ্গিত ছিল যে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণের আশঙ্কা আছে। সেকারণে নিরাপত্তাকর্মীদের একটি চৌকস দল মঞ্চ ঘিরে একটি বিশেষ নিরাপত্তা ব্যূহ তৈরি করে। হঠাৎ একজন স্নাইপার (গুপ্তঘাতক) ‘সন্দেহভাজন’ অস্ত্রধারী ব্যক্তির গতিবিধি লক্ষ্য করেন। তিনি দেখেন যে পুলিশের পোশাক পরা রহস্যজনক অস্ত্রধারী প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসফের  কাছাকাছি  অগ্রসর হচ্ছেন।

গত ২৮শে জুন ফোলহা যখন প্রথম খবরটি প্রকাশ করে তখন তারা বলেছিল গুপ্তঘাতক ওই অস্ত্রধারীকে গুলি করে হত্যা করার অনুমতি চেয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু দ্রুতই এই রুদ্ধশ্বাস নিরাপত্তা নাটকের অবসান ঘটে যখন জানা যায় যে, ওই অস্ত্রধারী ব্যক্তি একজন পদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তাঁর টিমের কাছে খবর ছিল যে দিলমা রুসেফের কাছাকাছি বোমা পোঁতা হয়েছে। তাই তিনি কড়া নজরদারি চালাচ্ছিলেন। তবে এটা নিয়ে অঘটন না ঘটলেও বিষয়টিকে নিরাপত্তাগত ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ফোলহার প্রতিবেদনমতে, এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে পুলিশ বিভাগ ও সাও পাওলো স্টেট পুলিশের মধ্যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কারণ তারা ঘটনাস্থলে গুপ্তঘাতকের উপস্থিতি নিয়ে দু’ধরনের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। পুলিশ বিভাগের স্পেশাল রেসকিউ টিমের স্নাইপার সদস্য বলছেন, তিনি সন্দেহ করেছেন যে, ট্যাকটিকাল অ্যাকশন টিমের (গ্যাট) ইউনিফর্ম পরা অফিসারকে তিনি সন্দেহ করেন। কারণ, ওই সময়ে সেখানে থাকার জন্য তিনি অনুমোদিত ছিলেন না। গুপ্তঘাতক রেডিওতে তাঁর উপর মহলকে জানিয়েছিল যে, একজন সন্দেহভাজন অস্ত্রধারীকে মঞ্চের খুব কাছে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে। স্টেডিয়ামের কমান্ড সেন্টারে এই খবর পৌঁছানোর পর তারা নিশ্চিত করে যে, এই সময়ে গ্যাটের কোন কর্মকর্তার সেখানে থাকার কথা নয়। আসলে গ্যাটের কেউ নেই। তখন সন্দেহ গভীর হয় যে, লোকটি আসলে অফিসারের উর্দি পরা হলেও প্রকৃতপক্ষে একজন ক্রিমিনাল। তখনই তাকে গুলি করার পরিকল্পনা করা হয়। উপর মহলের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। অনুমতি আসতে বিলম্ব ঘটছিল। কারণ হুকুমদাতারা শলাপরামর্শ করছিলেন যে, এখন গুলি চালানোর পরিণতি কি হতে পারে। ম্যাচ ভ-ুল না হলেও বিশাল একটি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘ মহসচিবের উপস্থিতিতে গুলি বর্ষণ এবং একজনকে হত্যার ঘটনা ঘটালে ব্রাজিল আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় নেতিবাচক শিরোনাম হবে। আবার একই সঙ্গে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয় ছিল।

গুলি চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা না করা নিয়ে স্টেডিয়ামের কমান্ড  কন্ট্রোল, যেখানে ওই দুই পুলিশ বাহিনী ছাড়াও সেনাবাহিনীর অফিসাররা ছিলেন, যারা উদ্বোধনী ম্যাচের অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন তারা ঘামছিলেন। সময় যতই গড়াচ্ছিল, ততোই তারা দিশাহারা হচ্ছিলেন, তবে অল্পকালের মধ্যেই টিভি মনিটরের ইমেজ বিশ্লেষণে একজন পুলিশ কর্মকর্তা এগিয়ে আসেন। তাঁর নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে তিনি শনাক্ত করেন যে, সন্দেহভাজন অস্ত্রধারী আসলে আর কেউ নন, একজন গ্যাট অফিসার। তবে এই অফিসারটিকে সেদিন খুব সমম্ভবত ঘটনাস্থল ত্যাগ না করতে বলা হয়েছিল।
ফোলহার এই রিপোর্ট প্রকাশের পর মিডিয়ায় এটা ঝড় উঠেছে। দু’দিন আগে ফক্স স্পোর্টসকে এক ই-মেইলে সাও পাওলো কর্তৃপক্ষ বলেন, কখনওই গুপ্তচর ওই অফিসারকে গুলি করার অনুমতি চাননি। ফক্স স্পোর্টস বলেছে, এটা তাদের আগের অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।              
এদিকে পাবলিক সিকিউরটি সেক্রেটারি ফার্নান্দো গ্রেলা ভিয়েলা উভয় পুলিশ প্রধানের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছেন। সত্যিই কি ঘটেছিল, তার বিবরণ এখনও অপ্রকাশিত। চারদিকে আলোড়নের মধ্যে পুলিশ বিভাগ স্বীকার করেছে, সেদিন যেটা ঘটেছে সেটা একটি নিরাপত্তা ব্যর্থতা তবে গুরুতর কিছু নয়। যোগোযোগ সংক্রান্ত একটি ব্যবধান তৈরি হয়েছিল। তবে বড় ধরনের কিছু ঘটার আগেই সেটা সামলানো সম্ভব হয়েছে।
ফোলহা লিখেছে, একটি বোমা পোঁতার হুমকি ওই সময়ে সেখানে ছিল কিনা, গ্যাটের ওই অফিসারের ওই সময়ে সেখানে উপস্থিতি স্বাভাবিক ছিল কিনা তার কোন ব্যাখ্যা এখনও দেয়া হয়নি। এমনকি কোন বিষয়ে তদন্ত এখনও চলমান কিনা সে বিষয়ে তারা নীরব রয়েছে। ফোলহা সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু তার কোন জবাব আসেনি। এটাও পরিষ্কার যে, ওই সময়ে ওই গ্যাট কর্মকর্তার সেখানে থাকার জন্য অনুমোদিত ছিলেন না। বোমার সন্ধানে তিনি সেখানে ছিলেন, এই দাবি করা হলেও কারা কিভাবে বোমা হামলার খবর দিল, তা-ও রয়ে গেছে অপ্রকাশিত। 

No comments

Powered by Blogger.